E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

স্কুলে যোগদান করে অন্যত্র চাকরি করছেন শিক্ষক, স্কুলে না এসেও তুলছেন বেতন

২০২৫ আগস্ট ১৫ ১৮:৩৩:৪২
স্কুলে যোগদান করে অন্যত্র চাকরি করছেন শিক্ষক, স্কুলে না এসেও তুলছেন বেতন

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর জেলার মধুখালি উপজেলার মির্জাকান্দী আড়ুয়াকান্দী উচ্চ বিদ্যালয় নামক একটি স্কুলের এক সহকারি শিক্ষক পদে যোগদান করার কয়েকদিন পর থেকেই অনুপস্থিত রয়েছেন সুজন দাস নামের এক সহকারি শিক্ষক। তিনি বিএড করার কথা স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে ঢাকায় গিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এমবকি স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতনও তুলছেন ওই শিক্ষক। তিনি চাকরি করছেন ঢাকায়, বেতন তুলছেন দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন দাস উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বলেন, 'আমি স্কুল থেকে ছুটি নিলেও আমার বদলি আরেকজনকে আমি ক্লাস নিতে দিয়ে এসেছি। তিনি আমার বলদি ক্লাস নিচ্ছেন, তাই আমি বেতন নিচ্ছি। আমার প্রধান শিক্ষক ও মধুখালি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসব অবগত আছেন। আপনি তাঁদের সাথে কথা বলুন।'

এসময় উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে সুজন দাস জানান, 'না, আমি বিএড করছিনা। বিএড এর জন্য ছুটি নিয়ে কেনো আমি বিএড করছিনা, সেটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার, আপনাকে জানাতে বাধ্য নই। আর যে চাকরিটা এখন করছি সেটা ছেড়ে দিবো কিনা সেটা আমি আমার প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে পরে জানাবো। সব থেকে ভালো হয়, আপনি তাঁর থেকেই সব শুনেন।'

এ বিষয়ে জানতে সরেজমিনে মধুখালি উপজেলার মির্জাকান্দী আড়ুয়াকান্দী উচ্চ বিদ্যালয় গিয়ে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মো. কুদ্দুস মোল্লার সাথে কথা হলে তিনি জানান, 'সুজন নাই তাতে আমার তো কোনো সমস্যা হচ্ছেনা। ওই শিক্ষকের পরিবর্তে শুভ্রা রানী দাস নামের একটা মেয়ে (সুজনের মামাতো বোন) এখানে ক্লাস নিচ্ছে, সুজনই তাঁকে ওর বদলি দিয়ে গেছেন। মেয়েটা ভালো, ইংলিশে অনার্স মাস্টার করা।' কোনো পারমানেন্ট শিক্ষকের পরিবর্তে কোনো রকম নিয়োগ ছাড়া যে কেউ ক্লাস নিতে পারেন কিনা? আর যে শিক্ষক আপনার থেকে মিথ্যা বলে ছুটি নিয়ে অন্যত চাকরি করছেন, আপনি জানার পরেও তাঁকে নিয়মিত বেতন দিচ্ছেন কিসের ভিত্তিতে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই প্রধান শিক্ষক জানান, 'দেখেন ভাই গ্রামের স্কুলে এতোকিছু ধরলে হয় না? আমার শিক্ষক দরকার ছিলো, যিনি যোগদান করেছেন, তিনি নাই তার পরিবর্তে একজনকে দিয়ে গেছেন। আমার ক্লাস চলছে, সমস্যা কোথায়?' এসব কিছুই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অবগত আছেন।'

প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে বিদায় নেওয়ার প্রাক্কালে তিনি আরও জানান, 'আসলে সুজন ১৫ দিন আগে রিজাইন লেটার দিয়ে গেছেন, আমরা তাঁকে রাখবো না। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট প্রায় সবাই অবগত আছেন বলে দাবি করেন ওই প্রধান শিক্ষক আ. কুদ্দুস মোল্লা। তবে, সুজন দাসের রিজাইন লেটার দেখতে চাইলে তিনি জানান, 'ওইটা স্কুলের ফাইলে নাই, বাসায় রয়েছে। আপনাদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়ে যান, আমি বাসায় গিয়ে পাঠিয়ে দিবো।' তবে, পরবর্তীতে সুজন দাসের রিজাইন লেটার চেয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা দেখাতে পারেননি। এদিকে, ওই স্কুলের অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক সুজন দাস কোনো প্রকার রিজাইন লেটার প্রধান শিক্ষককে দেননি বলে 'দৈনিক বাংলা ৭১'কে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

