E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

জেলার শেষ সীমান্তের এলাকার মানুষের মৌলিক চাহিদা দেখবে কে

২০২৫ আগস্ট ২৪ ১৮:২৯:৫০
জেলার শেষ সীমান্তের এলাকার মানুষের মৌলিক চাহিদা দেখবে কে

বিশেষ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জ জেলার ‘খাঁর চর’, পাবনা জেলার ‘ঢালার চর’, যা যুক্ত হয়েছে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ চরের সঙ্গে। এ তিনটি চরাঞ্চলে বসবাস করে অন্তত ২০০ পরিবার। তিন জেলার শেষ প্রান্তে হওয়ায় এখানকার খোঁজ রাখে না কেউ। নেই বিদ্যুৎ, নেই সড়ক, নেই হাসপাতাল। যাও একটি বিদ্যালয় আছে, তাও অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরে। এ তিনটি চরে রয়েছে বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী অন্তত একশ শিশু। যারা জানেই না বিদ্যালয় কি? তাদের কথা ভেবে চরে যাত্রা শুরু করেছে, আমাদের পাঠশালা নামের একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়। সামাজিক মাধ্যমে কাজ করা একদল মানুষ এ অঞ্চলের নাম দিয়েছেন ‘নিরক্ষর তৈরির কারখানা’।

জানা গেছে, গোয়ালন্দ চরে যেতে হলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ছাড়া যাওয়ার কোনো উপায় নেই। পাঁচ থেকে ছয় কিমি পানিপথ, যার বেশির ভাগই প্রমত্তা পদ্মা। উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। অপরদিকে পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালার চর থেকে পাকা সড়কে উঠতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। সেখানেও বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া উপায় নেই। আবার মানিকগঞ্জের খাঁর চর থেকে মূল সড়কে যেতে হয় নৌকায়। সময় লাগে দুই ঘণ্টা। দূরত্ব ও যোগাযোগব্যবস্থা নাজুক হওয়ার কারণে এখানে কমছে শিক্ষার হার। তাই তো সামাজিক মাধ্যমে কাজ করা একদল মানুষ এ অঞ্চলের নাম দিয়েছেন ‘নিরক্ষর তৈরির কারখানা’।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, এক সময় এখানে ছিল সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। সর্বনাশা পদ্মায় বসতভিটা গিলে খাওয়ার পর ছিন্নভিন্ন হয়ে যান এ এলাকার বাসিন্দারা। তবে নিয়তির নিয়মে আবারও জেগে উঠেছে চর। তাই তো চরেই ফিরে এসেছেন বাসিন্দারা। মাঝ পদ্মার চারদিকে অথই পানি। তিন দিকে গড়ে উঠেছে তিন গ্রাম। মানিকগঞ্জ জেলার ‘খাঁর চর’, পাবনা জেলার ‘ঢালার চর’, যা যুক্ত হয়েছে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ চরের সঙ্গে।

এ সময় গোয়ালন্দ চরের বাসিন্দা আলম খান বলেন, এখানকার অন্তত একশ শিশু, যাদের বয়স ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যে, তারা স্কুলে যায় না। অনেকে আবার বাবার সঙ্গে জন্মের পর থেকে নদীতে মাছ ধরার কাজ শুরু করে দেয়।

পাবনার বেড়া চরের বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এখানকার মানুষ। বিদ্যুৎ না থাকায় থাকতে হয় অন্ধকারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত শতাধিক শিশু। আবার কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার একমাত্র বাহন নৌকা। হাসপাতালে নিতে নিতে মারা যায় অনেকেই।

তবে সামাজিক মাধ্যমে কাজ করা একদল মানুষের নজরে আসে এ এলাকাটি। তারা তৈরি করেন ‘নিরক্ষরের কারখানা’ নামে একটি কনটেন্ট, যা দেখে সাড়া দেন এ সমাজেরই কিছু ভালো মানুষ। চরের শিশুদের শিক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘আমাদের পাঠশালা’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রথম দিনেই সেখানে ভর্তি হয়েছে ৪৫ শিশু।

সাংবাদিক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর এনায়েত মুন্সি বলেন, এ চরটি আমার কাছে ভিন্ন ধরনের মনে হয়েছে। কারণ এর তিন পাশে তিনটি চর, যা আবার তিন জেলার অংশ। অবাক হওয়ার বিষয় হলো- এরা এখনও অন্ধকারে ডুবে আছে। তাই তো আমি বিষয়টি জানাই সাংবাদিক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর মহসিন উল হাকিমের কাছে। সেই আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে এসেছে।

‘আমাদের পাঠশালা’র মূল উদ্যোক্তা সাংবাদিক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর মহসিন-উল হাকিম বলেন, চর যখন ভাঙে, তখন সব কিছু অন্য চরে গেলেও যায় না শুধু স্কুল। যে কারণেই তৈরি হয় ‘নিরক্ষরের কারখানা’। অন্ধকার থেকে এ শিশুদের বের করে আনতেই নেওয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ।

তিনি আরও বলেন, সমাজের বৃত্তবান ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে এলে তারা একটু সুদৃষ্টি দিলে পাল্টে যেতে পারে ‘খাঁর চর’, ‘ঢালার চর’ ও গোয়ালন্দ চরের মানুষের জীবনযাত্রা।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান বলেন, চরাচঞ্চলের মানুষ ভৌগোলিক কারণেই অবহেলিত। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে তাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়। এ ছাড়া এডিপি প্রকল্পে তারা সমান অংশ পায় সেটার নজরদারি করা হয়। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

(একে/এসপি/আগস্ট ২৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৪ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test