E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বেতন নেন সরকারি হাসপাতালের, চিকিৎসা করেন হার্ট ফাউন্ডেশনে

২০২৫ অক্টোবর ০৮ ১৭:২৬:৫৬
বেতন নেন সরকারি হাসপাতালের, চিকিৎসা করেন হার্ট ফাউন্ডেশনে

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শেখ ফয়সাল আহম্মেদ স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি নামমাত্র হাসপাতালে সময় দিয়ে অধিকাংশ সময় হাসপাতালের বিপরীতে নিজের মালিকানাধীন হার্ট ফাউন্ডেশন এণ্ড ইনসেনটিভ কেয়ার হাসপাতালে কাটান বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া হাসপাতাল থেকে দালাল মারফত রোগী ভাগিয়ে আনাসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, একই জেলায় জন্ম ও কর্মস্থল হওয়ার সুবাদে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শেখ ফয়সাল আহম্মেদ কয়েক বছর আগে সদর হাসপাতালের সামনে ব্যক্তিগতভাবে হার্ট ফাউন্ডেশন এণ্ড ইনসেনটিভ কেয়ার হাসপাতাল নামে একটা বেসরকারি ক্লিনিক গড়ে তোলেন। সেবার ব্রত বাদ দিয়ে তিনি কসাই হয়ে ওঠেন। এজন্য তিনি জেলা জুড়ে গ্রাম ডাক্তারদের মোটা অংকের কমিশন দিয়ে হাসপাতালের পরিবর্তে তার ক্লিনিকে রোগী ভর্তি ও পরবর্তী প্যাথালজি পরীক্ষা ও অপারেশন করিয়ে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে চুক্তি বহির্ভূতভাবে মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকেন। ত্রুটিপূর্ণ অপারেশনে মারা যাওয়া রোগীদের হামলা ও মামলার হাত থেকে বাঁচতে মৃত রোগীর মুখে অক্সিজেনের মাক্স পরিয়ে উন্নত চিকিৎসার নামে নিজেদের এম্বুলেন্সে খুলনা অথবা ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় রোগীর স্বজনদের কান ধরে উঠবস করানোসহ মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। গত গত জুলাই, আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে তাকে ডেকে এনে কোন প্রকারে ১২ দিন এক ঘণ্টা করে অফিসে রাখা গেছে বলে বায়োমেট্রিক হাজিরা রেজিস্ট্রার থেকে জানা গেছে। এনিয়ে প্রতিবাদ করলে সিভিল সার্জনসহ মেডিকেল অফিসারদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমান কয়েকজন ভ্যানচালক জানান,কমপক্ষে হাফ ডজন দালাল হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে তাদের মাধ্যমে হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান। রোগী বিশেষ তাদেরকে দুইশত থেকে পাঁচশত টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া হাসপাতালের প্যাথালজি বিভাগ থেকে রোগী হার্ট ফাউন্ডেশনে পাঠানো হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, ডাঃ শেখ ফয়সাল আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সাতক্ষীরা জেলা কমিটির গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে এর আগে তুলে নিয়ে সাংবাদিক পেটানো, গ্রাম ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করে রোগীদের অঙ্গহানি, ভুল চিকিৎসায় অন্তঃসত্ত্বা হত্যাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ আছে। ক্লিনিকের বিল পরিশোধ না করলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাশ আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

তারা আরো জানান, সদর হাসপাতালে কয়েকবছর ধরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কর্মরত সাতজনকে রোগীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করা,হাসপাতালের গজ ও ব্যান্ডেজ বিক্রি করাসহ হার্ট ফাউন্ডেশনে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে কমিশন নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় তাদেরকে কর্মচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি সিভিল সার্জন আঃ সালাম কার্যকর করায় ক্ষুব্ধ হন ডাঃ শেখ ফয়সাল আহম্মেদ ও স্বেচ্ছাসেবকরা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে ডাঃ ফয়সাল সিভিল সার্জনের অফিসে যেয়ে এ নিয়ে গালিগালাজ ও মারমুখী আচরন করেন আঃ সালামকে। এ বিষয়ে ৫ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন সিভিল সার্জন। বিষয়টি জানতে পেরে কিছু ভাড়ায় খাটা লোকজনকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে সোমবার সিভিল সার্জন এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সিভিল সার্জনের অফিস ঘেরাও করানোর ব্যবস্থা করেন ডাঃ শেখ ফয়সাল আহম্মেদ।

সিভিল সার্জন ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবদুস সালাম জানান, গত তিন মাসে ১২ দিন অফিস করেছেন আরএমও ডাঃ ফয়সাল। জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাসপাতালে তথাকথিত স্বেচ্ছাসেবক বা দালালদের অপসারণের নির্দেশ বাস্তবায়ন, যথাযথ অফিস না করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ডাঃ ফয়সাল তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে গালিগালাজ করলে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করেন। এতেই ক্ষুব্ধ ডাঃ ফয়সাল তার বিরুদ্ধে কিছু লোক ভাড়া করে তার বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছেন।

সদর হাসপাতালের আবাসক মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ ফয়সাল আহমেদ নিজেকে আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক বা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, তিনি সব সময় বায়োমেট্রিক হাজিরা দিতেন না। প্রতিদিন হাসপাতালে রাউন্ড দেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের রাউন্ড খাতায় তার সাক্ষর রয়েছে। একজন আয়ুর্বেদ ও একজন হোমিও চিকিৎসককে হাসপাতালে রোগী দেখার সুযোগ করে দেওয়া নিয়ে সিভিল সার্জনের সঙ্গে তার বচসা হয়। তার বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করানো বা কোন ধরণের অনিয়ম ও দূর্ণীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন তিনি। সাংবাদক শাহ আলমের সঙ্গে সিভিল সার্জন এর বিরোধকে কেন্দ্র করে এ ধরণের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ০৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৮ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test