E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সাতক্ষীরার কুখ্যাত চোরাচালানি মন্টুর কাছে জিম্মি যুবক ও কিশোররা

চোরাচালেনর ট্রলারে কাজ করতে গিয়ে ১১ দিন নিখোঁজ হাড়দ্দহের ইমরান

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৯:৩৩:০১
চোরাচালেনর ট্রলারে কাজ করতে গিয়ে ১১ দিন নিখোঁজ হাড়দ্দহের ইমরান

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এক কুখ্যাত চোরাকারবারির শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যেয়ে ১১ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ইমরান হোসেন নামের এক কিশোর। গত ৪ সেপ্টেম্বর তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ হাড়দ্দহ গ্রামের চোরাচালানি হাফিজুর রহমান মণ্টুর লোকজন।
নিখোঁজ হওয়া কিশোরের নাম ইমরান হোসেন (২১)। সে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ হাড়দ্দহ গ্রামের ইয়াছিন আলীর (বাবুল) ছেলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাড়দ্দহ গ্রামের কয়েকজন প্রবীন জানান, হাফিজুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত চোরাচালানের সাথে যুক্ত। চোরাচালানে ব্যবহৃত ট্রলারে কাজ করার জন্য গ্রামের এমন পরিবার নেই যাদের বাড়ির ছেলে তার কাছে কাজ করেনি। তার কথামত কাজ না করলে তারসহ পরিবারের সদস্যদের খেসারত দিতে হয়। এক সময় তিনি খুলনার কুখ্যাত চোরাচালানি সামছুরের দক্ষিণ হস্ত হিসেবে কাজ করতেন। সামছুর রহমান মামলায় মামলায় জর্জরিত হয়ে কয়েক বছর আগে ঢাকায় চলে গেলে হাফিজুর রহমান মণ্টু খুলনার চোরাচালানি জগতের ডন বনে যান। চোরাচালানি পণ্য খুলনা ও ঢাকাসহ বিদেশে পাঠানো শুরু করেন তিনি। এ কারণে হাফিজুর রহমান মণ্টুর কাজ করতে যেয়ে কেউ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে বা কোস্ট গার্ড এর গুলিতে মারা গেলে লাশ দাবি করা বা জীবন্ত ফিরিয়ে পাওয়ার দাবি করতে পারে না। কিছু টাকা নিয়েই তাদের চুপ থাকতে হয়। বাবা, মা ও পরিবারের সদস্যদের বোবা কান্না নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়। বর্তমানে চার থেকে ছয়টি বড় মাপের ট্রলারে করে ভারত থেকে শাড়ী, থ্রি-পিচ, কসমেটিকস ও রোল গোল্ড এর জিনিসপত্র দেশে ও মায়ানমারে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রতি সপ্তাহে তিনি কমপক্ষে চারটি ট্রলারে করে কোলকাতা থেকে বিশেষ পথে সুন্দরবন হয়ে মায়ানমারে ভারতীয় চোরাচালানি পণ্য পাঠিয়ে থাকেন বলে অনেকেই জানান।

মায়ানমার থেকে তিনি নেশা জাতীয় জিনিস দেশে আনেন। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালির মহীপুর থানাধীন সমুদ্রে ট্রলারসহ ১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার ভারতীয় থ্রিপিচ, শাড়ী ও কসমেটিকসহ কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়েন তার ভাই রবিউল ইসলামসহ ১৩ জন। এ ঘটনায় ২০২০ সালের পহেলা মার্চ মহিপুর থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ বি (১)/(বি) মামলা(১নং) হয়। ৫ মার্চ আদালতে ১৩ জনের দুই দিনের রিমা- (কারাফটকে) মঞ্জুর হলে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য না পাওয়ায় আবারো রিমা- আবেদন করেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মহিপুর থানার উপপরিদর্শক মোঃ মনিরুজ্জামান। গ্রেপ্তারকৃত ১৩ জনের মধ্যে নিজের ভাই রবিউল ছাড়াও আরো ১০ জন দক্ষিণ হাড়দ্দহ গ্রামের বাসিন্দা। তাদেরকে দীর্ঘদিন পটুয়াখালি কারাগারে থাকতে হয়। মামলাটি চলমান। এরপরও ওই গ্রামের কিশোর ও যুবকরা চোরাচালানির কাজ না করতে গেলে তাদেরকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। একপর্যায়ে দক্ষিণ হাড়দ্দহ গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ চোরাচালানি মন্টুর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। মণ্টু কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন দাবি করে হাফিজুর বলেন, সাত মাস আগে শহরতলীর মিলবাজার এলাকায় একটি বিলাসবহুল হোটেল বানিয়েছেন মণ্টু।

