E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নড়াইলে একাত্তরের চেতনায় বৃক্ষরোপণ

বট, পাকুড় আর কৃষ্ণচূড়ার ডালে বেঁচে থাকবে একাত্তরের গল্প

২০২৫ আগস্ট ০৫ ১৭:৪৭:১২
বট, পাকুড় আর কৃষ্ণচূড়ার ডালে বেঁচে থাকবে একাত্তরের গল্প

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় খাশিয়াল ইউনিয়নে একাত্তরের চেতনাকে ধারণ করে তিন বছর আগে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। একটি সড়কের দুই পাশে রোপণ করা হয়েছিল ১৯৭১টি বৃক্ষের চারা। সে সব গাছগুলোর কিছু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফের শুরু হয়েছে নতুন করে চারা রোপণের কার্যক্রম।.

গত সোমবার উপজেলার বড়দিয়া ফেরিঘাট এলাকা থেকে এ কর্মসূচির পুনরায় উদ্বোধন করা হয়। যতদিন সকল গাছ রোপণ শেষ না হবে, ততদিন চলবে।

ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা জানান, একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনাকে ধারণ করে ২০২২ সালে ইউনিয়ন পরিষদের বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি বৃক্ষরোপণের এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। সে সময় পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও তাদের স্থানীয় শুভাকাঙ্ক্ষীরা নিজস্ব অর্থায়নে ইউনিয়নের প্রধান সড়কের (বড়দিয়া-কালিয়া) দুই পাশে ১৯৭১টি ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছের চারা রোপণ করেন। নিয়মিত সে সব গাছের দেখভালও করা হয়। তিন বছরের ব্যবধানে এসব গাছের অধিকাংশতেই এখন ফুল-ফল এসেছে। তবে নানা কারণে বেশ কিছু গাছ মারাও গেছে।

ফলে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন হয়নি। এ কারণে এ বছর নতুন করে সড়কের পাশে আরও ৬০০ গাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গাছের মধ্যে রয়েছে—বট, পাকুড়, অশ্বত্থ, কাঠবাদাম, আমলকী, বহেরা, অর্জুন, চালতা, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, আমড়া, টগর, রক্ত করবী, শিমুল, কদম, ছাতিম এবং জারুল গাছসহ অন্যান্য গাছ।

এছাড়াও ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়ি বৃক্ষরোপণের আওতায় আনা হচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন, ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার বাড়ি আছে। ২০২২ সালে সড়কের পাশে গাছ লাগানোর পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডের ৭১টি বাড়িতেও ফুল ও ফলের চারা রোপণ করা হয়। পরে ধাপে ধাপে আরও বাড়িতে গাছ লাগানো হয়। এখন পর্যন্ত ২ হাজার বাড়িতে চারা রোপণ করা হয়েছে। বাকি এক হাজার বাড়িতে এ বছর দুটি করে আমের চারা লাগানো হবে।

এ কার্যক্রমের প্রধান উদ্যোক্তা ইউপি চেয়ারম্যান বি এম বরকত উল্লাহ। তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি। তিনি বলেন, 'আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান এবং অবশ্যই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান স্মরণেও কাজ করব।'

তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ঘটনা ও মানুষের লড়াই বেঁচে থাকে তাঁর চেতনার মধ্যে, ইতিহাসের মধ্যে, তাঁর শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির মধ্যে। আমরা একটু ভিন্নধর্মী আয়োজন করেছি—বৃক্ষ এবং ফুলের মধ্যে এই চেতনা-স্বপ্ন বেঁচে থাকুক।

এ সময় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, 'নিজস্ব অর্থায়নে করা আমাদের এ কাজের জন্য কোনো ধরনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অথচ সরকারি টাকায় কোনো কাজ না করে, শুধু কাগজে-কলমে দেখানোদের জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য আমরা পুরস্কারের আশায় কাজ করিনি এবং সরকারের একটি টাকাও এখানে ব্যয় করিনি।'

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন খাশিয়াল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পারভীন ইসলাম, ইতিকা দাস, শিরিনা বেগম, রিজ্জাক খন্দকার, বাবলু শেখ, ঈমান আলী, রাজিব খান, ওহিদুর খান, বড়দিয়া উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর রায় প্রমুখ।

(আরএম/এসপি/আগস্ট ০৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test