E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মানহীন রেস্টুরেন্টের ছড়াছড়ি, ভোক্তারা হচ্ছেন প্রতারিত

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ১৯:০৮:৫১
মানহীন রেস্টুরেন্টের ছড়াছড়ি, ভোক্তারা হচ্ছেন প্রতারিত

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : প্রশাসনের সঠিক তদারকির অভাবে বরিশাল নগরীতে মানহীন চাইনিজ রেস্টুরেন্টের কারণে প্রতিনিয়ত ভোক্তারা মানসম্মত খাবার না পেয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। এসব অধিকাংশ মানহীন রেস্টুরেন্টগুলোতে অতিরিক্ত দাম, পুরাতন তেল আর সস দিয়ে বাঁসি মাংস ও চিংড়ি মাছ দিয়ে মানহীন চাইনিজ খাবার পরিবেশন করার অভিযোগ থাকলেও বিষয়গুলো দেখার যেন কেউ নেই।

নগরীর হাসপাতাল রোডের সিলভার স্পুন রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মহিউদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, রেস্টুরেন্টে খাবারের দাম অন্য রেস্টুরেন্টগুলোর তুলনায় একটু বেশী। এখানে ক্রেতা কম থাকায় তারা এক পিচ মাংস কেটে তা দিয়ে দুই থেকে তিন আইটেমের খাবার তৈরি করে ক্রেতাদের সাথে প্রতারনা করছেন।

তিনি আরও বলেন, চিকেন ফ্রাইয়ের জন্য কেটে রাখা লেগ পিছ বা বুকের মাংস থেকে সলিড মাংস কেটে তা সুফে ব্যবহার করে নুডুলসের চিকেন স্লাইস, ক্যাসিনো সালাতের চিকেন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে চিকেন ফ্রাই আকারে ছোট হয়ে যায় এবং মাংস কম থাকে। এছাড়াও রেস্টুরেন্টটি মাংস দেয়ার পরিবর্তে মুরগির পাখনা ব্যবহার করে মাসালা চিকেন তৈরি করে থাকেন।

তিনি আরও বলেন-ক্যাসিনাট সালাতে কাজু বাদামসহ বেশ কিছু উপাদান দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে চিনা বাদাম, শসা, আর গাজরসহ সামান্য চিকেন দিয়ে কাস্টমারদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে প্রতারণা করা হচ্ছে। সস্তায় গন্ধ যুক্ত চাষের চিংড়ি ক্রয় করে তা ব্যবহার করে ফ্রাইসহ বিভিন্ন খাবার পরিবেশন করেন রেস্টুরেন্ট মালিক সেন্টু মিয়া।

আরিফুর রহমান নামের একজন ভোক্তা পুলিশ লাইনস এলাকার রাস্টিক নামের একটি রেস্টুরেন্টে প্রতারিত হয়ে অভিযোগ করে বলেন, অন্যান্য রেস্টুরেন্টগুলোর তুলনায় এখানে প্রায় তিনগুণ দাম রাখা হয়। খাবারের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। রাইস, চিকেন ফ্রাই, থাই স্যুফসহ কাবাব আইটেম মানের তুলনায় দাম অনেক বেশি।

একই অবস্থা নগরীর বগুড়া রোডের আড়ং রেস্টুরেন্ট শাখা, বটতলা এলাকার মুভিদা রেস্টুরেন্ট এবং পুলিশ লাইন্সের সিনামিন রেস্টুরেন্টের। প্রতিটি রেস্টুরেন্ট খাবারে প্রচুর পরিমাণে সস ব্যবহার করা হয়। ক্যামিক্যাল যুক্ত এসব খাবার প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে বরিশাল নগরীর বাসিন্দা ডা. আল আমিন বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারে ঘরের বিকল্প নেই। অতিরিক্ত বা পুরনো তেল বা মশলা ব্যবহার করে যে খাবারই রান্না করা হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। প্রোটিনজনিত খাবার ফ্রিজে রাখলে তা ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকে আক্রমণ করে। তাছাড়া রেস্টুরেন্টে মাছ কিংবা মাংস ফ্রিজে অনেকদিন থাকার ফলে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে।

জিয়াউর রহমান নামের নামের এক ভোক্তা বলেন, হোটেলগুলোর জুসবারেও একই অবস্থা। প্রতিটি জুসবারই ফ্লেভার ব্যবহার করা হচ্ছে। জুসের নামে কেমিক্যালযুক্ত ফ্লেভার খাওয়ানো হচ্ছে ক্রেতাদের। দুই-একটি দোকানে আম, মালটা, ড্রাগন ব্যবহার করা হলেও তা পরিমানে খুবই কম। এসব রেস্টুরেন্টগুলোর কাগজপত্র নবায়ন করা আছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিভিল ডিফেন্সের ছাড়পত্র, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক লাইসেন্স, জেলা প্রশাসক থেকে নিবন্ধন, পর্যটন কর্পোরেশনের লাইসেন্স, ভ্যাট স্যানিটারী ফায়ার এবং ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা নেই অধিকাংশ রেস্টুরেন্টের। এমনকি কয়েকটি রেস্টুরেন্টের কোন লাইসেন্সই নেই।

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশালের সহকারী পরিচালক ইন্দ্রানী দাস বলেন, কোন ভোক্তা যদি প্রতারিত হয়ে থাকেন এবং সে যদি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে রেস্টুরেন্টের মালিককে জরিমানা এবং জেল দেয়ার বিধান রয়েছে। বাকি যেসব বিষয়গুলো রয়েছে-সেদিকেও আমাদের নজরদারি থাকবে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এসব ব্যাপারে এখনও কেউ আমাদের কাছে কোনধরনের অভিযোগ করেননি। তবে বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test