E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

উত্তর মেরু অভিযান শেষে দেশে ফিরেছেন স্কুল শিক্ষার্থী আল মাহমুদ

২০২৫ আগস্ট ২৫ ১৭:৪৫:২৮
উত্তর মেরু অভিযান শেষে দেশে ফিরেছেন স্কুল শিক্ষার্থী আল মাহমুদ

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : পরমাণুশক্তি চালিত আইসব্রেকারে চড়ে আন্তর্জাতিক আর্কটিক উত্তর মেরু অভিযান শেষে দেশের মাটিতে পা রেখেছেন রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। সোমবার (২৬ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে মাহমুদ ও তার বাবা বাহার আলী ঢাকা হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেছেন।

বিমান বন্দরে নামার পর আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং অভিভাবক হিসাবে সাথে থাকা তার বাবা বাহার আলীর ফোনে কথা হয়।

শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহর অসীম করুণায় আমি পৃথিবীর চূড়ায় অভিযানে যোগ দিতে পেরেছি। এটা সত্যিই একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা ছিল। সমুদ্রের চারদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু বরফ আর বরফ। সুনসান নীরবতা। এ যেন বরফের মরুভূমি কিংবা বরফ জমা বিস্তীর্ণ দ্বীপ। এরই মাঝে বরফ ভেঙে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তিচালিত আইসব্রেকার। আর্কটিক মহাসাগরের বুকে গেঁথে দিয়েছি লাল সবুজের পতাকা। টানা ৯ দিনের এই অভিযানে উত্তর মেরুর নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ, বিচিত্র প্রাণী দেখার সঙ্গে পারমাণবিক শক্তির বহুমুখী ব্যবহার আর জীবন গঠনের নানা শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে। অভিযান চলাকালে আমরা শীর্ষস্থানীয় পারমাণবিক ও মহাকাশ বিজ্ঞানীদের বক্তৃতা শোনার অনন্য সুযোগ লাভ করেছি। এই অভিযানে পরমাণু ও অন্যান্য বিষয়ে অর্জিত জ্ঞান ভবিষ্যতে দেশের কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করব।

মাহমুদ জানান, যাত্রা শুরুর পর ১৭ আগস্ট রাত ২টায় এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। গভীর ঘুমে সকলে। হঠাৎ ডাকাডাকিতে তড়িঘড়ি করে উঠে কেবিনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে চোখ ছানাবড়া। কারণ জাহাজটি পৌঁছে গেছে উত্তর মেরুতে। বিপুল উৎসাহে সকলে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়ি। বরফের ভার বহন ক্ষমতা পরীক্ষা করে সবাইকে ধীরে নামানো হয়। এসময় সাউন্ডবক্সে বেজে ওঠে বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী সকল দেশের জাতীয় সংগীত। উত্তর মেরুতে ‘আমার সোনার বাংলা’ বাজতে শুনে গর্বে আমার বুক ভরে ওঠে। সেখানে নেমে বরফের বুকে লাল সবুজ পতাকা পুঁতে দেই। অন্য দেশের শিক্ষার্থীরাও তাদের পতাকা পুঁতে দেয়। ‘বরফগুলো ছিল বেশ শক্ত ও পিচ্ছিল। তাই আমাদের বেশ সতর্কতার সঙ্গে হাঁটাহাঁটি করতে হচ্ছিল। রাত ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বহনকারী জাহাজটি উত্তর মেরুতেই ছিল।

তিনি আরও জানান, জাহাজে করে যাতায়াতের পথে মোট দুইটি সাদা ভালুক দেখার সুযোগ হয়েছে। বিস্তীর্ণ বরফাঞ্চলের ওপর সাদা রঙের ভালুকের শুয়ে থাকার দৃশ্য সবাই বেশ উপভোগ করেছে। সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করছি।

মাহমুদ বলেন, আমার কাছের বিদেশী বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়গুলো আমি কখনো ভুলব না। আমার একমাত্র দুঃখ হল আমি জানি না তাদের সাথে আবার দেখতে পারব কিনা। এই সফরের জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রসাটম, আমার বাবা-মা এবং রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

মাহমুদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আনন্দধাম গ্রামে। বাবা বাহার আলী বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে এবং মা মোছা. মর্জিনা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরিরত।

বাবা বাহার আলী বলেন, আমার ছেলে এবং আমি নিজে এই সুযোহ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। আমি রসাটমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলছি, রাশিয়া জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত দেশ। রাশিয়া বাংলাদেশের পাবনা জেলার রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যেটি আমার বাসার খুব কাছে। এটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনবে বলে আমি মনে করছি। বৈশ্বিক রাজনীতি ও অন্যান্য বিষয়েও রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক গুরুত্ব বহন করে। এমন পরিস্থিতিতে আমি আমার ছেলের সাথে রাশিয়া ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মানুষ মনে করছি।

তিনি আরও বলেন, জীবনে প্রথমবারের জন্য রাশিয়া সফর করছি। উত্তর গোলার্ধের এই দেশটি নিয়ে আমার কৌতুহল ছিল। বিশেষ করে পৃথিবীর বৃহত্তর দেশ, বছরের ছয়মাস দিন আর ছয়মাস রাত, বরফ আচ্ছাদিত প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাকে বিমোহিত করেছে। জীবনে এমন সুযোগ পাব সেটা কখনো ভাবিনি। ছেলের সুবাদে এখানে আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত, যা ভাষায় বর্ণনা দেওয়ার মত নয়। এখানে আয়োজকদের আতিথিয়েতা, বাইরের হালকা শীতল উপভোগ করার মত আবহাওয়া সবকিছু মিলেই এক অসাধারণ পরিবেশ। এছাড়াও এখানকার মানুষের রুচিবোধ, সামাজিকতা, মানবিক মূল্যবোধ আমাকে অভিভূত করছে। এই দেশটি শিা-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একটি দেশ। আমি চাই আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হোক এবং পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও ভৌগোলিক অখন্ডতায় উভয় দেশ একসাথে কাজ করুক।

‘৫০ লিয়েত পাবেদি’ (বিজয়ের ৫০ বছর) উপলক্ষ্যে ‘আইসব্রেকার অব নলেজ’ শীর্ষক এই ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক আর্কটিক অভিযানটি রাশিয়ার পারমাণবিক শিল্পের ৮০তম বার্ষিকী এবং উত্তর সমুদ্র পথ আবিষ্কারের ৫০০তম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রসাটমের সহায়তায় আয়োজিত এই অভিযানে ২১টি দেশের ৬৬ জন নির্বাচিত স্কুল শিক্ষার্থী অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ, মিশর, তুরস্ক, বলিভিয়া, কাজাখস্তান, চীনসহ অন্যান্য দেশ। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এই অভিযানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন।

গত ১৩ আগস্ট রাশিয়ার মুরমানস্ক থেকে সমুদ্রপথে পরমাণুশক্তিচালিত আইসব্রেকারে চড়ে উত্তর মেরু অভিযান শেষে ২২ আগস্ট সকালে তাদের জাহাজটি আবার ফিরে আসে মুরমানস্কে। রাশিয়ায় বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনা এবং দর্শনীয় স্থান, ঐতিহাসিক রেড স্কোয়ার পরিদর্শন শেষে রবিবার দুপুরে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মাহমুদ। আজ সোমবার তিনি দেশে পৌঁছাছেন।

(এসকেকে/এসপি/আগস্ট ২৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৫ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test