E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সাতক্ষীরায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট লাঞ্ছিত 

৯ দিনেও জিল্লুর রহমানের টিকি স্পর্শ করতে পারেনি প্রশাসন

২০২৫ জুলাই ৩১ ১৯:৫৯:০৯
৯ দিনেও জিল্লুর রহমানের টিকি স্পর্শ করতে পারেনি প্রশাসন

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতকারি সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত “মা মোটরস” এর স্বত্বাধিকারী ও জেলা  বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি জিল্লুর রহমানের টিক্কি গত ৯ দিনেও স্পর্শ করতে পারেনি প্রশাসন। টাকা দিয়েই তার অপরাধ হজম করে ফেলবে এবং তার টিকি কেউ স্পর্শ করতে পারবে না বলে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ওই ব্যবসায়ি।

সাতক্ষীরা শহরের লাবনী মোড় এলাকার আখের রস বিক্রেতা মঞ্জুর হোসেনসহ কয়েকজন জানান, গত ২৩ জুলাই রাত ১০টার দিকে টাউন বাজার এলাকার “মা মোটরস” এর স্বত্বাধিকারী মেহেদীবাগ টিভি টাওয়ার এলাকার বাসিন্দা জিল্লুর রহমান লাল রং এর একটি বিশেষ প্রাইভেটকারে করে নিউ মার্কেট এলাকায় পৌঁছালে একই দিক থেকে সাতক্ষীরা ফার্ম্মেসীতে ঔষধ কিনতে আসা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফুল ইসলাম সাইফ এর মটর সাইকেলের সঙ্গে সামান্য ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জিল্লুর রহমান গাড়ির ভিতর থেকে বের হয়ে ওই ম্যাজিষ্ট্রেটকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তাকে টেনে কৃষ্ণচুড়ার গাছের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন জিল্লুর। প

থচারীদের বাধার কারণে জিল্লু তাকে ছেড়ে দিয়ে নিউ মার্কেটের দিকে চলে যায়। পরে ওই নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাকেসহ বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জিল্লুর পরিচয় জেনে বিষয়টি তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বিষয়টি সেনাবাহিনীসহ আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। রাতেই জিল্লুর মা মোটরসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তালা লাগিয়ে দেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। অভিযান চালিয়েও বাড়িতে পাওয়া যায়নি জিল্লুরকে। এমনকি তার সকল মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও তার সন্ধান পায়নি আইনপ্রয়োগকারি সংস্থা। হয়নি থানায় মামলা।

এদিকে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনাকারি জিল্লুর রহমানের উত্থানের কাহিনী অনুসন্ধানে যেয়ে জানা গেছে, তাদের জন্ম বরিশালে। ছোট বেলা থেকে তারা দুই ভাই ও এক বোন মায়ের হাত ধরে সাতক্ষীরায় আসে। মায়ের বাসস্টা-ে ছিল চায়ের দোকান। ওই এলাকা মাদক বিক্রির জন্য আলাদা পরিচিতি আছে। মাদকাসক্ত হয় তার ভাই টিটু। ২০১০ সালে সার্কিট হাউজ মোড়ে বন্ধু মোটরস এর সঙ্গে ক্ষুদ্র পরিসরে রিক-িশন মটর সাইকেল বিক্রি শুরু করে। সেখানে সুবিধা না হওয়ায় সে অন্যত্র চলে আসে। একপর্যায়ে ২০১৪ সাল থেকে কাটিয়া টাউন বাজার এলাকায় মা মোটরস নামে একটি রিক-িশান মটর সাইকেল কেনা-বেচার দোকান নেয়। কিস্তি ভিত্তিক মটর সাইকেল বিক্রি করার নামে ক্রেতাদের ঠকানোই ছিল তার প্রধান কাজ ও আয়ের উৎস্য। কিস্তি বা বকেয়া আদায় করতে সে বাবু, হেলাল, বেলাল, শাহীনুর, আলোসহ ৮/১০ সদস্যের একটি বাহিনী তৈরি করে। শুধু জেলা নয়, জেলার বাইরেও তার বাহিনীর সদস্যরা অপারেশ চালিয়ে মটর সাইকেল কেড়ে নিয়ে বেকয়া টাকার সঙ্গে দৈনিক ৫০০ টাকা ভাড়া বা চড়া সুদে টাকা আদায় করতো সে। অনেকে চড়া সুদ দিতে না পেরে মারপিটের শিকার হয়েছেন।

মারপিট ও প্রতারণার শিকার হয়ে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার কাছে অভিযোগ করায় জিল্লুকে ২০১৬ সালে ধোলাই দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। বর্তমানে বাসস্টা- এলাকায় তার দুটি দোকান আছে। নেপথ্যে থেকে স্বজনদের মাধ্যমে সে মাদক ও সোনা পাচারের কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে হুণ্ডি ব্যবসার। পিঠের চামড়া বাঁচাতে জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষপর্যায়ের নেতাকে তার ভাই টিটুর মাধ্যমে ম্যানেজ করতো সে। গত ১০ বছরে জিল্লু তার বাড়ির পাশে ও বাইপাস সড়কে টাকা বাবুসহ একটি গোষ্ঠীর সহযোগিতায় কমপক্ষে ৫ কোটি টাকার জমি ও ১০ টি আভ্যন্তরীন রুটের বাস কিনেছে। নিজের শক্তি সঞ্চয় করতে বিগত পৌরসভা নির্বাচনে ৯ নং পৌর কাউন্সিলর হিসেব নির্বাচন করেছে। প্রতিপক্ষ শফিক উদ দৌলার জনপ্রিয়তার কাছে দুই বছরে জনসম্পর্ক গড়ে তুলতে কোটি টাকা খরচ করেও হেরে যায় জিল্লু। মাদক, হুণ্ডি ও সোনা পাচারের বিষয়টি ভিত্তিহীন দাবি করে তার ব্যবসা বিস্তারে বিদেশে থাকা বোন সহযোগিতা করে থাকে বলে প্রচার দিয়ে থাকে জিল্লু।

এদিকে গত বছরের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জিল্লু নেতা পরিবর্তণ করে জেলা যুবদলের এক সাবেক নেতার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে। তার মাধ্যমে প্রশাসনে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, জিল্লুর গতিবিধির উপর নজর রাখছে প্রশাসন।

তবে ম্যাজিষ্ট্রেটকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা জিল্লুর তার অবৈধ টাকা কাজে লাগিয়ে একটি মাধ্যম দিয়ে তৎপরতা চালিয়ে নিজেকে বাঁচানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ ব্যাপারে জিল্লুর রহমানের মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকার কারণে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শাহীনুর রহমান বলেন, বিষয়টি বাদ দিলে হয় না!

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এর উপর জিল্লুর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।

(আরএম/এসপি/জুলাই ৩১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০১ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test