E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সাতক্ষীরা

২৩ বছরেও উদঘাটন হয়নি সিনেমা হল ও স্টেডিয়ামে বোমা হামলার রহস্য

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৮:২৪:৪৬
২৩ বছরেও উদঘাটন হয়নি সিনেমা হল ও স্টেডিয়ামে বোমা হামলার রহস্য

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আজ থেকে ২৩ বছর আগে ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দিনের সন্ধ্যা সাতটার পর সাতক্ষীরায় গুড়পুকুর মেলা চলাকালে মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে শহরের রক্সি সিনেমা হলে এবং সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামের দি লায়ন সার্কাস প্যান্ডলে পর পর দু’টি শক্তিশালী বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ওই বোমা হামলায় সাতক্ষীরা শহরের লাবসার মোকারম হোসেনের ছেলে স্কুল ছাত্র কাজী মেফতাউল আলম মুক্ত (১৫), জেলার দেবহাটার চকমোহাম্মদআলী গ্রামের আনিসুর রহমানের ছেলে হাফিজুল ইসলাম পিন্টু (২৫) ও শহরের ইটাগাছার ডাক্তার আমিরুল ইসলামের স্ত্রী ডাক্তার সেলিনা পারভীন (৩০) নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। আহতদের অনেকেই পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছেন। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার ২৩ বছর পেরিয়ে গেলেও মূল রহস্য জানতে পারেনি সাতক্ষীরাবাসী।

২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটার পরপরই মেলা চলকালীন রক্সি সিনেমা হল ও সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে দি লায়ন সার্কাস প্যান্ডেলে ১১ মিনিটের ব্যবধানে পরপর কয়েকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়।
সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, রক্সি সিনেমা হলে এবং স্টেডিয়ামে লায়ন সার্কাসে বোমা হামলার ঘটনায় ওই দুই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাতক্ষীরার গোয়েন্দা, অপরাধ ও তদন্ত সংস্থার পুলিশ পরিদর্শক দুর্গাপদ ঘোষ ও সুখরঞ্জন সমাদ্দার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এ ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে ২০০৪ সালের প্রথম দিকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আদালতের নির্দেশে পুনঃতদন্তে খুলনার সহকারী পুলিশ সুপার মাওলা বক্স ২০০৪ সালের শেষের দিকে আদালতে এ দু’টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে মামলার দু’টির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।এদিকে, ২০০৬ সালে টাঙ্গাইলে একটি হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় জেএমবি’র বোমারু মিজান, হাফেজ আব্দুর রাকিব ও শায়খ সাইফুল ইসলাম। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের নির্দেশে তারা ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার গুড়পুকুরের মেলায় বোমা হামলা চালায় বলে স্বীকার করে। ফলে ২০০৬ সালে মামলাটি আবারো প্রাণ ফিরে পায়। গোয়েন্দা,অপরাধ ও তদন্ত শাখা আবারও তদন্তকালে দেবহাটার শিমুলিয়া গ্রামের মুজিবর রহমান ঘরামীকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। যদিও পরে উত্তরাস্থ র‌্যাব-১ অন্য একটি মামলায় রিমান্ডে নিয়ে গুড়পুকুরের মেলায় বোমা হামলায় মুজিবর রহমান ঘরামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা আমির হোসেন আমু সার্কাস প্যান্ডেলে বোমা হামলা মামলায় বোমারু মিজান ও হাফেজ আব্দুর রাকিবের নামে আদালতে বিস্ফোরক দ্রব্য ও পেনাল কোর্ড আইনে পৃথক দু’টি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। যদিও অভিযোগ দাখিলের কয়েক মাস আগে মীর্জাপুরে পুলিশের গাড়ি থেকে বোমারু মিজান ও হাফেজ রাকিবকে জেএমবি ছিনিয়ে নেয়। পরে বোমারু মিজানকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে হাফেজ আব্দুর রাকিব মারা যায়।

এদিকে দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ২০১১ সালে সীমিত আকারে সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে মেলার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও সাতক্ষীরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকে প্রতি বছর সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সীমিত আকারে হলেও তাতেই বিনোদনের আনন্দ খুঁজেছে সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। এ বছর মেলার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়ে জেলা প্রশাসক তা বন্ধ করে দেয়।

সাতক্ষীরার চারশত বছরের ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলা বন্ধ করায় মেলা আয়োজনের দাবীতে মানববন্ধন করে সাতক্ষীরাবাসী। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা শহরের নিউমার্কেটের সামনে জেলা সম্মিলিত ব্যবসায়ী মহল ও সাতক্ষীরাবাসীর আয়োজনে প্রাক্তন মন্ত্রী ডা. আফতাবুজ্জামানের সভাপতিত্বে ওই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার কিশোরী মোহন সরকার, সিনিয়র সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি, সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান রাসেল, জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলি নুর খান বাবুল, উদীচী সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এড. শেখ আজাদ হোসেন প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরার যতগুলি ঐতিহ্য রয়েছে তার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুর মেলা অন্যতম। সাতক্ষীরার মানুষের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য লালন করে চলেছে গুড় পুকুরের মেলা। সারা বছর এই ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুর মেলাকে কেন্দ্র করে এই দিনটির অপেক্ষা করে থাকে সাতক্ষীরাবাসী। সেই মেলাটি আজ নানামুখী ষড়যন্ত্রের শিকার। মেলাটি বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে একটি মহল। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্য মেলা, বইমেলাসহ বিভিন্ন ধরনের মেলা চলছে। কোথাও মেলা বন্ধ হয়নি। শুধু সাতক্ষীরা জেলায় ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুরের মেলা বন্ধ করা হয়েছে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test