E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সাতক্ষীরায় ১০ টাকার প্রলোভনে এতিম শিশুকে ধর্ষণ

২০২৫ আগস্ট ০৩ ২২:৪৭:০৩
সাতক্ষীরায় ১০ টাকার প্রলোভনে এতিম শিশুকে ধর্ষণ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাবুলিয়া পোষ্ট অফিসের মাষ্টার শহীদুল ইসলাম শেখের বিরুদ্ধে ১০ টাকার বিনিময়ে ঘরের মধ্যে পড়ে থাকা কাগজপত্র পরিষ্কার  করে দেওয়ার কথা বলে আট বছরের এক এতিম শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার সকাল ১১টার দিকে স্থানীয় জনতা শহীদুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। পুলিশ উদ্বার করেছে ভিকটিমকে।

এদিকে আটককৃত পোষ্ট মাষ্টার শেখ শহীদুল ইসলাম ও ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলে এবং রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ওই ভিকটিমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে পাঠালেও রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তাকে ভর্তি না করিয়ে হাসপাতালের সামনে ঘোরাঘুরি করায় স্থানীয় একটি মহল প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন যে এটা একটি মব ভায়েলেন্স এর ঘটনা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নেবাখালি গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে জগন্নাথপুর পোষ্ট অফিসের রানার ইব্রাহীম খলিল জানান, রবিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে তিনি বাবুলিয়া পোষ্ট অফিসে ডাক নেওয়ার জন্য আসেন। এ সময় আট বছরী এক শিশুকে অফিস কক্ষে কান্না করতে দেখেন। পোষ্ট মাষ্টার ওই শিশুটির কান্না বন্ধ করার জন্য মুখ চেপে রেখেছিল। পরে ওই শিশুটিকে সেখান থেকে নিয়ে পোষ্ট অফিসের সামনে রাস্তার পাশের দোকানে বসিয়ে পাউরুটি, কলা ও পটেটো চিপস খাওয়ান তিনি। বিষয়চি তিনি স্থানীয় খালেককে জানালে সে ওই মেয়েটির মা ও খালাকে ডেকে আনে। পরে স্থানীয় লেঅকজন সমবেত হয়ে শহীদুলকে আটক করে গণ ধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। ভিকটিমকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

বাবুলিয়া পোষ্ট অফিসের পাশে মায়ের সঙ্গে অবস্থানকারি শিশুটি এ প্রতিবেদককে জানায়, মাকে তালাক দিয়ে বাবার অন্যত্র বিয়ে ও পরে মায়ের অন্যত্র বিয়ে হওয়ায় এতিম হয়ে মাঝে মাঝে খালার বাড়ি ও আত্মীয়দের বাড়িতে সে অবস্থান করে থাকে। কখনো খাওয়া জোটে , আবার কখনো জোটে না। সকাল ১০টার দিকে সে বাবুলিয়া পোষ্ট অফিসের সামনে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসে। এ সময় পোষ্ট মাষ্টার শহীদুল ইসলাম (৫৫) তাকে ১০ টাকার বিনিময়ে অফিস কক্ষে থাকা পরিত্যক্ত কাগজপত্র ফেলে দেওয়ার কথা বলে ১০ টাকা দিতে চান। কাগজপত্র ফেলে দিয়ে আসার পর ঘরটি ঝাট দিতে বলে ওই পোষ্ট মাষ্টার। ওই ঘরের সামনে থেকে এক হুজুর (জগন্নাথপুর পোষ্ট অফিসের রানার ইব্রাহীম) তাকে ডেকে নিয়ে পাউরুটি, চিপসহ কিছু খাবার খাওয়ায়। এরপর তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন ওই হুজুর। পরে শহীদুল মাষ্টারকে মারধর করে লোকজন পোষ্ট অফিসের মধ্যে ঢুকিয়ে তালা মেরে রাখে। তবে ধর্ষণের ঘটনা সত্য হলে ওই মেয়ে স্বাভাবিক ভাবে বসে থাকতে পারতো না বলে মনে করেন স্থানীয় একটি মহল।

সরেজমিনে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাবুলিয়া পোষ্ট অফিসে আটকে রাখা শহীদুল ইসলাম জানান, উর্দ্ধতন কর্মকর্তা আসবেন বলে তিনি ওই মেয়েটিকে ১০ টাকা দিয়ে ঘরের মধ্যে পড়ে থাকা ময়লা ও কাগজপত্র পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। শিশুটির গায়ে তিনি হাত দেননি। ডাক্তারি পরীক্ষা করলেই ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসবে তাকে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়েছে। তবে পোষ্ট অফিসের মধ্যে আটককৃত শহীদুল ইসলামকে ঘর থেকে বের করা মাত্র পুলিশের সামনে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে একদল লোক । এ সময় পুলিশ শহীদুলের মাথায় একটি হেলমেট পরিয়ে দেয়। পুলিশ দ্রæত তাকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে আসে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ ডালিয়া আক্তার জানান, আট বছরের কোন ধর্ষিতা (ভিকটিম) রবিবার দুপুর ১২টার পর থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ভর্তি হয়নি বা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেনি। তবে ওই ভিকটিমকে তার স্বজনদের সাথে হাসপাতালের মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে তার স্টাফরা।

সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ পোষ্ট মাষ্টার শহীদুল শেখকে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা।ভিকটিমকে দুপুর একটার দিকে সদর হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওই ভিকটিমের মা বাদি হয়ে শহীদুল শেখের নাম উল্লেখ করে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯ (১) ধারায় রবিবার বিকেলে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আগামীকাল আসামী শহীদুলকে আদালতে পাঠানো হবে।

(আরকে/এএস/আগস্ট ০৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test