E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ফরিদপুরে বিএনপির গ্রুপিং প্রকাশ্যে, দ্রুত সম্মেলন চান তৃণমূল কর্মীরা

২০২৫ আগস্ট ০৬ ১৯:৩১:৫২
ফরিদপুরে বিএনপির গ্রুপিং প্রকাশ্যে, দ্রুত সম্মেলন চান তৃণমূল কর্মীরা

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : নির্বাচনের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে ফরিদপুরের বিএনপির রাজনীতির গ্রুপিং আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জেলা বিএনপির বিভক্তি বা প্রকাশ্য গ্রুপিং দলটির তৃণমূল কর্মীদের অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। এসবের মধ্য দিয়ে আজ বুধবার গণ–অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে দলটির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি বিজয় মিছিলটিও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পৃথক স্থানে পালন করেছেব ফরিদপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি'র ব্যানারে।

আজ বুধবার বিকেলের দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পৃথক পৃথক স্থানে এ বিজয় মিছিলের আয়োজন জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ। একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইসা ও সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া স্বপন। এবং অপর মিছিলের নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খানসহ আহ্বায়ক কমিটির আরও পাঁচ যুগ্ম আহ্বায়ক।

বুধবার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে মিছিলটি জেলা ও মহানগর বিএনপির ব্যানারে বিকেল চারটার দিকে শহরের ব্রহ্মসমাজ সড়কে অবস্থিত সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে মুজিব সড়ক ধরে ইমাম উদ্দিন আহমাদ স্কয়ার হয়ে গোরস্তানের মোড়, হাজরাতলার মোড়, ভাঙ্গা রাস্তার মোড় হয়ে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত একাত্তরের শহীদদের নামসংবলিত বেদির সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

অন্যদিকে পাঁচ যুগ্ম আহ্বায়কের নেতৃত্বের মিছিলটি একই ব্যানার অর্থাৎ জেলা ও মহানগর বিএনপির ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয়। তাদের মিছিল ওই সময়ের একটু আগে অর্থাৎ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কুলের সামনে থেকে শুরু হয়ে মুজিব সড়ক ধরে জেনারেল হাসপাতালের সামনে দিয়ে জনতা ব্যাংকের মোড় হয়ে ইমামউদ্দিন আহমাদ স্কয়ারে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

নির্বাচনের আগে দলের এমন গ্রুপিং ও পৃথক কর্মসূচি পালনে বিপাকে পড়েন তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরা। এসময় কেউ কেউ অস্বস্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের নেতারা সবাই আমাদের কাছে সমান। একই দল, একই ব্যানার, একই কর্মসূচি তাহলে আলাদা আলাদা গ্রুপে কেনো?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুর পৌরসভার এক ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা বলেন, আমাকে দুই গ্রুপ থেকে মিছিলে যোগদান করতে বলেছেন নেতারা। আমি কি করবো কিছুই না বুঝে আমার লোকজনকে দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছি। আমিও ব্যানার দুইটা করেছি। পরে দুই প্রোগ্রামেই ঘুরে নেতাদের চেরাহা দেখিয়ে বুঝিয়ে এসেছি আমি আপনার প্রোগ্রামে এসেছি। সবাই খুশি, আমিও খুশি। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা আর কি!

এই তৃণমুল নেতার মতো অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা করতে না পারা অনেকেই এক পক্ষকে বেছে নিয়েছেন, কেউ আবার নিজে উপস্থিত না থেকে শুধু কর্মীদের পাঠিয়ে দিয়েছেন এই ভেবে যে, কোন প্রোগ্রামে যাবেন আর কোন নেতা মাইন্ড করে বসবেন এই ভয়ে। তবে ফরিদপুর বিএনপি'র তৃণমূলের অনেক সাধারণ নেতাকর্মী দলের এমন গ্রুপিং এর সমাধান চান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই।

এদিকে, জেলা বিএনপি অনেক পুরোনো নেতাকর্মী মনে করেন, ফরিদপুর জেলা বিএনপির বিভক্তির ইতিহাস অনেক পুরোনো হলেও এতোটা প্রকাশ্যে আগে দেখা যায়নি। বিশেষ করে সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মৃত্যুর পর থেকে দলটির মধ্যে এমন বিভেদ বা গ্রুপিং স্পষ্ট হওয়া শুরু করেছে। গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দলটির মধ্যে নেতা ভিত্তিক গ্রুপিং সামনে আসতে শুরু করে। এছাড়া, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মতে গত ১২ জুলাই দলটি জেলার সম্মেলন আয়োজন করার কথা থাকলেও তা সময় মতো না হওয়ায়, দলটির অভ্যন্তরীণ বিরোধ আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে বলে মনে করছেন জেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন সাবেক নেতা।

এদিকে, গত ৩ আগস্ট ফরিদপুর জেলা বিএনপি'র সম্মেলন আয়োজনের জন্য তিন মাস সময় চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আবেদন করেছেন দলটির জেলা আহ্বায়ক এডভোকেট সৈয়দ মোদাররেছ আলী ও সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া স্বপন।

অপরদিকে, গত ৬ জুলাই জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি পাঁচ যুগ্ম আহ্বায়কসহর মোট ১৫ জন সদস্য জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটিকে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে জেলার আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মাধ্যমে জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের অনুরোধ জানান। তবে, বর্তমান আহবায়ক কমিটির শীর্ষ দুই নেতা সম্মেলনের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দলের কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের সময় নির্ধারিত হলেই সম্মেলনের প্রস্তুতি নিবেন ও কেন্দ্রের পরবর্তী নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করবেন বলেও জানান তাঁরা।

উল্লেখ্য, গত ২ জুন কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ফরিদপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে চিঠি দিয়ে ইউনিটগুলোর সমন্বয়ে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে জেলার সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দেন। এবং এ আয়োজন ব্যর্থ হলে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। তবে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করা যায়নি।

এদিকে, মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে হতে যাচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জেলা বিএনপির সম্মেলনের জন্য তিন মাস সময় চেয়ে করা আবেদন ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্ততির সময়ের বিবেচনায়, ফরিদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন কি আদৌ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে করা সম্ভব হবে কিনা সেটি নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে তৃণমূলে। এমতাবস্থায় দলটির গ্রুপিং নিরসনে ফরিদপুর বিএনপির তৃণমূলের চাওয়ার কতোটা প্রতিফলন ঘটবে, সেটি নির্ভর করছে বিএনপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত ও নির্বাচনের সময়ের উপর। এখন দেখার বিষয় ফরিদপুর জেলা বিএনপির এসব সংকট নিরসনে কি পদক্ষেপ নেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সেদিকেই তীক্ষ দৃষ্টি রাখছেন দলটির সাধারণ তৃণমূলের নেতাকর্মী।

(আরআর/এসপি/আগস্ট ০৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৬ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test