E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

জমি দান করতে এসে মন্দির কমিটির প্রতারণায় সর্বস্বান্ত দাতা

২০২৫ জুলাই ৩১ ১৯:০৩:২২
জমি দান করতে এসে মন্দির কমিটির প্রতারণায় সর্বস্বান্ত দাতা

বিশেষ প্রতিনিধি : স্বামী প্রতিবন্ধী নেই কোন সন্তান শশুরের দেওয়া মাত্র ১০ শতাংশ জমিই শেষ সম্বল।সেখান থেকে মন্দিরের নামে ৪ শতাংশ জমি দান করতে গেলে প্রতারণার মাধ্যমে সম্পূর্ণ (১০ শতাংশ) জমিই লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কমিটির বিরুদ্ধে। 

ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের বিলজোনা অষ্টাদশ পল্লী পাগল আশ্রাম (মন্দির) এর নামে জমি দান করতে যাওয়া দাতা গুরুদাসী মন্ডলের সাথে।

দাতা গুরুদাসী মন্ডল ওই এলাকার শান্তি রাম মন্ডলের স্ত্রী। কোন সন্তান না থাকায় স্বামীর প্রতিবন্ধী ভাতা ও সামান্য কৃষি কাজ করে চলে তাদের সংসার।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে মন্দির কমিটি সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক দাতা গুরুদাসী মন্ডল কে পাংশা সাব-রেজিস্টার অফিসে নিয়ে দলিল লেখক এর মাধ্যমে প্রতারণা করে সম্পূর্ণ জমি লিখে নিয়েছে। দাতা তার জমি ফিরে পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাব-রেজিস্টার বরাবর লিখত অভিযোগ দায়ের করেছে।

দাতা গুরুদাসী মন্ডল অশ্রু কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী প্রতিবন্ধী, আমাদের নেই কোন সন্তান। আমার শশুর ১০ শতাংশ জমি আমার নামে লিখে দিয়েছিলেন। ওই জমির মাঝ দিয়ে পাকা রাস্তা গেছে। ফলে জমির কিছু অংশ (৪ শতাংশ) মন্দিরের পাশে আছে। মন্দির কমিটি আমাকে না জানিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। গ্রাম বাসীর অনুরোধে ওই ৪ শতাংশ জমি মন্দিরের নামে লিখে দিতে সম্মতি হই। বুধবারে পাংশা সাব রেজিস্টার অফিসে জমি লিখে দিতে গেলে দলিল লেখকের প্রতারণার মাধ্যমে আমার ১০ শতাংশ জমিই লিখে নিয়েছে!ওরা সবাই শিক্ষিত বলে আমাকে বোকা বানিয়ে আমার শশুরের দেওয়া সর্বশেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিল। আমি আমার জমি ফেরত চাই।

অভিযোগের সত্যতা জানতে অষ্টাদশ পল্লী পাগল আশ্রাম (মন্দির) কমিটির সাধারণ সম্পাদক শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের মিটিংয়ে ওই জমির মালিক গুরুদাসী মন্ডল ১০ শতাংশ জমিই দিতে চেয়েছিলেন। জমি লিখে দিয়ে এসে কেনো এমন অভিযোগ উঠাচ্ছে আমি জানি না। তবে জমি রেজিস্ট্রির সময় দাতা এবং তার স্বামী ছাড়া তাদের পরিবারের কেউ ছিলেন না বলে নিশ্চিত করে করেছেন। তবে দাতার সাথে কথা বলে দ্রুত সমস্যা সমাধানে কথাও বলেন তিনি।

দলিল লেখক অজিত বিশ্বাস এর সাথে মুঠোফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোন দোষ নাই। কমিটির লোক যা বলছে আমি তাই করছি। আপনি দাতার কাছ থেকে টিপসহি নেওয়ার আগে দলিল পড়ে শুনিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। মন্দির কমিটির প্রতারণার সাথে আপনিও জড়িত ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনি এখন আমাকে বলছেন কেনো, জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার আগে বলতেন!

দাতার স্বামী প্রতিবন্ধী শান্তি রাম মন্ডল বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না।জমি সম্পর্কেও কিছু বুঝি না।সকালে মন্দির কমিটির লোকজন আমার আর আমার স্ত্রীকে পাংশা নিয়ে যায়। সেখানে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে টিপসহি নিয়েছে। বাড়ি এসে জানতে পারি আমার সব জমিই ওরা লিখে নিয়েছে।

দাতার দেবর ধীরেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, আমার বাবা আমার বউদির নামে ১০ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছিলেন। ওই জমির ৪ শতাংশ মন্দিরের পাশে। মন্দির কমিটি কিছু না জানিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। মন্দির পবিত্র স্থান তাই আমি আমার দাদা ও বউদিকে রাজি করায় ওই ৪ শতাংশ মন্দিরের নামে লিখে দিতে। আজ হঠাৎ দুপুরে শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ফোন দিয়ে বলে তুমি কোথায়। আমরা জমি রেজিষ্ট্রেশন করতে আসছি তুমি কি এখন আসতে পারবা?যদি না পারো তোমাকে সাক্ষী করব না। আমি তাদের জানাই আমি ছাড়াই রেজিস্ট্রে হলে করে আসেন। আমার মনে খটকা লাগে তারা কেনো আমাকে ছাড়াই দলিল করতে গেলো।রেজিস্ট্রি অফিসে অন্য একজনের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে জানতে পারি তারা আমার বউদির নামের ১০ শতাংশ জমিই লিখে নিয়েছে।

পাংশা সাব-রেজিস্টার মুহাম্মদ মোমেন মিয়ার মুঠোফোনে এই প্রতিবেদক জানতে চায়, আপনি কি দাতার কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি কত শতক জমি মন্দিরের নামে দান করছে। সাব-রেজিস্টার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, দলিল লেখক দাতার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়ার আগে তাকে পড়ে শোনান। দাতার কাছে আপনার বিষয়টি জানতে চাওয়া উচিত কি না? তিনি বলেন, ওই মহিলার সাথে তার অভিভাবক ছিলো। তারা বলছে মন্দিরের নামে জমি দান করছে। তবে দাতা লিখিত অভিযোগ দিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে এই সাব-রেজিস্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি কখনো কোন দাতার সাথে কথা বলেন না।দলিল লেখক যা বলেন তাই শোনেন তিনি। জমি দাতার কাছে শোনার ও প্রয়োজন বোধ করেন নাই।

এ বিষয়ে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আবু দারদা বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। দাতা আমার কাছে লিখিত দিয়েছেন।সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

(একে/এসপি/জুলাই ৩১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০১ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test