ভাঙ্গায় টানা অবরোধ চলছে, রাজধানীর সাথে ২১ জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন থেকে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে নিয়ে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনায় ভাঙ্গায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করেছে ভাঙ্গা উপজেলাবাসী। এ নিয়ে এটি তৃতীয় দিন, টানা দ্বিতীয় দিন এবং চতুর্থ দফায় মহাসড়ক অবরোধ করে আছে আন্দোলনকারীরা। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই অবরোধ কর্মসূচিতে দুই ইউনিয়নবাসীর সঙ্গে ভাঙ্গা উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন যোগ দিয়েছে। সুতরাং ভাঙ্গা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নই এ আন্দোলনে এখন সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। তারা কিছুতেই ভাঙ্গাকে আলাদা হতে দিতে চান না। তারা সবাই ইসির নেওয়া সিদ্ধান্তকে ষড়যন্ত্রের অংশ আখ্যায়িত করে অতিসত্বর ওই ইসির দেওয়া প্রজ্ঞাপন বাতিল চান।

আন্দোলনরত ভাঙ্গাবাসী তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

প্রখর রোদ উপেক্ষা করে অবরোধকারীরা তাদের এই আন্দোলনটিকে দেখছেন নিজেদের মাটি রক্ষার আন্দোলন, অস্তিত্বের আন্দোলন, জীবন-মরণের আন্দোলন, ভাগ্য নির্ধারণের আন্দোলন হিসেবে। তারা কিছুতেই ভাঙ্গা থেকে এক ইঞ্চি মাটিকে আলাদা হবেন না।

এদিকে, দেশের এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক অবরুদ্ধ থাকায় এই রুটে চলাচলকারী ২১ জেলার যাত্রীরা ঘন্টার পর ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার আশ্বাস না আশায় এখন ভাঙ্গাবাসী এটিকে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করে আরও বলেন, এসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিবে ভাঙ্গা এলাকাবাসী।

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ হোসেন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, উপজেলা চত্বর ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা, এমন খবরে আমরা উপজেলা চত্বরে পর্যাপ্ত সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করে রেখেছি। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। ভাঙ্গা উপজেলার সকল রুটে অবরোধ শুরু করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রোকিবুজ্জামান জানান, উপজেলা প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা চলছে।'

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসার মো. মিজানুর রহমান জানান, 'একটি স্বার্থান্বেষী মহল আন্দোলনকারীদের নামে উপজেলা ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা উপজেলা চত্বরে নিরাপত্তা বিষ্টনীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গেজেট বাতিলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন।'

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে ফরিদপুর-৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদি ইউনিয়নকে কেটে নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নির্বাহী গঠিত ফরিদপুর-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে ইসির এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই তালিকা প্রকাশের পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ ও অবরোধ শুরু করে স্থানীয়রা। এরপর থেকে দফায় দফায় এই সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলছে।

এছাড়া, গত শুক্রবার দুই দফায় মহাসড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী। দ্বিতীয় দফ সড়ক অবরোধ চলাকালীন ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের বরাত দিয়ে বিষয়টি সমাধানে ৪৮ ঘন্টা সময় চেয়ে নিলে অবরোধ তুলে নেয় এলাকাবাসী। নির্ধারিত সময় পেড়িয়ে গেলেও বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য মহাসড়ক অবরোধে নামে ভাঙ্গা উপজেলার এলাকাবাসী। তবে এবার শুধু ওই দুই ইউনিয়নের লোকজন ই নয়, বরং ভাঙ্গা উপজেলার জনগণ নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষা করতে দলমত নির্বিশেষে সবাই রাস্তায় নেমে আসে।

এদিকে, এ অবরোধ চলাকালে কাউকে গ্রেফতার করা হলে থানা ঘেরাও সহ যে কোনো ধরণের কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে অবরোধ থেকে। এ মহাসড়ক অবরোধে শিক্ষক, ছাত্র, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নারী শিশু সহ সকল শ্রেনী পেশার মনুষ অংশ নিয়েছে। দাবি আদায় না হলে ঘরে ফিরে যাবেনা বলেও জানিয়েছেন অনুরোধকারীরা।

আজ বুধবার সকাল সাতটা থেকে অবরোধ শুরু হয় এবং এতে ভাঙ্গা ১২ ইউনিয়নের জনগণ যোগ দিয়েছেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা। অবরোধ প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত চলবে বলেও জানান তারা। এর মধ্যে সরকার আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে এ বিষয়ে ইসির দেওয়া প্রজ্ঞাপন বাতিল করলেই কেবল মাত্র অবরোধ তুলে নিবেন ভাঙ্গাবাসী। অন্যথায় এই লাগাতার অবরোধ চলবে বলে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভাঙ্গা উপজেলা ঘেরাও ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার করা ছাড়া প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি এবং আন্দোলনকাটীদের লাগাতার সড়ক অবরোধ চলছিলো। ভাঙ্গা চৌরাস্তার চারপাশে আটকা পড়ে আছে শত শত যানবাহন।

(আরআর/এএস/সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫)