টাঙ্গাইলে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক

সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : দেশের তিনটি প্রধান ভূমিকম্প বলয়ের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ফল্ট হচ্ছে টাঙ্গাইলের ‘মধুপুর ফল্ট’। এটি অসংখ্য প্লেটে বিভক্ত। এ ফল্ট থেকে যদি ভূমিকম্প হয় তবে সেটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ভূমিকম্প আশঙ্কার মধ্যেই অপরিকল্পিতভাবে টাঙ্গাইলে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। এতে ঝুঁকি বাড়ছে টাঙ্গাইল শহরের।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ১২, ১৪ থেকে ১৮ তলা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। ইতোমধ্যে অনেক বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে। এসব বহুতল ভবন একাধিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের যৌথ মালিকানায় গড়ে উঠছে। এসব ভবন নির্মাণে পৌরসভার অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। ভবনের ভার বহনের ক্ষমতা যাচাইসহ এর স্থাপত্য, কাঠামোগত, বৈদ্যুতিক, মেকানিক্যাল, প্লাম্বিং, অগ্নিনিরাপত্তার নকশা অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ ভবনের নকশার অনুমোদন নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। বেশির ভাগ ভবন গা ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে।
পৌরসভার একাধিক সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত উচ্চ ভবনের প্ল্যান পাস হয়েছে মাত্র ৩০টি। আবেদন জমা পড়েছে ৫৫০টি। তবে অসংখ্য ভবন নির্মাণ কাজ চলছে বলেও এসব সূত্র নিশ্চিত করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মধুপুর ফল্ট যে কোনো সময় ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে। ঢাকা থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর অঞ্চলে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা রয়েছে। ফলে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঢাকাসহ আশপাশের অনেক জেলা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এরমধ্যে কিছু ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল টাঙ্গাইলের মধুপুরে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে টাঙ্গাইলে ৪.২ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল এ মধুপুর। উপজেলার গড় এলাকার বোকারবাইদ গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বক্রাকারে তিন থেকে চার ইঞ্চি ব্যাসার্ধের প্রায় আধা মাইল দীর্ঘ এ ভূ-ফাটল দেখা দিয়েছিল। এ ফাটলের গভীরতা ছিল ১৫ থেকে ২০ ফিট। এর আগে সর্বপ্রথম মধুপুর ফল্টে ১৮৮৫ সালে ৭ মাত্রার ওপরে ভূমিকম্প হয়েছিল।
২০১০ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়, মধুপুর ফল্টে রিখটার স্কেলে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৭২ হাজার ৩১৬টি পাকা ভবন ধসে যেতে পারে এবং আংশিক ক্ষতি হতে পারে ৫৬ হাজার ১৬৬টি ভবনের।
২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে পরিচালিত আরেক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশ সীমান্তে টেকটোনিক প্লেটের সীমানায় ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের দুই লাখ ৩৮ হাজার ১৬৪টি ভবন ধসে পড়তে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, শহরের বেশির ভাগ ভবনের কোনো অনুমোদন নেই। যথাযথ প্রক্রিয়ায় ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে যেগুলো নির্মাণ হচ্ছে সেগুলোও বেশিরভাগ নিয়ম না মেনেই করা হচ্ছে। এছাড়াও অনেক অলিতে গলিতেও বহুতল ভবন তৈরি করা হয়েছে। এতে যদি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় তাহলে বহু হতাহত আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও এসব স্থানে পৌঁছাতে পারবে না। আবার ফায়ার সার্ভিসের তেমন সক্ষমতাও নেই।
আদি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিম বাদ দিয়ে, পর্যাপ্ত ওয়ালও ব্যবহার না করে ফ্ল্যাট-স্ল্যাবের বিল্ডিং ডিজাইন করা বিপজ্জনক। আমাদের দেশে পর্যাপ্ত সাইসমিক ডিটেইলিং ছাড়া বিল্ডিং অহরহ হচ্ছে। বিশেষ করে যে সব বিল্ডিং কোন রেজিস্টার্ড স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার এর ডিজাইন ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে। অনেক বিল্ডিং মালিক হয়ত মিস্ত্রি বা অন্য কারো প্ররোচনায় ডিজাইনের খরচ বাঁচাতে বিল্ডিং করে ফেলছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে অধিক ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বিল্ডিং নির্মাণে স্পেশাল মোমেন্ট ফ্রেম ব্যবহার করা হয়। সেখানে ফ্ল্যাট-স্ল্যাবকে ল্যাটারাল লোড রেস্টিং সিস্টেমের অংশ হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
টাঙ্গাইল পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এক বছরে পৌরসভায় প্রায় ২০টি বহুতল ভবন অনুমোদনের আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলোর এখনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আগে যে কয়টি আবেদন জমা পড়েছিল সেগুলো আগের মেয়র অনুমোদন দিয়ে গেছেন। অনুমোদন না নিয়ে যে কয়টি ভবনের কাজ চলছে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন,‘ পৌরসভার সর্বোচ্চ ১০ তলা ভবন অনুমোদন দেওয়ার বিধান রয়েছে। এর বেশি তলার ভবনের অনুমোদনের ক্ষমতা আমাদের নেই। এজন্য বহুতল ভবনের আবেদন জমা রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে কোনো সিদ্ধান্ত আসলে সেটার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আগের মেয়র কিছু ভবনের অনুমোদন দিয়েছে।’
এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘ভূমিকম্পের ভয়াবহতা বিবেচনায় মধুপুর ফল্ট এলাকায় বসতি স্থাপনায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। এসব অঞ্চলে স্বল্প উচ্চতার ভবন নির্মাণ করে বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ পরিহার করা উচিত। ভবনের নকশায় পরিবর্তন ও শক সহনশীল নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ভূঞা বলেন, ‘শহরের বেশির ভাগ বহুতল ভবন যথাযথভাবে নির্মাণ করা হয়নি। আমাদের অনুমোদন ছাড়াই অনেক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেফটি প্ল্যানও ঠিক মত করা হয়নি। ইতোমধ্যে যেগুলো করা হয়েছে প্ল্যানের মধ্যে দুটি সিঁড়ি উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে অনেক ভবন একটি সিঁড়ি দিয়ে নির্মাণ কাজ করেছে।’
যে সব অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণ হচ্ছে তাদের কাজ বন্ধ রাখার জন্য একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কাজ বন্ধ না রাখলে যেগুলো ভাঙার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বড় ধরনের ভূমিকম্প ও দুর্ঘটনা ঘটলে এসব বহুতল ভবনে অনেক হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। রাস্তা সরু থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরাও পৌঁছাতে পারবে না।’
টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রশাসক শিহাব রায়হান বলেন, ‘যে সব অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণ হচ্ছে তাদের কাজ বন্ধ রাখার জন্য একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কাজ বন্ধ না রাখলে যেগুলো ভাঙার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভু রাম পাল বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর কোনো বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বর্তমানে সেগুলো নির্মাণ হচ্ছে সেগুলোর ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনেক আবেদনও জমা পড়েছে। যারা বিধি মোতাবেক করা করছেন না তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
(এসএম/এসপি/জুলাই ২০, ২০২৫)
পাঠকের মতামত:
- ‘শুল্ক কমানোর সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ’
- বৃহস্পতিবার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা
- ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জরুরি সংস্কার চায় বিএনপি’
- ‘জুলাই সনদের খসড়া বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক’
- ‘সরকার অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছে’
- লংগদুতে সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত
- সাতক্ষীরা সদরের ডিবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু
- সাতক্ষীরায় শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি সভা অনুষ্ঠিত
- ফরিদপুরে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার, ইয়াবা উদ্ধার
- সিলেটে ডঃ আবদুল মজিদের সভাপতিত্বে স্বাধীনতা বিরোধীদের সভা অনুষ্ঠিত হয়
- কুড়িগ্রামে জুলাই সংগঠক জোবায়ের হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
- এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের কঠিন প্রতিপক্ষ
- নতুন ভোটার হচ্ছেন ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার
- আগস্টের শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা
- শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট, র্যাংকিংয়ে টানা উন্নতি
- বোয়ালমারীতে কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- পাংশায় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
- সালথায় ৬০টি চায়না দুয়ারী জাল জব্দ, এক জেলের জরিমানা
- শ্রীমঙ্গলে জমি দখলকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ
- ‘ভাসানী না হলে শেখ মুজিব তৈরি হতো না’
- ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কা, সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত
- সুবিধা বঞ্চিত প্রকৃত ভুক্তভোগীরা, ধরা ছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠনগুলি
- আদমদীঘি উপজেলা পরিদর্শনে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার
- ঠাকুরগাঁওয়ে বিজিবির গুলিতে ৩ জন নিহতের ঘটনায় সাড়ে ৬ বছর পর মামলা
- ফুলপুরে নাগরিক ভাবনা শীর্ষক মতবিনিময় সভা
- শীত আসতেই মুখ-হাত-পায়ে চামড়া উঠছে, কী করবেন?
- বেলকুচিতে জনমত জরিপে এগিয়ে বদিউজ্জামানের মোটরসাইকেল
- কমলনগরে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আটক
- হিমেল হাওয়ায় কাবু কুড়িগ্রামের মানুষ
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- মা
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- মহুয়া বনে
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
৩০ জুলাই ২০২৫
- লংগদুতে সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত
- সাতক্ষীরা সদরের ডিবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু
- সাতক্ষীরায় শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি সভা অনুষ্ঠিত
- ফরিদপুরে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার, ইয়াবা উদ্ধার