E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

শ্রীমঙ্গলে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিশে দিনমজুর বৃদ্ধকে মারধরের অভিযোগ

২০২৫ জুলাই ২২ ১৮:১৬:৩৫
শ্রীমঙ্গলে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিশে দিনমজুর বৃদ্ধকে মারধরের অভিযোগ

আল-আমিন মিয়া, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের মাধবপাশা গ্রামে ছেলের অপরাধের কারনে দিনমজুর এক বৃদ্ধকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তীর আনোয়ার হোসেন মিনু নামের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। 

মিনু ভুনবীর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা বলে জানা গেছে। শুধু মারধর নয়, ওই বৃদ্ধকে বাড়ি থেকে বিতারিত করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল এমন অভিযোগ ওই বৃদ্ধের।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিনে ভুনবীর ইউনিয়নের মাধবপাশা গ্রামে গেলে ওই গ্রামে বয়োবৃদ্ধ দিনমজুর ইট ভাঙ্গার শ্রমিক শাহাব উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমার ২ ছেলে ১ মেয়ে। মেয়ে জোৎনা বেগমকে বিয়ে দিয়েছি। এক ছেলে শাহিন মিয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী। অপর ছেলে সাইফুল মিয়া মাদকসেবী ও নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হিসেবে আমি তাকে স্থানীয়দের সহায়তায় কয়েক দিন আগে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। এখন সে কোথায় আছে জানি না। এরই মধ্যে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় আমার পাশের বাড়িতে হঠাৎ গ্রাম্য সালিশে বসিয়ে আমাকে ডেকে পাঠানো হয়। শালিসে আমার বাড়ি থেকে বের করে দেয়া ছেলের অপরাধে আমাকে বেদম মারধর করেন ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মিনু। আমার স্ত্রী, নাতিসহ আত্মীয়রা বাধা দিতে গেলে তাদেরও হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। সালিশে ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলী, ব্যবসায়ী কামাল পারভেজসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। শালিসে আমাকে বেদম মারধরের পর এখন আমার পরিবারকে এলাকা থেকে চলে যেতে হুমকি দিচ্ছেন আনোয়ার হোসেন মিনু, রাসেলসহ অন্যান্যরা। তারা আমার বাড়ি দখলে নিতে চান। আমি এখন আমার শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি বিচার চাই।

সালিশে উপস্থিত এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা অন্যায়ের পক্ষে নই। বৃদ্ধ শাহাব উদ্দিনের ছেলে নেশাগ্রস্থ ও চোর। তাকে তার বাবাও বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। তার অপরাধে বৃদ্ধ লোকের গায়ে হাত দেয়া সমর্থনযোগ্য নয়। বিচারে ডেকে এনে ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মিনু বৃদ্ধ শাহাব উদ্দিনকে মারতে মারতে নিচে ফেলেও মেরেছে। ওই বিচারে ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ আলী, স্থানীয় পঞ্চায়েতরা ছিলেন। ছেলে অপরাধী হিসেবে তাকে বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। তারপর তার বাবাকে এভাবে মারধর উচিত হয়নি।’

স্থানীয় আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বৃদ্ধ শাহাব উদ্দিনের ছেলে চুরি করে, নেশা খায়। ফলে শাহাব উদ্দিন অপরাধী ছেলেকে বাড়িছাড়া করেছেন। সে এখন এলাকায় নেই। গত শুক্রবার সালিশে বৃদ্ধ শাহাব উদ্দিনকে মারধর করেন আনোয়ার হোসেন মিনু।’

এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেন মিনু বলেন, ‘আমার জীবনে আমি কোন দল বা পার্টির সাথে জড়িত নই। যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে মিথ্যে প্রচার করা হচ্ছে। আমি যুবলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত নই। আমি ব্যবসায়ী মানুষ। ব্যবসা করে খাই। শাহাব উদ্দিন মিয়ার ছেলে এলাকার কুখ্যাত চুর ও মাদকসবেী। তার জ্বালায় পুরো এলাকা অতিষ্ট হয়ে সালিশ বসায়। সেখানে শাহাব উদ্দিন মিয়াকে কেউ মারধর করেনি।’

ভুনবীর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শাহাব উদ্দিনের ছেলে সাইফুল চিহ্নিত চোর ও ইয়াবাসেবী। সে চুরির কারনে গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে। তার বাড়ি থেকে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার চোরাই মালামাল উদ্ধার করে পুলিশ। ধারাবাহিক সে চুরির সাথে জড়িত। এ ধরনের একজন চুর নিয়ে আমাদের এলাকা কলংকিত। শুক্রবার যে সালিশ বসানো হয় তাতে স্থানীয় পঞ্চায়েত সবাই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শাহাব উদ্দিন ছেলের পক্ষ নিয়ে উত্তেজিত ভাষায় কথা বললে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন মিনু। ওই সালিশে কোন ধরণের মারধরের ঘটনা ঘটেনি। কেউ যদি মারধরের অভিযোগ এনে থাকে তবে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

(এএ/এসপি/জুলাই ২২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test