E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মোট ১০টি মামলা, গ্রেফতার ৩১২ 

গোপালগঞ্জে আরো ২ মামলা, আসামি ৯৮৫০

২০২৫ জুলাই ২৩ ১৯:৫৮:৩৫
গোপালগঞ্জে আরো ২ মামলা, আসামি ৯৮৫০

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে দফায়-দফায় সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় নতুন আরো দুইটি মামলা হয়েছে। পুলিশ বদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ও টুঙ্গিপাড়া থানায় মামলা ২টি দায়ের করেছে। এ নিয়ে ৪টি হত্যা মামলা সহ মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো ১০-এ। এসব মামলায় মোট ৯ হাজার ৮৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ৩১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাতে জেলার তানিয়া জামান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্রা ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়াল সহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ৯শ’ থেকে ১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতা কার্মীকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। রাজনৈতিক দাঙ্গা সৃষ্টির করার জন্য জেলা করাগারে এ হামলা করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ্যাড. মুন্সি আতিয়ার রহমান, গোপালগঞ্জ আইনজিবি সমিতির সভাপতি এ্যাড. এম.এম নাসির অহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এম.জুলকদর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাড. এসএম মুনির হিটলার সাবেক জিপি এ্যাড. দেলোয়ার হোসেন সরদার, এ্যাড. মো: রবিউল আলম, এ্যাড. জয়ন্ত কুমার চক্রবর্তী, এম.সাদিত বিপ্লব, এ্যাড. কালমুল্লাহ, এ্যাড. আশিক জামান উপল, এ্যাড. এমএম আবুল কালাম আজাদ, এ্যাড. মো: এনামুল হক ডাবলু, এ্যাড. ইকবাল হোসেন, পৌর আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক আলীমুজ্জামান বিটু, মুকসুদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আশ্রাফুল আলম শিমুল, কাউন্সিলর জোবায়ের রহমান ঝন্টু, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমীর হামজা, কাশিয়ানী সদর ইউপি চেয়ারম্যান খোকন সিকদার, কাশিয়ানী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আমিন ওরফে তুহিন কাজী, ওড়াকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদরুল আলম বিটুল।

মঙ্গলবার রাতে মামলাটি দায়ের করা হলেও গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বুধবার দুপুরে বিষয়টি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।

মামলার বিবরণে জানাগেছে, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ পৌরপার্কে এনসিপির পদযাত্রা সমাবেশ শেষে নেতা কর্মীরা বিকেলে মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাদের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। লাঠিসোটা, ঢালসড়কি বল্লম, লোহার রড, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, ছেনদা, হাতুড়ি, ট্যাটা, চাকু, ছুরি সহ মারাত্মক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে এজাহার নামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ৯শ’ থেকে ১ হাজার জন জেলা কারাগারের প্রধান ফটকে আসে। পরে তারা জেলা কারাগারে হামলা করে। কারগারের প্রথম গেট ভেঙ্গে কারগারের প্রধান ফটকে চলে আসে। তারা স্যালুটিং ডায়েস, কারা ক্যান্টিন, বন্দীদের সাক্ষাৎকক্ষ ভাংচুর করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। কারারক্ষী রাজন মাতুব্বর বাধা দিলে আসমামিরা তাকে মারপিট করে গুরুতর আহত করে। এক পর্যায়ে আসামীরা প্রধান ফটকের মূল গেট ও আস্ত্রাগার ভাঙ্গার চেষ্টা করে। জেল খানায় ঢুকে তারা বন্দীদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। পিআকআপ ও কারগারের স্থাপনা ভাঙচুর। একটি স্কুটি, মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়। আত্মারক্ষার্থে শুণ্যে ১৯ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। টুঙ্গিপাড়ায় ছাত্রলীগের-যুবলীগ- ২৮২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

এনসিপির সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করতে টুঙ্গিপাড়ায় মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ৮২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এতথ্য নিশ্চিত করেছেন টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম। মঙ্গলবার রাতে টুঙ্গিপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এ মামলাটি করেন।

আসামিরা হলেন- টুঙ্গিপাড়া পৌর যুবলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম, পৌর ছাত্রলীগের স ঘর ভাপতি ইফতি জামান পল্লব, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাবুল হাসান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন বিশ্বাস কালু, কুশলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির মোল্লা, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মমিন মর্তুজা, বর্নি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রোমান মোল্লা সহ অনেকে।

মামলার এজাহার বলা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে টুঙ্গিপাড়ার (পিরোজপুর-ঢাকা) মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা ও জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের পক্ষে মিছিল করতে থাকে। এছাড়া মহাসড়কের আশে পাশে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করে।

টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম বলেন, গত ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে টুঙ্গিপাড়ায় এ মামলার এজাহার নামীয় ২৩ জন সহ মোট ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে হওয়া এ মামলায় নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আর নিরপরাধ কোন ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

৮ মামলার তথ্য

এর আগে, গত ১৯ জুলাই রাতে নিহত ৪ যুবক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করে। ৪ হত্যা মামলায় অজ্ঞাত ৫ হাজার ৪০০ দুস্কৃতকারীকে আসামি করা হয়। এছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে ২টি , কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১টি করে মামলা দায়ের করে পুলিশ। চারটি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৫৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ২ হাজার ৬৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১১ জনকে নতুন গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোট ৩১২ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দিনভর হামলা-সহিংসতায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। পরের দিন ১৭ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১ জনের মৃত্যু হয়। পরে ওইদিন বিকেলে শহরের ১১৪ ধারা ও রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কারফিউর সময়সীমা বাড়ানো হয়। এরপর একাধিকবার কারফিউর সময় বাড়ানো হয়। গত রোববার (২০ জুলাই) কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়। তারপর থেকে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত।

(টিবি/এসপি/জুলাই ২৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test