E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সাতক্ষীরা সদরের ডিবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু

২০২৫ জুলাই ৩০ ০০:২৭:১৭
সাতক্ষীরা সদরের ডিবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর - ব্রহ্মরাজপুর সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কক্ষে ও প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে  তদন্ত করেন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র মণ্ডল। নিরাপত্তা রক্ষায় উপস্থিত ছিলেন ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মোঃ মনিরুজ্জামান। 

এদিকে প্রাথমিক তদন্ত শেষে মূল অভিযোগকারি বিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের শিক্ষিকা আকলিমা খাতুন তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসতে পারবেন না। এলে তারা কোন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পড়াতে যাবেন না বলায় শিক্ষার্থী ও কিছু অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের হেফাজতে থাকা রেজুলেশন খাতা শিক্ষক আকলিমা খাতুন, শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন দিতে চাপ সৃষ্টি করেন প্রধান শিক্ষককে। প্রধান শিক্ষক আপত্তি করায় উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় উপপরিদর্শক মনিরুজ্জামানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

তবে তদন্তকালে প্রধান শিক্ষকের ভাইয়ের নেতৃত্বে বহিরাগত লোকজন অভিযোগককারি ও শিক্ষকদের হুমকি ধামকি দিয়েছেন মর্মে আকলিমা খাতুন অভিযোগ করলেও প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান তা অস্বীকার করেন ডিবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের সহকারি শিক্ষিকা আকলিমা খাতুনের গত ২০ এপ্রিল সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান ১৯৯৬ সালের ৩০ জুলাই কম্পিউটার বিভাগ খোলার ১০ মাস আগে ওই বিভাগের সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হন। নিয়োগের সময় তার কোন কম্পিউটার সার্টিফিকেট ছিলো না।

ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ বোর্ড ত্রুটিপূর্ণ বলে দাবি করেন তিনি। প্রধান শিক্ষকের বিএড সনদ অবৈধ ছাড়াও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণির পাঁচজন কর্মচারী থাকার পরও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে একজন অফিস সহায়ক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ, পরীক্ষার ফি, বেতনের টাকা ব্যাংক জমা না দেওয়া, বিদ্যালয়ের সামনে ১০ টি দোকান ঘর বাবদ অগ্রিম জামানত হিসাবে ১১ লক্ষাধিক টাকা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে নিয়ে হিসাব না দেওয়া,পিজিবিএসআই স্কীমের সোয়া তিন লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও পিএফ এর এক স্যারেরর বাবদ ২২ হাজার ও নিজের এক লাখ ৭৮ হাজার টাকা উত্তোলনসহ দুই দফায় গাগ বিক্রির এক লাখ ৫৪ হাজার টাকা রেজুলেশন ছাড়াই আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে।

তদন্তকারি কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র মণ্ডল বলেন, তিনি অভিযোগকারি ও তার মানিত সাক্ষীদের অভিযোগসমূহ শুনেছেন। এ ব্যাপারে তারা কিছু কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। জবাবে প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। অবশিষ্ট কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য তাকে আগামী ৫ আগষ্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তবে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হয়ে মোট ২৯ বছর মমিনুর রহমান চাকুরি করলেও এতদিনে আকলিমা খাতুন বা অন্য অভিযোগকারি শিক্ষকগণ কোথায় ছিলেন তা নিয়ে তদন্তকালে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।

প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান বলেন,তিনি কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে থাকলে বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষী প্রমাণিত হলে যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নেবেন। এর আগে গত ১৩ জুলাই বিদ্যালয়ের ফটকে সহকারী শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের লেলিয়ে দিয়ে মানববন্ধনের নামে তার সম্মানহানি ঘটিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও ঐতিহ্য নষ্ট করিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করানো হয়েছে। যাহা মব ভায়োলেন্স ছাড়া কিছুই না।

এছাড়া তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে আসলে সহকারী শিক্ষকগন শ্রেণিকক্ষে ঢুকবেন না এটা আইন বহির্ভূত। তাছাড়া তার কাছ থেকে রেজুলেশন খাতা নিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি কাগজপত্রের আলোকে আগামি ৫ আগষ্টের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সব ধরণের জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা দিয়েছেন বলে দাবি করেন।

এদিকে বিল্লাল হোসেন মিঠুন মোড়ল,আব্দুল মালেকসহ বিদ্যালয়ের ৮৯ জন অভিভাবক মঙ্গলবার তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে প্রধান শিক্ষককে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের লেলিয়ে দিয়ে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করানোর জন্য শিক্ষার্থী দের ভুল বোঝানোর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। একইভাবে তারা প্রধান শিক্ষককে বিতাড়িত করার পরিকল্পনাকারী দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

(আরকে/এএস/জুলাই ৩০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test