E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

টাঙ্গাইলে নিজ গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত মাইলস্টোনের নিহত দুই শিক্ষার্থী 

২০২৫ জুলাই ২২ ১৯:১৫:১১
টাঙ্গাইলে নিজ গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত মাইলস্টোনের নিহত দুই শিক্ষার্থী 

সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত টাঙ্গাইলের দুই শিক্ষার্থীর নামাজে জানাজা নিজ নিজ গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শি ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের স্থানীয় মাদরাসায় তানভীর আহমেদের (১৪) এবং সখীপুর উপজেলায় হ‌তেয়া কেরা‌নিপাড়া গাব‌লের বাজার মা‌ঠে হুমাইরার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শে‌ষে তাদের স্থানীয় ও পা‌রিবা‌রিক কবরস্থা‌নে দাফন করা হয়। জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হ‌াজা‌রো মানুষ অংশ নেয়।

এর আগে সোমবার রাতে মরদেহগুলো অ্যাম্বুলেন্সযোগে টাঙ্গাইলের নিজ নিজ বাড়িতে আনা হয়৷ নিহতের মরদেহ নিজ বাড়িতে এলে স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশের বাতাস ভারি হয়ে উঠে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিহতের আত্মীয়- স্বজন ও বাবা-মা বিলাপ করে যাচ্ছেন। প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আশপাশের লোকজন এসে ভিড় করছেন। বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। স্বজনদের কান্নায় চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠে।

নিহতরা হলো, মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শি ইউনিয়নের নগরভাত গ্রামের রুবেল মিয়ার ছেলে তানভীর আহমেদ (১৪)। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

তানভীরের পড়াশোনার সুবাদে পরিবারের সবাই উত্তরায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন। তানভীরের বাবা সেখানেই ব্যবসা করতেন। তার ছোট ভাই তাশরীফও একই স্কুলে পড়তো।

নিহত তানভীরের চাচাতো ভাই খাইরুল হাসান বলেন, সকালে দুই ভাই স্কুলে যায়। তাশরীফের স্কুল ছুটি হওয়ায় বাড়িতে চলে আসে। আর বড় ভাই তানভীর ছুটি না হওয়ায় ক্লাস করতে থাকে। স্কুলে হঠাৎ বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমি তানভীরকে দেখে প্রথমে চিনতে পারি। পরে তাকে ঢাকার বার্ন ইউনিটে নিয়ে যায় উদ্ধারকারীরা। সেখান থেকে রাতে আমরা লাশ বুঝে নিই।

অপরজন সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানিপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে মেহেনাজ আক্তার হুমাইরা (৮)।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সখীপুরের হতেয়া কেরানীপাড়া প্রাইমারি স্কুল মাঠে জানাযা শেষে হতেয়া কেরানীপাড়া সামাজিক গোরস্থানে মেহেনাজ আফরিন হুমাইরাকে দাফন করা হয়। সে ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ও নিহত মেহেনাজ আফরিন হুমাইরার বাবা দেলোয়ার হোসেন কেঁদে কেঁদে বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমার মেয়ে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। সে মেধাবী ছিল। আমার মেয়ে ডালিম পছন্দ করত, এজন্য আমি বাড়িতে ডালিম গাছ রোপণ করেছি- যাতে বাড়ি এসে ডালিম খেতে পারে আমার মা হুমাইরা। এই অল্প বয়সে চোখের সামনে এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে- এমনটা কখনো কল্পনাও করিনি।’

নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলেন, স্কুল এরিয়াতে প্রশিক্ষণ বিমান কেন থাকবে? বিমান বাহিনীর ট্রেনিংগুলো নিরাপদ জায়গায় করার দাবি জানান তারা। এই রকম মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বাংলাদেশ কখনো প্রত্যাশা করেনি। মুহূর্তের মধ্যেই কতগুলো বাচ্চা শেষ হয়ে গেল। আমরা এ ঘটনায় বিচারের দাবি করছি।

টাঙ্গাইলের সখীপুর ও মির্জাপুর উপজেলার দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তিনি বলেন, ‘রাজধানীর উত্তরায় মর্মান্তিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। নিহতদের সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোক প্রকাশ করছি। টাঙ্গাইলের দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত সকলের পরিবারের পাশে বিএনপি আছে এবং থাকবে।’

টাঙ্গাইলের দুই শিক্ষার্থী বিমান বিধ্বস্তে নিহতের ঘটনায় জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবালসহ নেতৃবৃন্দরা গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

(এসএম/এসপি/জুলাই ২২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test