E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আশাশুনিতে বিজন দে হত্যা : বেরিয়ে পড়তে পারে থলের বিড়াল 

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ১৬:০০:০০
আশাশুনিতে বিজন দে হত্যা : বেরিয়ে পড়তে পারে থলের বিড়াল 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের পাইথলী ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের বুধহাটা ইউনিয়নের সভাপতি  পাইথলি গ্রামের বিজন কুমার দে হত্যা মামলায় দুইজনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ইউপি সদস্য ও যুবদল নেতার থানায় সোপর্দ  করার ঘটনা টক অব দি জেলায় পরিণত হয়েছে। থানায় সোপর্দ করা ওই দুই আসামীকে ৪ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ৪০ মিনিটে আশাশুনি সদরের চাপড়া ব্রীজের পাশ থেকে গ্রেপ্তার দেখানোয় বিজন দে এর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে পারে মর্মে স্থানীয়রা মনে করছেন।

এদিকে পাইথলী গ্রামের আনিছুর রহমান ও শরিফুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিজন দে তাদের সঙ্গে ২ সেপ্টেম্বর রাতে মাছ চুরি করতে গিয়েছিল মর্মে শিখিয়ে ইজিবাইকে করে নিয়ে যুবদল নেতা আবু জাহিদ সোহাগ ও বুধহাটা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য শিশ মোহাম্মদ জেরি ৪ সেপ্টেম্বর রাতে তাদেরকে থানায় সোপর্দ করা সংক্রান্ত ওই দুই জনের বক্তব্য সম্পৃক্ত করে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়াকে কেন্দ্র করে নিজ ফেস বুক আইডিতে নিজেকে বুধহাটা ইউনিয়ন জামায়াতের ৭ নং ওয়ার্ডের সভাপতি হিসেবে এজ লাইভ করার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক আব্দুর রহিম জানান, ৩ সেপ্টেম্বর সকালে চুমরিয়া গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের পাশে বাবলা বাগান থেকে বিজন কুমার দে এর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার ছেলে প্রণব কুমার দে বাদি হয়ে ওই দিন থানায় একটি হত্যা মামলা (জিআর-১৫৩/২৫ আশা) দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ তদন্তে নেমে বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চাপড়া ব্রীজের পাশর্^বর্তী এলাকা থেকে পাইথলী গ্রামের আনিছুর রহমান ও শরিফুলকে গ্রেপ্তার করেন। যদিও আদালতে আসামী চালান দেওয়ার সময় তিনি ফরোয়াডিং এ উল্লেখ করেছেন যে, বৃহষ্পতিবার রাতে পাইথলী থেকে নজরদারি করতে করতে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে আনিছুর ও শরিফুলকে চাপড়া ব্রীজের পাশ থেকে গ্রেপ্তার করেন। তবে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে কিনা সে বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজী হননি। এমনকি তাদরেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে কিনা সে প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজী হননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে গ্রেপ্তারকৃত আনিছুর রহমান ও শরিফুলকে আদালত চত্বরে আনা হলে সাংবাদিকদের সাথে তারা বলেন, ইউপি সদস্য শিশ মোহাম্মদ জেরি পরিচয়ে ও যুবদল নেতা আবু জাহিদ সোহাগ পরিচয়ে বৃহষ্পতিবার তাদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে রাতে থানায় নিয়ে আসেন। থানায় নেওয়ার আগে তাদেরকে শিখিয়ে দেওয়া হয় যে, বিজন দে তাদের সঙ্গে মাছ চুরি করতে গিয়েছিল মঙ্গলবার রাতে। মাছ চুরির একপর্যায়ে বিজন দে এর হার্ট এ্যাটাক হয়। বিজনকে টানতে টানতে চুমুরিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের পাশে নিয়ে আসলে রাস্তা দিয়ে যাওয়া কয়েকজন মাছ ধরা লোককে দেখে তাকে ফেলে রেখে চলে যান তারা। বিষয়টি তার ছেলেকে মোবাইাল ফোনে জানালেও সে কোন জবাব দেয়নি। বিজনকে চোর অথবা চোরের থলিদার হিসেবে বলার জন্য তাদেরকে বলা হয়।

