E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

লাইসেন্সবিহীন এফ.ভি. কোহিনুর-২ বারবার সাগরে, নীরব মৎস্য দপ্তর

২০২৫ অক্টোবর ০৩ ১৭:৫২:৩৫
লাইসেন্সবিহীন এফ.ভি. কোহিনুর-২ বারবার সাগরে, নীরব মৎস্য দপ্তর

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে এফ.ভি. কোহিনুর-২ নামক একটি ফিশিং ট্রলার লাইসেন্স ও সেইলিং পারমিশন ছাড়াই অন্তত পাঁচবার বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মাছ আহরণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জাহাজটির মালিকের লিখিত অভিযোগ সত্ত্বেও চট্টগ্রাম সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। বরং দায়িত্বে অবহেলার কারণে দখলদার চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

ট্রলারের মালিক মো. বেলাল উদ্দিন জানান, শাহ আলম নামের এক ব্যক্তি তার মালিকানাধীন কোহিনুর-২ অবৈধভাবে দখল করে লাইসেন্সবিহীন অবস্থায় একাধিকবার সাগরে মাছ ধরেছেন। বিষয়টি তিনি সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক মো. আবদুস ছাত্তারকে লিখিতভাবে জানালেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিনি অভিযোগ করেন, “লাইসেন্স ছাড়া ৫ বার ট্রলার সাগরে গেছে, অথচ মৎস্য দপ্তর, নৌ পুলিশ কিংবা কোস্টগার্ড কেউই পদক্ষেপ নেয়নি। এতে বোঝা যায়, দখলদাররা ভেতরে ভেতরে শক্তিশালী মহলের আশ্রয় পাচ্ছে।”

অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, কোতোয়ালী থানা ও মেরিন হোয়াইট ফিশ ওনার্স এসোসিয়েশনের সালিশে উভয় পক্ষের মধ্যে কোটি টাকার সমঝোতা হলেও সেটি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। তবুও গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভোরে আবারও কোহিনুর-২ সাগরে ফিশিংয়ে যায়।

মালিক বেলাল উদ্দিন দাবি করেন, ভাড়াটিয়ারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মৎস্য দপ্তরের অনুমতি পাওয়ার কথা বলেছেন। অথচ প্রমাণস্বরূপ তার কাছে ফোন কলের রেকর্ডও রয়েছে। আগেও তিনি আগ্রাবাদ মৎস্য দপ্তরে মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন, কিন্তু সেখান থেকেও কোনো আইনি ব্যবস্থা হয়নি।

চট্টগ্রাম সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মশিউর রহমান স্বীকার করেছেন, ট্রলারটির লাইসেন্স দুই বছর আগে বাতিল করা হয়েছিল এবং বর্তমানে বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে শুনানাধীন। তিনি জানান, “আমাদের অনুমতি ছাড়াই ভাড়াটিয়ারা সাগরে চলে গেছে। আমরা কোস্টগার্ড ও নেভীকে জানিয়েছি, কিন্তু জাহাজটি ধরা সম্ভব হয়নি।”

তবে মালিক বেলালের অভিযোগ— দপ্তরের পরিচালক মো. আবদুস ছাত্তার ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া মেলেনি।

কোস্টগার্ডের কমান্ডার মো. ওমর ফারুক জানান, লাইসেন্স ইস্যু ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া মৎস্য দপ্তরের দায়িত্ব। কিন্তু দপ্তরের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় জাহাজটি এখনো অবাধে সমুদ্রে যাতায়াত করছে।

আইন অনুযায়ী লাইসেন্সবিহীন কোনো ট্রলার সাগরে যাওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। অথচ কোহিনুর-২ এর মতো একটি জাহাজ বারবার সাগরে গিয়ে বিপুল পরিমাণ মাছ আহরণ করছে— অথচ মৎস্য দপ্তর দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। এতে কেবল সামুদ্রিক সম্পদই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, আইনের শাসনকেও উপহাস করা হচ্ছে।

স্থানীয় জেলে ও মালিকপক্ষের অভিযোগ, দখলদার চক্র মৎস্য দপ্তরের ভেতরের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই এতটা সাহসী হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে— লাইসেন্সবিহীন ট্রলার যদি বারবার সাগরে যেতে পারে, তবে আইনের প্রযোজন কোথায়? আর মৎস্য দপ্তর নামক সরকারি প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা আসলে কী?

(জেজে/এসপি/অক্টোবর ০৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test