E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

‘গোপালগঞ্জের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে’

২০২৫ জুলাই ২২ ১৮:৪৫:১৬
‘গোপালগঞ্জের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে’

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্ট মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।সেটা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন। একজন বিচারপতির নেতৃত্বে এ কমিটি গঠন করা হবে। সেখানে শুধু সরকারি কর্মকর্তারা থাকবেন না, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। এ কমিটি দু’এক দিনের মধ্যে করতে চাচ্ছি। আশাকরি সাংবাদিকরা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে কমিশনকে সহায়তা করবেন। আপনাদের ব্যাখ্যা সহ বিভিন্ন বিষয় তাদের সাথে সেয়ার করবেন। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা জানতে পারব ঘটনার দিন কি হয়েছিল? কেন হয়েছিল? ঘটনা প্রবাহ জানার জন্য প্রধান উপদেষ্টা আমাদের পাঠিয়েছেন। আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে এসেছি। আমরা ঘটনার তদন্ত করতে আসিনি। যাতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সরকার গভীরে যাবে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মত বিনিময় কালে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, এমন একটা পরিস্থিতি হবে এটি স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এর ব্যাপকতা যে এত হবে তা কেউ অনুমান করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সীমিত সম্পদ ও লোকবল দিয়ে সেনাবাহিনী সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সবাই মিলে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। সবাই অনেক কষ্টস্বীকার করেছেন। নানা প্রতিকূলতা ও ঝুঁকি শর্তেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আইন শৃংখলা বাহিনী খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট স্বীকার করেছে। সাংবাদিকরা আহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, এর আগের একটি মত বিনিয়ম সভায় কিছু অশংকার কথা বলা হয়েছে, এখানে আশংকার কিছু নেই। আমরা একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার, একটি দল নিরপেক্ষ সরকার। শহীদদের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত সরকার। ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার আহতদের আত্মত্যাগের সরকার। সুতরাং গোপালগঞ্জও আমাদের কাছে যা, আমাদের নিজেদের জেলাও তাই। প্রধান উপদেষ্টা সেই বর্তাটাই দিয়েছেন। আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করি, যারা অন্যায় করেছে, পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে, আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাদের উপর হামলা করেছে, তারাতো অবশ্যই আইনঅনুযায়ী তাদের শাস্তি পাবে। এছাড়া যেন অন্য কেউ হয়রানীর স্বীকার না হয়। আপনাদের ব্যবসা বাণিজ্য, স্বাভাবিক জীবনযাতে বাধাগ্রস্থ না হয়, সেজন্য আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী সরকার, তাই গণতন্ত্রের চর্চার চেষ্টা করছি। আগে গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। আগে বিরোধী দল-মতকে দমন করা হয়েছে। আয়না ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নানা রকম শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এটির পরিবর্তন হয়েছে। তাই এমন একটা পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে চাই, যেখানে নির্ভয়ে মানুষ তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে। আবার দায়িত্বশীলাতর সাথে মত প্রকাশ করতে হবে। এমন কোন মতামত দেবেন না, যাতে তাদের নিজেদের দল বা মতাদর্শের ক্ষতি করেন। আমরা আশাকরি একটা সহনশীলতার পরিবেশ গড়ে উঠবে। আমাদের সামনে জতীয় নির্বাচন আছে, সেই নির্বাচন আমরা সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করব। যাতে মানুষ নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্র গিয়ে ভোট দিতে পারেন। পোলিং এজেন্টরা সেখানে থাকবেন। প্রকাশে ভোট গননা ও ফল ঘোষনা করা হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সহনসিলতা সহনশীলতা প্রয়োজন। যেই নির্বাচিত হয়ে আসবে, তাদের আমরা সহায়তা করব। নির্বাচন যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে আমাদের সমস্যা আরো বাড়বে। নির্বাচন আমাদের কাছে একটি আগ্নি পরীক্ষা। সবার সহায়তায় আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করব।

গোপালগঞ্জে নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, কোন নিরীহ মানুষকে হয়রানী করা হবে না্। পুলিশ বা কোন দপ্তর থেকে মামলা দিলেই সেটা দূড়ান্ত নয় । এটা আমরা পরীক্ষা নীরিক্ষা করে দেখব। আমরা চেষ্টা করব যাতে কোন নিরীহ মানুষ হয়রানীর শিকার না হয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত দীপ্ত সাহার মরদেহ গত বুধবার গোপালগঞ্জ পৌর শ্মশানে দাহ করা হয়। তার ময়নাতদন্তের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, সুরাতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। এখন প্রযুক্তির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসব অধুনিক প্রযুক্তি থাকতে পারে। সেগুলো ব্যবহার করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পাবে।

এর আগে সকালে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে দফায় দফায় সংঘর্ষে ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন স্থাপনা দুই উপদেষ্টা পরিদর্শন করেন। এদিন সকাল সাড়ে দশটায় সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জেলা কারাগারে আসেন। ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার পরিদর্শন করেন। তারা কারা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন। বিভিন্ন বিষয়ে তারা খোঁজখবর নেন।

এরপর দুই উপদেষ্টা গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কের এনসিপির সভা মঞ্চ, সংঘর্ষের স্থান, জুলাই স্মৃতি স্তম্ভ সহ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখেন।

এ সময় মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লে: জেনারেল (অব:) আব্দুল হাফিজ, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো: মোতাহের হোসেন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, জেলা কারগারের জেলার তানিয়া জামান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম. রকিবুল হাসান সহ দুই মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা সহ আরো অনেক উপস্থিত ছিলেন।

(টিবি/এসপি/জুলাই ২২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test