E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ভাঙ্গায় পঞ্চম বারের মতো সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১৯:২৯:০৩
ভাঙ্গায় পঞ্চম বারের মতো সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন থেকে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে নিয়ে ফরিদপুর-২ আসন তথা নগরকান্দা থানায় অন্তভূক্ত করার ঘটনায় ভাঙ্গায় চৌরাস্তার চারদিকের মহাসড়ক অবরোধ করেছে ভাঙ্গা উপজেলাবাসী। এ নিয়ে এটি চতুর্থ দিন, টানা তৃতীয় দিন এবং পঞ্চম দফায় মহাসড়ক অবরোধ করলেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তাদের বিক্ষোভ মিছিল ও স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এতে ভাঙ্গা হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সম্পূর্ণ রুপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং হাজার হাজার যানবাহন এবং এর যাত্রীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে এ অবরোধ কর্মসূচিতে দুই ইউনিয়নবাসীর সঙ্গে ভাঙ্গা উপজেলার ১২ ইউনিয়নের লোকজন যোগ দিয়েছিলো। সুতরাং অখণ্ড ভাঙ্গা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নই এ আন্দোলনে এখন সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। তারা কিছুতেই ভাঙ্গাকে আলাদা হতে দিতে চান না। এসময় ভাঙ্গা উপজেলার সবাই ইসির নেওয়া সিদ্ধান্তকে ষড়যন্ত্রের অংশ আখ্যায়িত করে অতিসত্বর ওই ইসির দেওয়া প্রজ্ঞাপন বাতিল করার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনরত ভাঙ্গা উপজেলাবাসী তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

প্রখর রোদ ও তাপ উপেক্ষা করে অবরোধকারীরা তাদের লাগাতার এই আন্দোলনটিকে দেখছেন নিজেদের মাটি রক্ষার আন্দোলন, অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন, জীবন-মরণের আন্দোলন ও ভাগ্য নির্ধারণের আন্দোলন হিসেবে। তারা কিছুতেই ভাঙ্গা থেকে এক ইঞ্চি মাটিকে আলাদা দিবেন না বলেও জানান।

এদিকে, দেশের এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক অবরুদ্ধ থাকায় এই রুটে চলাচলকারী ২১ জেলার যাত্রীরা ঘন্টার পর ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যান বাহন ও জনগণ। তবে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার আশ্বাস না আশায় ভাঙ্গা উপজেলাবাসী এটিকে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করে আরও বলেন, 'এসব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ভাঙ্গা উপজেলাবাসী ঐক্যবদ্ধ থাকবে বলেও এসময় জানান তারা।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ হোসেন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'সম্প্রতি ভাঙ্গা উপজেলা চত্বর ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা, এমন খবরে আমরা উপজেলা চত্বরে পর্যাপ্ত সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করে রেখেছি। অবরোধকারীরা এখন পর্যন্ত শান্তিপ্রিয় অবস্থান বজায় রেখেছেন।' এছাড়া, ভাঙ্গা উপজেলার সকল রুটে অবরুদ্ধ ছিলো বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান জানান, 'উপজেলা প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানীয়দের আজও অনেক বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু আন্দোলনলারীরা প্রখর রোদ উপেক্ষা করে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।'

এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসার মো. মিজানুর রহমান জানান, 'একটি স্বার্থান্বেষী মহল আন্দোলনকারীদের নামে উপজেলা ঘেরাও সহ সহিং হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় আসলে। আমরা উপজেলা চত্বরে যৌথ বাহিনী নিয়োগ দিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

গেজেট বাতিলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট, শোনানির অপেক্ষায় আছে।'

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে ফরিদপুর-৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নির্বাহী গঠিত ফরিদপুর-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে ইসির এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই তালিকা প্রকাশের পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ ও অবরোধ শুরু করে স্থানীয়রা। এরপর থেকে দফায় দফায় এই সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলে।

এছাড়া, গত শুক্রবার দুই দফায় মহাসড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী। দ্বিতীয় দফ সড়ক অবরোধ চলাকালীন ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের বরাত দিয়ে বিষয়টি সমাধানে ৪৮ ঘন্টা সময় চেয়ে নিলে অবরোধ তুলে নেয় এলাকাবাসী। নির্ধারিত সময় পেড়িয়ে গেলেও বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য মহাসড়ক অবরোধে নামে ভাঙ্গা উপজেলার এলাকাবাসী। তবে এবার শুধু ওই দুই ইউনিয়নের লোকজন ই নয়, বরং ভাঙ্গা উপজেলার জনগণ নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষা করতে দলমত নির্বিশেষে সবাই রাস্তায় নেমে আসে।

এদিকে, এ অবরোধ চলাকালে কাউকে গ্রেফতার করা হলে থানা ঘেরাও সহ যে কোনো ধরণের কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে অবরোধ থেকে। এ মহাসড়ক অবরোধে শিক্ষক, ছাত্র, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নারী শিশু সহ সকল শ্রেনী পেশার মনুষ অংশ নিয়েছে। দাবি আদায় না হলে ঘরে ফিরে যাবেনা বলেও জানিয়েছেন অনুরোধকারীরা।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে অবরোধ শুরু হয় এবং এতে ভাঙ্গা ১২ ইউনিয়নের জনগণ যোগ দিয়েছেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা। অবরোধ প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত চলবে বলেও জানান তারা। এর মধ্যে সরকার আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে এ বিষয়ে ইসির দেওয়া প্রজ্ঞাপন বাতিল করলেই কেবল মাত্র অবরোধ তুলে নিবেন ভাঙ্গাবাসী। অন্যথায় এই লাগাতার অবরোধ চলবে বলে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এ রিপোর্ট লেখার সময় অবরোধ শেষ করে আন্দোলনকারীরা রাস্তা ছেড়ে যার যার বাড়ি ফিরছিলো। রাস্তা ক্লিয়ার করার কাজ করছিলো ভাঙ্গা এদিকে, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশ। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও ভাঙ্গা উপজেলাবাসী তাদের এই লাগাতার সড়ক অবরোধ আন্দোলন করবেন কিনা সেটি আন্দোলনকারীদের থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে, এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ হোসেন জানান, 'আন্দোলনকারীদের সাথে আমার কথা হয়েছে, তারা আমাকে জানিয়েছেন শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে ভাঙ্গায় চলমান সড়ক অবরোধ বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন। বাকীটা আগামীকাল (শুক্রবার) বোঝা যাবে।' এছাড়া, এ বিষয়ে আগামী রবিবার হাইকোর্টে শুনানী হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান ওসি আশরাফ।

(আরআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test