E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

জুলাই আন্দোলনে একই সময়ে এক ব্যক্তির ৩ স্থানে মৃত্যুবরণ

তিন থানায় পৃথক মামলা, মামলা বাণিজ্যে নিহতের বাবা কোটিপতি

২০২৫ জুলাই ১৯ ১৮:৫৬:৪১
তিন থানায় পৃথক মামলা, মামলা বাণিজ্যে নিহতের বাবা কোটিপতি

শেখ এনামূল হক বিদ্যুৎ, নারায়ণগঞ্জ : গত বছর জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একই সময় একই ব্যক্তি ৩ স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনবার মৃত্যু হয়েছে দাবী করে তিন থানায় পৃথকভাবে তিনটি মামলা করেছেন নিহতের পরিবার ও সজন। একই ঘটনায় নিহতের মামা এবং নিহতের বাবা বাদী হয়ে দায়ের করেছেন তিনটি পৃথক মামলা—একটি ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানা, একটি ফতুল্লা ও অন্যটি সোনারগাঁ থানায়। ঘটনাস্থল ও সময় তিন মামলাতেই এক হলেও অবস্থান তিন থানায়, যা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন ও বিতর্ক। 

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে মাদরাসা ছাত্র মো. ইব্রাহিম (১৩) হত্যা ঘটনায় তিন থানায় পৃথক পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা-মাকে মৃত দেখিয়ে নিহতের মামা পরিচয়ে সাইফুল নামের একব্যক্তি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় ১ম হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর কিছুদিন পর একই ঘটনায় নিহতের বাবা মো. হানিফ বাদী হয়ে ঘটনাস্থল কাঁচপুর দেখিয়ে সোনারগাঁ থানায় দ্বিতীয় হত্যা মামলা দায়ের করেন। জুলাই মাসের ১১ তারিখে একই ঘটনায় মো. হানিফ মিয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কস্থ শনির আখড়া ব্রীজের পশ্চিমপাশে ঘটনাস্থল দেখিয়ে, ২০৯ জনকে এজাহার নামীয় আসামী ও ২০০০ থেকে ৩০০০ জনকে অজ্ঞাত করে আবারও যাত্রাবাড়ি থানায় হত্যা মামলা করেন। একই ব্যক্তি তিন থানায় তিনবার হত্যার শিকার হয়েছে এমন ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত ইব্রাহিমের বাবা হানিফ মিয়া ও মা সখিনা বিবিকে মৃত দেখিয়ে তার মামা পরিচয়ে মো.সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি গত ২২ আগস্ট ফতুল্লা থানায় প্রথম হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির জেলা প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন রবিন, আইনজীবী কামাল হোসেন সহ ৬১ জনকে এজহারনামীয় নামীয় আসামি করা হয়। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ১৫০-১৬০ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে কোটা বিরোধী দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডের পাসপোর্ট অফিসের বিপরীত পাশে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সমবেত হলে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র সহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারি গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ করে। এ সময় বাদী ও তার ভাগিনা মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৩) একটি দোকানের আড়ালে আশ্রয় নেয়। হঠাৎ তার ভাগিনা ইব্রাহিমের মাথায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন ২০ জুলাই মাগরিবের নামাজের পূর্বে মাতুআইল কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

অন্যদিকে নিহতের মাদরাসা ছাত্রের বাবা মো. হানিফের সোনারগাঁ থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পন্ড করার জন্য সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রীজের পূর্ব ঢাল হতে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী হামলা চালিয়ে এলোপাথারি গুলি ছুড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩ টায় ইব্রাহিমের বাম চোখের ভেতরে ঢুকে মাথায় পেছনের অংশ দিয়ে গুলি বের হয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। গত ১১ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় আবারো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ সহ ২০৯ জন এজাহার নামীয় আসামী ও অজ্ঞাত আরো ২০০০ থেকে ৩০০০ জনকে মামলার আসামি করা হয়েছে।

ফতুল্লা ও সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা দুই মামলার আসামিরা জানান, কোর্টে দাড়িয়ে এফিটডেভিড এর মাধ্যমে ২৩৫ আসামীর মধ্যে প্রায় দেড়শত আসামীর নাম কর্তন করতে জন প্রতি পঞ্চাশ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ পর্যন্ত টাকা নিয়েছে মৃত ইব্রাহীম এর বাবা বাদী মো.হানিফ।

ফতুল্লা থানার মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের কথিত মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহত ইব্রাহিম আমার বাড়ির পাশে কাজ করতো ও মাদ্রসায় পড়াশোনা করতো। সে আমার আপন ভাগিনা না। তার হত্যার ঘটনার পর রাজনীতিক মামলা হয়েছে। যারা আন্দোলন করেছে তারাই মামলার সবকিছু করেছে, আমি শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। আসামিদের কাউকে আমি চিনি না।

এদিকে একই ঘটনায় নিহত মো. ইব্রাহিম (১৩) এর বাবা মো.হানিফ (৬৫) বাদী হয়ে গত ২৪ আগস্ট সোনারগাঁ থানায়, ১১জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় আরেকটি হত্যা মামলার বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায়ও মামলা হয়েছে। এক ঘটনায় তিন থানায় মামলা হতে পারেনা। এ কারণে উর্ধ্বতনদের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে যাত্রাবাড়ী থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

(এসএবি/এসপি/জুলাই ১৯, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test