উপরোক্ত বিষয়গুলো জানতে ফরিদপুরের মধুখালি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আ. আউয়াল আকন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে, 'তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের কথা বলে প্রথমে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেন। গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ নেই আচ করতে পেরে মাত্র এক মিনিট সময় প্রার্থনা করলে তিনি তাতে সম্মতি দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন আ. আউয়াল। এসময় তিনি জানান, 'উপরোক্ত স্কুলের সুজন দাস নামের একজন সহকারি শিক্ষক যোগদান করেই বিএড করতে চলে যান। কিন্তু তিনি মনে হয় বিএড এ ভর্তি হতে পারেননি। তাঁর পরিবর্তে ওই শিক্ষক একজনকে বদলি হিসেবে ওই স্কুলে দিয়ে গেছেন বলে শুনেছি। তাঁর বেতনটি ওই বদলি শিক্ষককে দেওয়া হচ্ছে। 'একজনের চাকরি আরেকজন করতে পারেন কিনা, আর অনুপস্থিত একজন শিক্ষকের বেতন কেমনে কোনো রকম পদায়ন ছাড়া কেউ তুলতে পারেন? -এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, 'না একজনের চাকরি আরেকজন করতে পারেন না, এটি আইনসিদ্ধ নয়। আর সুজন দাসের বেতন সুজন দাসই তুলে নেন, তাঁর বদলি ব্যক্তি বেতন তুলবেন কেনো ভাই? তিনি তো কোনো প্রকার নিয়োগ প্রাপ্ত নন।' সুজন দাস অন্যত্র চাকরি করছেন এবং একই সাথে দুইটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নিচ্ছেন, আর তিনি অনুপস্থিত থাকার পরেও আপনারা তাকে নিয়মিত বেতন দিয়ে আসছেন। এটি কি বৈধ কিনা?- এমন প্রশ্নের জবাবে মধুখালি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আ. আউয়াল আকন জানান, 'আমি কিছুদিন আগে জেনেছি সুজন দুই যায়গায় চাকরি করেন এবং দুই জায়গা থেকেই বেতন তুলেন। এজন্য আমি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে তাঁকে শোকজ করতে বলেছি এবং সুজনকে আগামি মাসে (সেপ্টেম্বর) স্কুলে যোগদান করতে বলেছি। তিনি যোগদান না করলে আমি তাঁর বিরুদ্ধে একশনে যাবো'। এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, 'না ভাই এসব কোনোটাই আইন সিদ্ধ নয়।'

বৃহস্পতিবার এই রিপোর্ট লেখার আগে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদকের নিকট শিকার করেন, 'আমি আসলে সুজন দাসকে শোকজ করি নাই, এমনকি তাঁর কোনো রিজাইন লেটারও আমার কাছে নাই। আমার আর কিছুদিন চাকরি আছে, মিথ্যা বলতে চাই না। তবে সুজন আমাকে বলছে, সে ওই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসবে এবং স্কুলে পুনরায় যোগদান করবে।' কবে যোগদান করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওর সাথে কথা বলে কাল পরশু আপনাকে জানাতে পারবো।'

উল্লেখ করা যেতে পারে, পরপর দুই দিন দুপুর ১ টার দিকে ওই স্কুলে গিয়ে সুজনের বদলে ক্লাস নেওয়া শুভ্রা রানী দাসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। দুইদিনের একদিন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো, আ. কুদ্দুস মোল্লা জানিয়েছেন- তাঁর বাসায় একটু ঝামেলা তাই আজ জলদি চলে গেছেন আজ এবং দ্বিতীয় দিন তিনি জানান, অসুস্থ তাই চলে গেছেন।

(আরআর/এসপি/আগস্ট ১৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৫ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test