E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

এবার যশোরে ৭০৫টি শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ২৩:১৪:৩০
এবার যশোরে ৭০৫টি শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি

স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : এ বছর যশোরে ৭০৫ টি মন্দির ও মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি চলছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এবারের দুর্গাপূজা হওয়ায় বাড়তি নিরাপত্তায় জোর দিচ্ছে প্রশাসন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। পূজার নিরাপত্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে। এতে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে প্রতীমা বিসর্জন দিতে বলা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতীমা বিসর্জনের সময় বর্ধিত করার আহ্বান জানিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ।

জানা যায়, এ বছর যশোর জেলায় ৭০৫টি মন্দির ও মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা হবে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১৬২টি, অভয়নগরে ১২৭টি, কেশবপুরে ৯৮টি, মণিরামপুরে ৯৬টি, বাঘারপাড়ায় ৯১টি, ঝিকরগাছায় ৫৪টি, চৌগাছায় ৪৮টি ও শার্শায় ২৯টি মন্দির রয়েছে। ২০২৪ সালে জেলায় ৬৫২টি শারদীয় দুর্গাপূজা হয়েছিল। ২০২৩ সালে জেলা মোট মন্দির ও মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৭৩৩টি। সেই হিসেবে গত বছর ৮১টি মন্দিরে দুর্গাপূজা কমলেও এবার বেড়েছে ৫৩টি। গত বছর ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শারদীয় দুর্গাপূজা আয়োজনে নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ ছিল। কিন্তু প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় জেলায় সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপন হয়েছে। এ বছর এয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে পূজা হওয়ায় সরকার আগাম সতর্কতার পাশাপাশি নিরাপত্তায় জোর দিয়েছে।

রোববার যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি সভা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য ফ্রন্ট, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনাগুলো তুলে ধরে মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে সব নির্দেশনার সঙ্গে একমত হলেও সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে প্রতীমা বিসর্জনের বিষয়ে আপত্তি জানান সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতারা। তারা দাবি করেন, বিসর্জনের সময় বৃদ্ধি করে রাত ১০টা পর্যন্ত করার।

এ বিষয়ে মনিরামপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তরুণ সিংহ বলেন, প্রতীমা বিসর্জনের আগে নারীদের সিঁদুর দান ও মিষ্টিমুখ পর্ব শেষ সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। এরপর আজানের বিরতি থাকে। ফলে সন্ধ্যা ৭টার ভিতরে বিসর্জন দেয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা জোরাজুরি করেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দেয়। এজন্য বিসজনের সময় বৃদ্ধি করা জরুরী।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় বিসর্জনের সময় বৃদ্ধির দাবি করেছিলাম। পরে দেখছি তারা সন্ধ্যায় ৭টায় করেছেন। বিসর্জনের সময় বৃদ্ধি করে রাত ৯টা পর্যন্ত করার দাবি জানাচ্ছি। আশা করি প্রশাসনিকভাবে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। এছাড়াও পূজা মণ্ডপ সংলগ্ন বেহাল সড়কগুলো সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহবান জানান তিনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহ জুয়েল বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনার ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করবেন। পাহারা দিয়ে উৎসব পালন করতে হয়, এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা সবাই মিলেমিশে উৎসবমুখর পরিবেশে যার যার ধর্ম পালন করতে পারি, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’

জেলা জামায়াত ইসলামী আমীর অধ্যাপক গোলাম রসূল বলেন, কাদা ছোড়াছুড়ি ভুলে সবার সহযোগিতায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক। জামায়াত ইসলামের সর্বস্তরের নেতাকমীরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে আছে।’

যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন বলেন, আমাদের মাঝে মতপার্থক্য থাকলেও বিরোধ নেই। প্রশাসনের নির্দেশনা ও সবাই মিলেমিশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করবো। প্রতীমা বিসর্জনের সময় ১০টা পর্যন্ত বর্ধিত করার দাবি করছি।’

যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে শারদীয় দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একাধিক সভা করা হয়েছে। মন্দিরের সিসি টিভি ক্যামেরার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্দির ও মণ্ডপ কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। শারদীয় দুর্গাপূজার ৫দিন মণ্ডপ এলাকায় ইসলামী জলসা, ওয়াজ মাহফিল জাতীয় কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়া হবে না। একই সাথে গুজবের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নির্মল কুমার বিট, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চৌগাছা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ বলাই চন্দ্র পাল, শার্শার সভাপতি বৈদ্যনাথ দাস, ঝিকরগাছার সভাপতি দুলাল অধিকারী, সদরের সভাপতি রবিন পাল, কেশবপুর উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দুলাল সাহা, বাঘারপাড়া উপজেলা সভাপতি প্রণয় সরকার, যশোর পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক উৎপল ঘোষ, কেশবপুর উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সদস্য সচিব উৎপল দে, বৈষম্য বিরোধ ছাত্র আন্দোলন যশোরের সাবেক মুখপাত্র ফাহিম আল ফাত্তাহ প্রমুখ।

(এসএমএ/এএস/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test