E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পুলিশ হেফাজতে আসামি নির্যাতন

মাদারীপুরে ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার আদেশ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৮:৪২:৫৪
মাদারীপুরে ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার আদেশ

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদকসহ তিন যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশী হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়ায় মাদারীপুরের রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার ঘোষসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়ে। পরে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রিভিশন দাখিল করেছেন। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার স্বরমঙ্গল এলাকায় মাদক উদ্ধার অভিযানে যায় রাজৈর থানা পুলিশ। অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাজৈর থানার পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার ঘোষ। অভিযানে আরো ছিলেন রাজৈর থানার এসআই তরিকুল ইসলাম, এসআই এ এইচ এম কামরুজ্জামান, এএসআই জাহিদুল ইসলামসহ সঙ্গীয় সদস্যরা। এসময় ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতা ইলিয়াস খালাসি, দুবাই প্রবাসী সুজন মোল্লা ও স-মিলের শ্রমিক সুমন খাঁ’কে আটক করে। তাদের তল্লাসি করে ৫০ পিচ ইয়াবা উদ্ধারের দাবি করেন পুলিশ। এই ঘটনার পরদিন এসআই এ এইচ এম কামরুজ্জামান বাদী হয়ে রাজৈর থানায় আটকদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেন। পরে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে আসামিপক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, গ্রেফতার তিনজনকে থানায় নিয়ে শারিরিক নির্যাতন করে পুলিশ। এরমধ্যে ইলিয়াস খালাসির বাম হাতের কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত পিস্তলের বাট দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। আর বাম পায়ের উরুতে বুটের লাথি মারা হয়েছে। এ সময় বিচারক আসামির শরীরের দৃশ্যমান জখম দেখতে পান। তাৎক্ষণিক মাদারীপুর জেলার সিভিল সার্জণকে আসামির চিকিৎসা দেয়া ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন।

মাদারীপুর সিভিল সার্জণ ডা. মোহাম্মদ শরিফুল আবেদীন কমল আসামিকে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়ায় মেডিকেল রিপোর্ট ১৯ সেপ্টেম্বর আদালতে প্রদান করেন। এরইপ্রেক্ষিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এলিয়াম হোসেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রিভিশন দাখিল করেছেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা। যা আগামী মঙ্গলবার শুনানীর জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

ইলিয়াস খালাসির ভাবী তানজিলা বেগম বলেন, আমার দেবরসহ তিনজনকে থানায় নিয়ে বেদম মারধর করেছে পুলিশ। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে আমরা ন্যায় বিচার চাই।

ইলিয়াস খালাসির স্ত্রী শাহিদা আক্তার বলেন, পুলিশ আমার স্বামীসহ তিনজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় একদফা মেরেছে। আবার থানায় নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় বাম হাতের কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত পিস্তলের বাট দিয়ে আঘাত করেছে। এছাড়াও বাম পায়ের উরুতে বুটের লাথি মারা হয়েছে। এই ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে করে পুলিশ এমন ঘটনা ঘটাতে না পারে।

আসামিপক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান বলেন, পুলিশের হেফাজতে নিয়ে আসামিদের নির্যাতনের কোন এখতিয়ারের সুযোগ নেই। পুলিশ যেটা করেছে সেটি অন্যায় করেছে। ভিকটিমের জবানবন্দি শুনে আদালত অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে রিভিশন দাখিলও হয়েছে। আশা করছি জেলা ও দায়রা জজ আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। এতে আমরা ন্যায় বিচার পাবো।

মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার মাইনুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তা সঠিকই ছিল। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি রিভিশন করা হয়। যার শুনানী মঙ্গলবার হবে। ওইদিনই আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।

(এএসএ/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test