E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রূপপুর গ্রীণসিটি প্রকল্পে বালিশ কান্ড

তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে অবনমিতকরণ এবং সহকারী প্রকৌশলী অপসারণ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৪ ১৭:২৬:১৪
তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে অবনমিতকরণ এবং সহকারী প্রকৌশলী অপসারণ

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিকের আবাসন গ্রীণসিটি প্রকল্পে ক্রয় প্রক্রিয়ার বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুজ্জামান চাকুরী হতে অপসারণ এবং তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ. কে.এম. জিল্লুর রহমানকে নিম্নপদে অবনমিতকরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জারী করা প্রজ্ঞাপনে অপসারণ ও অবমিতকরণের কথা বলা হয়েছে।

জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাময়িক বরখাস্তকৃত পাবনা গণপূর্ত সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুজ্জামান এবং এ. কে. এম. জিল্লুর রহমান তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) (সিভিল) রাজশাহী গণপূর্ত সার্কেলে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালে নির্মাণাধীন রূপপুর গ্রীণসিটি প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় এবং ভবনে উঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়টি ঐ সময়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত পৃথক তদন্ত কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক ব্যয়ে আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় এবং ভবনে উঠানোর কাজে পিপিআর ব্যতয় ঘটিয়ে দরপত্র আহবানের পূর্বেই মালামালের গ্রহণের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক অস্বাভাবিক ব্যয়ের প্রাক্কলন প্রস্তুতের সাথে সরাসরি জড়িত থেকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ উপবিধি (খ) অনুযায়ী “অসদাচরণ' এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মো. রফিকুজ্জামানকে 'অসদাচরণ' এর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের পরামর্শ মোতাবেক সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪ এর উপবিধি ৩ এর (গ) অনুযায়ী তাকে 'চাকুরি হতে অপসারণ' গুরুদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ. কে.এম. জিল্লুর রহমানকে তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক অস্বাভাবিক ব্যয়ের প্রাক্কলন, পরীা-নিরীা ও সুপারিশের সাথে সরাসরি জড়িত থেকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং “অসদাচরণ' এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের পরামর্শ মোতাবেক সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪ এর উপবিধি ৩ (ক) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ' এর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে 'নিম্নপদে অবনমিতকরণ' গুরুদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলার বিষয়ে তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ গ্রহণপূর্বক এবং রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ২৩/০৯/২০২৫ তারিখে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বারিত পৃথক আদেশের মাধ্যমে গুরুদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত: ২০১৯ সালে প্রকল্পের আবাসিক ভবনের জন্য ১৬৯ কোটি টাকার কেনাকাটায় পদে পদে দুর্নীতি হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রচারিতহয়। এতে বলা হয়, গণপূর্ত অধিদপ্তরে কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জোনভিত্তিক যে কেনাকাটা হয়ে থাকে, তার বার্ষিক একটি পরিকল্পনা থাকে। সেক্ষেত্রে ৩০ কোটি টাকার নিচে কেনাকাটা হলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুমোদন লাগে না, স্থানীয় পর্যায়েই করা যায়। এর সুযোগ নিয়ে ১৬৯ কোটি টাকার কাজ ৬টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। ফলে প্রতিটি কাজের মূল্য ৩০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন পড়েনি। সেখানে প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর প্রতিটি বালিশ আবাসিক ভবনের খাটে তোলার মজুরি দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা। কভারসহ কমফোর্টারের (লেপ বা কম্বলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত) দাম ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ টাকা। যদিও এর বাজারমূল্য সাড়ে ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। একইভাবে বিদেশি বিছানার চাদর কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৯৩৬ টাকায়। এর বাজারমূল্য অবশ্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

পাঁচটি ২০ তলা ভবনের জন্য এসব কেনাকাটা হয়েছে। প্রতিটি তলায় রয়েছে একাধিক ফ্যাট। প্রতিটি ফ্যাটের জন্য কমফোর্টার শুধু বেশি দামে কেনাই হয়নি, কেনার পর দোকান থেকে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছাতে আলাদা ট্রাক ব্যবহার করা হয়। মাত্র ৩০টি কমফোর্টারের জন্য ৩০ হাজার টাকা ট্রাকভাড়া দেখানো হয়েছে। আর একেকটি কমফোর্টার খাট পর্যন্ত তুলতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ হাজার ১৪৭ টাকা। কমফোর্টার ঠিকঠাকমতো খাট পর্যন্ত তোলা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য তত্ত্বাবধানকারীর পারিশ্রমিক দেখানো হয়েছে প্রতিটির ক্ষেত্রে ১৪৩ টাকা। ঠিকাদারকে ১০ শতাংশ লাভ ধরে সম্পূরক শুল্কসহ সব মিলিয়ে প্রতিটি কমফোর্টারের জন্য খরচ দেখানো হয়েছে ২২ হাজার ৫৮৭ টাকা। শুধু কমফোর্টার নয়, চাদরের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে। ৩০টি চাদর আনতে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে। আর ভবনের নিচ থেকে খাট পর্যন্ত তুলতে প্রতিটি চাদরের জন্য মজুরি দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা।

(এসকেকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test