E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

গোপালগঞ্জে করাফিউ এর শহরে সারা দিন

২০২৫ জুলাই ১৮ ০০:৩৫:৪২
গোপালগঞ্জে করাফিউ এর শহরে সারা দিন

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে বুধবার দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে চারজন নিহত, অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। করাফিউর মধ্যে যৌথ বাহিনী ২৪  জনকে আটক করেছে পুলিশ। এখনো মামলা হয়নি।

অন্যদিকে শুক্রবার বেলা ১১ পর্যন্ত কারফিউ বাড়ানো হয়েছে। ১১ থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ৩ ঘন্টা কারফিউ সিথিল থাকবে। তারপর কারফিউ বলবদ থাকবে। পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে অাজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যারয়ে জেলা সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এ তথ্য জানান।

গোপালগঞ্জে আজ সরাদিন করাফিউ ছিল। সকাল থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সীমিত আকারে রিক্সা ইজিবাইক চলতে দেখা যায়। দোকারপাট বন্ধ ছিল। তরে জরুরী সেবা সমূহ সচল রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হননি। সাড়ে ১০ টার দিকে শহরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে পুলিশ ও এপিবিএন মোতয়েন করা হয়। সারাদিন সেনা সদস্যরা সাজেয়া জান নিয়ে শহরের টহল দিয়েছে। শহরের ব্যস্ততম এলাকায় তেমন কোন কোলাহল ছিল না। মানুষের মধ্যে চাপা আতংক বিরাজ করছিলো।

কারফিউর মধ্যে গোপালগঞ্জে যৌথ বাহিনী অভিযান চারিয়ে ২৪ জনকে আটক করেছে। এরমধ্যে ১৪ জনকে গত রাতে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার সারাদিনে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১০ জন আটক হন। গোপালগঞ্জে সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান ২৪ জনকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলেন, বুধবারের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।

আটক অভিযান শুরু পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। গ্রেফতার এড়াতে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা চলে যান আত্মগোপনে। আটক নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও অজানা আতংক দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোপালগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের এক নেতা (সালাহউদ্দিন) বলেন, নির্বিচারে আওয়ামী লীগ ও সহযোগি নেতাদের গ্রেফতার করছে। বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া নেতা কর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। এ কারণে আমরা আত্মগোপনে রয়েছি।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সভাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিদর্শন করেছেন কারা অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল তানভীর হোসেন ।
তিনি বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১ টায় গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে এসে পৌঁছান।

কারা কর্তৃপক্ষের পদস্থ কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাকে সেখানে অভিবাদন জানান। পরে তিনি তাদের সাথে কথা বলেন এবং খোঁজখবর নেন।

অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল তানভীর কথা বলেন গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কারাগারে হামলার ঘটনা টাইটেল দিতে পেরেছি। এজন্য আমি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। কারাগারে ফের হামলার কোন আশঙ্কা নেই উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, কোন থ্রেট নেই। তারপরেও সেনাবাহিনী, বিজিবি ও কারারক্ষীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

পরে তিনি গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রবেশ করেন। এ সময় এআইজি প্রিজন দেওয়ান তারিকুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার তানিয়া জামানসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বুধবার এনসিপির পদযাত্রা ও সভাকে কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিকেলে হামলা করা হয় গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে। সেখানে ভাঙচুর করে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে।

সেনাবাহিনী, বিজিবি ও কারারক্ষীরা সারা রাত জেলা কারাগারের সামনে সতর্ক অবস্থানে ছিল।

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। এর প্রধান করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গণিকে।

কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, জনপ্রশাসন এবং আইন মন্ত্রণালয়ের দুজন অতিরিক্ত সচিব।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সহিংসতা বা প্রাণহানির ঘটনায় জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গোপালগঞ্জের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা ও পর্যালোচনার পর কারফিউ বাড়ানোর সিদ্ধান্তর কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফে এককথা জানিয়ে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।

এর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেন তিনি।

শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, গতকালকে এনসিপি'র পথসভাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রেক্ষিতে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকালই কারফিউ জারি করা হয়েছে। যা এখনো রয়েছে। আমরা বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে গোপালগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। যে পরিস্থিতি উদ্ভব হয়েছিল, তা এখন সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এবং সার্বিকভাবে যাতে আর পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে এজন্য যে কারফিউ ছিল তা কন্টিনিউ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং আগামীকাল দুপুর এগারোটা পর্যন্ত এই কারফিউ বারানো হয়েছে। এরপর তিন ঘন্টা বিরতি দিয়ে দুপুর ২ টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ পুনরায় চলবে। আগামীকাল (শুক্রবার) পর্যালোচনা করে যদি পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ্য করা যায় তখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।'

' বুধবার চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য প্রায় ৪০-৫০ জন আহত আছেন। গতকাল পর্যন্ত ২৪ জন দুষ্কৃতিকারীকে আটক করা হয়েছে। দুষ্কৃতিকারীদের ধরতে আমাদের পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

গোপালগঞ্জের মানুষ খুবই শান্তিপ্রিয় এবং আইন-শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যার প্রমাণ তারা অতীতেও রেখেছেন, আমরা তাদের কাছে সেই প্রত্যাশা এখনো রাখি। আমরা সাধারণ মানুষকে বলতে চাই তাদের আতঙ্কিত বা ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। যারা দুষ্কৃতিকারী আছেন আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং যাদেরকে চিহ্নিত করতে পারব তাদেরকে গ্রেপ্তারের আওতায় আনা হবে। এই অফিসার অব্যাহত থাকবে। থেকে সম্পূর্ণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে আছে।

'আমরা মনে করছি যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যে অবস্থা আছে, আমাদের কাছে যে ইনফরমেশন আছে কিছু দুষ্ঠিতকারী বাহির থেকেও এসেছিল, তারা এখনো গোপালগঞ্জে অবস্থান করছেন- এই মর্মে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে। আমরা তাদেরকে আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করছি এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মনে হবে না যে, পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জন্য সুখকর হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এটা অব্যাহত রাখব।'

এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, এখন পর্যন্ত ২৪ জনের অধিক গ্রেপ্তার হয়েছে। যারা দুষ্কৃতিকারী রয়েছেন, যারা বুধবারের এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার পেছনে জড়িত তাদেরকে আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় আনব এবং সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

নিহত চারজনের ময়নাতদন্ত না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, বিষয়টি আমরা আইনী প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসবো।

এ ঘটনায় পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স আগে থেকেই ছিল এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে আরো অধিক সংখ্যক ফোর্স নিয়ে আসা হয়েছে। তবে কি পরিমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বর্তমানে গোপালগঞ্জে কাজ করছেন এ বিষয়ে কোন সংখ্যা উল্লেখ করেননি তিনি।

এ হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান বিভাগীয় কমিশনার।

বাইরে থেকে যারা আসছে তাদের সবাইকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তবে বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট আছে বাইরে থেকে কিছু লোকজন এসেছে।

এ সময় অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ আব্দুল মাবুদ, গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস এম তারেক সুলতান।

(টিবি/এএস/জুলাই ১৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test