E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ময়নাতদন্ত ছাড়াই গোপালগঞ্জে গুলিতে নিহত চারজনের দাফন সম্পন্ন

২০২৫ জুলাই ১৭ ১৮:৫৬:১৭
ময়নাতদন্ত ছাড়াই গোপালগঞ্জে গুলিতে নিহত চারজনের দাফন সম্পন্ন

রিয়াজুল রিয়াজ, গোপালগঞ্জ থেকে ফিরে : সেনাবাহিনী ও পুলিশ পাহাড়ায় গোপালগঞ্জে নিহত চারজনের দাফন ও সৎকার সম্পন্ন করেছেন নিহতের স্বজনেরা। তবে, তাদের কারও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়নি। ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহগুলোর দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ও সেনাবাহিনী-পুলিশের উপস্থিতিতে নিহতের দাফন সম্পন্ন করা হয়।

নিহতদের মধ্যে পোশাক ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহাকে বুধবার (১৬ জুলাই) রাতে পৌর শ্মশানে সৎকার করা হয়। ওই রাতেই টাইলস মিস্ত্রির সহকারীর কাজ করা রমজান কাজীকে এশার নামাজের পর দাফন করা হয়।

এছাড়া, আজ বৃহস্পতিবার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সোহেল রানা ও ক্রোকারিজ দোকানের কর্মচারী ইমন তালুকদারকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা-সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় বুধবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। সংঘর্ষে নিহত হন চারজন। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ সহ আহতের সংখ্যা শতাধিক।

এর আগে, সারা দেশে ৬৪ জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি'র চলমান পদযাত্রার অংশ হিসেবে দলটির পুর্ব নির্ধারিত গোপালগঞ্জ জেলা সমাবেশ ছিলো বুধবার (১৬ জুলাই)। কিন্তু গোপালগঞ্জ আশার আগে দলটি হঠাৎ 'মার্চ টু গোপালগঞ্জ' নাম দিলে এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গোপালগঞ্জে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও জনমনে সংশয় কাজ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর মাজার ভাঙা ও গোপালগঞ্জে এসে মুজিববাদের কবর রচনা করার কথার মতো নানামুখী হুমকিও। দেশ বিদেশি বিভিন্ন মহল থেকে এ সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্ট ও ভীতিকর পোস্ট দেওয়া হয় উভয় মহল থেকে। এতে গোপালগঞ্জবাসী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ভীতু সন্তুষ্ট হয়ে শেখ মুজিবের মাজার ও গোপালগঞ্জ রক্ষায় এনসিপিকে প্রতিরোধ করার প্রস্তুতি নিতে থাকেন বলে জানা যায়। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানো সহ নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতিও নেয় স্থানীয় প্রশাসন। এরপরও বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকে স্থানীয় জনতা, আওয়ামী লীগ ও এর কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে 'জয় বাংলা' স্লোগান দিতে থাকে। এসময় তা প্রতিরোধে স্থানীদের সাথে প্রশাসণের ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এ সময় কয়েকটি রাস্তা আটকে অবরোধ করাসহ একাধিক যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা।

এ সময় হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়, যার এক পর্যায়ে এনসিপি দলের সমাবেশস্থল ভাঙচুর ও সমাবেশটি পন্ড করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এরপর প্রায় সারাদিন চলে বিক্ষোভ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইট পাটকেল নিক্ষেপ, গুলি, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ। এক সময় দফায় দফায় গুলির শব্দ শোনা যায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও গুলি ছুড়তে দেখা যায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে এনসিপির সদস্যরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে সেনাবাহিনী সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিরাপদে গোপালগঞ্জ থেকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেন।

ওই সংঘর্ষে নিহতরা হলেন– গোপালগঞ্জ শহরের কোটালীপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (১৯), শানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫), উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (৩০) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন তালুকদার (২৪)। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে পরিবার অভিযোগ করেছে। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, নিহতদের শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, চারজনের মৃতদেহ হাসপাতালে এসেছে। এ ছাড়া গুরুতর আহত তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ সুমন বিশ্বাস নামে এক যুবক সেখানে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর পেটে ও আঙুলে গুলি লেগেছে। তিনি এখনও আশংকামুক্ত নন বলে জানা।আহত সুমন বিশ্বাস পেশায় একজন গাড়িচালক ও অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান বলে জানিয়েন এলাকাবাসী।

(আরআর/এসপি/জুলাই ১৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test