দক্ষিণ হাড়দ্দহ গ্রামের হাফিজুর রহমান নামের এক যুবক ইয়াছিন আলীর ছেলে ইমরানকে চাচাত ভাই দাবি করে বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর বৃহষ্পতিবার বাড়ি থেকে হাফিজুর রহমান মণ্টুর মালিকানাধীন ট্রলারে কাজ করতে যায়। একই সাথে যায় একই গ্রামের রহিমের ছেলে ছোট্টু, আব্দুল খালেকের ছেলে জাহিদুল ইসলাম, আব্দুল খালেক সরদারের ছেলে রজব আলী, শাহাজাহান আলীর ছেলে ইউসুফ আলীসহ ১২ জন। শ্রমিক যোগাড় ও চোরাই পথের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করেন মন্টুর ভাই বর্তমানে হাড়দ্দহ ওয়ার্ড বিএনপির নেতা রবিউল ইসলাম ও বরিশালের বাচ্চু। ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে কোলকাতা থেকে বিশেষভাবে ট্রলারে নিয়ে আসা ভারতীয় থ্রি-পিচ, শাড়ী, কসমেটিকসও ইমিটেশন হগনা সামগ্রীসহ বিশেষ পণ্য সুন্দরবনের মধ্যে গভীর সাগরে ভাসমান অবস্থায় হাফিজুর রহমান মন্টুর মালিকানাধীন ট্রলারে খালাস করা হয়। পরে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে খুলনা হয়ে বিশেষ পথে টেকনাফ থেকে মায়ানমারের সমুদ্র এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে ট্রলার নিয়ে তারা টেকনাফ থেকে মায়ানমারের দিকে এক ঘণ্টাব্যাপি দূরে অবস্থান করার একপর্যায়ে মায়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ভুখ-ের দিকে ট্রলার ঢুকতে না দেওয়ায় সেখানে অবস্থান করছিলো ট্রলারটি। এমন সময় কোষ্টগার্ড তাদেরকে থামাতে গুলি চালালে ইমরান গুলিবিদ্ধ হয়ে সাগরে পড়ে যায়। তার সঙ্গে ভোমরার আরো এক যুবক সাগরে লাফিয়ে পড়ে। এর আগে মন্টুর আরো তিনটি ট্রলার কমপক্ষে ৩০ জন শ্রমিকসহ মায়ানমারের নিকটবর্তী সাগরে আটকে যায়। বর্তমানে ইমরানকে বহনকারি ট্রলারের চালক ও শ্রমিকসহ ৪০ জন আত্মগোপনে রয়েছেন না কোস্ট গার্ড বা মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছেন তা তিনি জানেন না। ইমরান জীবিত আছে না মারা গেছে এমন কথা মন্টু বা তার ভাই রবিউলের কাছে জানতে চাইলে তাদেরকে এ নিয়ে কোথাও মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে তার বাবা ও মাকে। একপর্যায়ে ইমরানের বিনিময়ে ছয় লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে তার বাবা ও মাকে জানিয়েছে রবিউল। ইমরানকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তার মা কুলসুম বেগমসহ পরিবারের সসদ্যরা চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে হাফিজুর রহমান মণ্টুর কাছে রবিবার বিকেলে তার মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি দম্ভের সঙ্গে এ প্রতিবেদককে বলেন, ইমরান নিখোঁজ বা তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, আপনার ট্রলারে কাজ করতে গিয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ইমরানের বাবা যদি অভিযোগ করে থাকে তাহলে তার সঙ্গে আপনার কথা বলিয়ে দিচ্ছি। একপর্যায়ে ইমরান সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই, তিনি চোরাচালান বা কোন প্রকার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন বলে জানান। এর কিছুক্ষণ পর ইয়াছিন হোসেন বাবলু পরিচয়ে ০১৭১১-৩৮৬৩৮৯ নং মোবাইল নাম্বার থেকে এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে তিনি(সাংবাদিক) হাফিজুর রহমান মণ্টুর সঙ্গে তার ছেলে ইমরান সম্পর্কে কিছু জানতে চেয়েছিলেন কিনা!

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শামীনুল হক জানান, বিষয়টি নিয়ে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেবেন তিনি।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test