E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ভাগ্য বদলে সাগর পথে ইতালি যাত্রা

লিবিয়ার জেলে আটক গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার ৩৮ যুবক

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ১৮:০৩:৩৩
লিবিয়ার জেলে আটক গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার ৩৮ যুবক

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : ইউরোপের দেশ ইতালিতে স্বপ্নের জীবনের খোঁজে লিবিয়ার উপকূল বেনগাজী থেকে সাগরপথে ঝুকিপূর্ন ভাবে ইতালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন বরিশালের ৩৮ জন যুবক। গত এগারোদিন থেকে তাদের কোন সন্ধান না পেয়ে চরম হতাশা ও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা। অবশেষে তাদের সন্ধান মিলেছে লিবিয়ার জেলখানায়। নিখোঁজের পর দালাল চক্রের বিভিন্ন এজেন্টদের সাথে যোগাযোগের করে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ইতালি প্রবাসী দালাল চক্রের সদস্য বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের জামাল মোল্লার ছেলে জাকির হোসেন মোল্লা। 

জাকির বলেন, এজেন্টরা তাকে (জাকির) জানিয়েছেন, লিবিয়ার উপকূল বেনগাজী থেকে ওই ৩৮ জনকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের সঙ্গে আরো একটি নৌকার ৩২ জনকে আটক করা হয়েছে। মোট ৭০ জন বাংলাদেশি আটক রয়েছেন। যার মধ্যে ওই ৩৮ জন ছাড়াও আরো ১১ জন গৌরনদীর বাসিন্দা রয়েছেন। আটককৃতদের মধ্যে বেশির ভাগ গৌরনদীর বার্থী ও খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। এরমধ্যে তার (জাকির) স্বজনও রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লিবিয়ার কারাগারে থাকা অসংখ্য যুবকদের স্বজনরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ও খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৩৮ জন যুবক ইউরোপের দেশ ইতালিতে স্বপ্নের জীবনের খোঁজে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে ওমরা হজ ভিসায় প্রথমে সৌদি আরবে গমন করেন। সেখান থেকে তারা দালাল সিন্ডিকেটের এজেন্টদের মাধ্যমে চোরাই পথে লিবিয়া গমন করেন। পরবর্তীতে চলতি মাসের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব যুবকরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। এরপর তাদের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সূত্রমতে, প্রত্যেক যুবক তাদের সহায় সম্ভল বিক্রিসহ ধারদেনা করে ১৫ লাখ টাকা করে তুলে দিয়েছেন দালাল সিন্ডিকেটের হাতে। এসব যুবকরা সবাই অবৈধভাবে ঝুকিপূর্ন ভাবে সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার জন্য এ টাকা তুলে দিয়েছেন বলেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরবর্তীতে দালাল সিন্ডিকেটের এজেন্টদের দেখানো পথে চলতি মাসের ৯ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার সময় রাত একটার দিকে বেনগাজীর উপকূলের গেম ঘর থেকে ঝূকিপূর্ন নৌকায় ভূমধ্যসাগর দিয়ে ওই ৩৮ জন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। পথিমধ্যে লিবিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে তারা আটক হন। ফলে ইউরোপে উন্নত জীবনের খোঁজে রওয়ানা হওয়া যুবকদের স্বপ্ন চরম দুঃস্বপ্নে রুপ নেয়।

অপরদিকে গত এগারোদিন যাবত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরায় নিখোঁজ যুবকদের পরিবারে মধ্যে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। অবশেষে দালাল চক্রের সদস্য ইতালি প্রবাসী গৌরনদীর খাঞ্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন মোল্লার ফোনের পর জানা গেছে, ওই যুবকরা লিবিয়ার জেলে বন্দিদশায় রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লিবিয়ার কারাগারে থাকা ৩৮ জন যুবকদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন-বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম, রহিম হাওলাদার, মো. অহিদুল হাওলাদার, সুজন খান, সবুজ মোল্লা, বড় দুলালী গ্রামের রাহুল সরদার, শাহ আলী বয়াতী, বাবুল বেপারী, তানভির হোসেন হৃদয়, মাসুদ তালুকদার, রাব্বী সরদার, রিয়াজুল বেপারী, বিপুল সরকার, শাহাদাত সিকদার, মো. রিমন মীর, তৌহিদ হাসান হৃদয়, উত্তর বাউরগাতী গ্রামের ফাহিম প্যাদা, ইব্রাহিম প্যাদা, শামিম সরদার, তাঁরাকুপি গ্রামের মুন্না বয়াতী, উত্তর মাদ্রা গ্রামের শান্ত দত্ত, বাঙ্গিলা গ্রামের সুমন কাজী, খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ডুমুরিয়া গ্রামের কামরুল বেপারী, ছোট ডুমুরিয়া গ্রামের মেহেদী হোসেন খান, পশ্চিম ডুমুরিয়ার বাবুল মোল্লা, পূর্ব সমরসিংহ গ্রামের আবুবক্কর মোল্লা, উত্তর মাগুরার সাদ্দাম বেপারী, আগৈলঝাড়ার আলী হোসেন বেপারী, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার সজিব বেপারী ও কালকিনির ফারহান হোসেন জয়।

আটক এক যুবকের বিধবা মা নাজমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন-আমার ছেলে বলেছিল মা জীবনে অনেক কস্ট করেছো, আর কষ্ট করতে হবেনা। এখন আমার বুকের মানিক কোথায় আছে, কেমন আছে জানিনা। অনেক কস্ট করে সহায় সম্ভল বিক্রিসহ ধারদেনা করে ছেলে তার স্বপ্নপূরণ করতে চেয়েছিলো। আটক অপর যুবকের পিতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাকির মোল্লার মাধ্যমে তার ছেলেকে ইতালি পাঠানো হয়েছে। এজন্য জাকিরকে ১৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এসব টাকা ব্যাংক হিসাব ও বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়েছে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে যে, ইতালি যেতে হবে তা আমাদের জানানো হয়নি।

জাকির হোসেনের বোন তানিয়া আক্তার জানিয়েছেন, তার ভাই (জাকির) কাউকে জোর করে সেখানে নিয়ে যায়নি। ঝুকিপূর্ন জেনেও সবাই স্বেচ্ছায় গেছেন। তিনি আরও জানান, যেকোন উপায়ে সকলকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য সিন্ডিকেটের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন তার ভাই জাকির। জেলে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে তাদের (জাকির) নিকট আত্মীয়রাও রয়েছেন।

গৌরনদী থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে বিষয়টি দেখেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test