তবে স্থানীয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে জামায়াতের বুধহাটা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সভাপতি ও ইউপি সদস্য শিশ মোহাম্মদ জেরি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে যে বক্তব্য তুলে ধরেছেন তাতে তিনি আনিছুর ও শরিফুল তাকে মোবাইল ফোনে বিজন দে কিভাবে তাদেরে সঙ্গে মাছ চুরি করতে গিয়েছিল তা জানানোর জন্য তাদের বাড়ি যান। পরবর্তীতে সদর উপজেলার জোড়দিয়া গ্রামে একটি ঘেরে বাগদা চিংড়ি চুরি করে তারা তিনজন বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে বুধবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে জিন দে পিছিয়ে পড়ায় তাকে খুঁজতে বের হন আনিছুর ও শরিফুল। তারা একটি ঘেরের মধ্যে পানিতে দাঁড়ানো দুই হাত তোলা অবস্থায় বিজন দে কে দেখে তাকে উদ্ধার করেন। তাকে টানতে টানতে এনে চুমরিয়া বেড়িবাঁধের পাশে নিয়ে আসেন। নাকে আঙুল দিয়ে তারা বুঝতে পারেন যে বিজন দে মারা গেছে। তখন তারা সেখান থেকে চলে যান। খবর পেয়ে শিশ মোহাম্মদ জেরি মৃতদেহ দেখতে এসে বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পেরে ডিএসবিকে জানান। এ ছাড়া আনিছুর ও শরিফুল তার সঙ্গে মাছ চুরির কথা বললে বিষয়টি আশাশুনি থানা যুবদলের সদস্য সচীব আবু জাহিদ সোহাগকে অবহিত করেন। পরে ওই দুইজনকে নৈকাটি গ্রামের সামছুরের ইজিবাইকে করে থানায় নিয়ে যুবদল নেতা সোহাগ ও তিনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে সোপর্দ করে চলে আসেন।

স্থানীয় বিশিষ্ঠজনেরা বলেন, আনিছুর ও শরিফুল আওয়ামী লীগ নেতা বিজন দে এর সাথে মাছ চুরি করতে যাওয়ার বিষয়টি পাইথলী ৮নং ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি বা ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন বা ইউপি চেয়ারম্যান ডাবøুকে না বলে কেন ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও জামায়াত সভাপতি শিশ মোহাম্মদ জেরিকে বললো ? শিশ মোহাম্মদ জেরি কেন বিষয়টি ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর বা থানা জামায়াতের আমীরকে না বলে যুবদল নেতা আবু জাহিদ সোহাগকে বললেন? আবার পুলিশ বলছে তারা নিজেরাই চাপড়া ব্রীজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছেন। সুতরাং একজন আওয়ামী লীগ নেতা ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা যথাযথ তদন্ত হলে শিশ মোহাম্মদসহ অনেকেরই এর থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে রহস্য উন্মোচনে বড় ভ‚মিকা রাখবে।

এ ব্যাপারে শিশ মোহাম্মদ জেরি এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি ও সোহাগ ভাই শরিফুল ও আনিছুরকে থানায় দিয়ে আসার পরও কেন পুলিশ তাদেরতে চাপড়া ব্রীজের পাশ থেকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করলেন তা তিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইবেন। আনিছুর ও শরিফুল তার পূর্ব পরিচিত বলে চুরির বিষয়টি তাকে জানাতে তার বাড়ি গিয়েছিল। তবে তিনি আনিছুর ও শরিফুলের মাছ চুরির বিষয়টি দলের থানা আমীর তারিকুল ইসলাম তুষারকে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্রায় অবহিত করেছিলেন। বিষয়টি তিনি কেন লাইভে উল্লেখ করেননি তার কোন সদুত্তর দেতে পারেননি। তবে আদালতপাড়ায় আনিছুর ও শরিফুল সাংবাদিকদের যে কথা বলেছেন তা সঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন

(আরকে/এএস/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test