E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কেন্দুয়ায় ব্যাস্ততম সারাদিন

২০২৫ অক্টোবর ১৫ ১৯:৩৭:৪৫
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কেন্দুয়ায় ব্যাস্ততম সারাদিন

কেন্দুয়া প্রতিনিধি : নেত্রকোনার নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ্ আল মাহমুদ জামান লোকজ সংস্কৃতির রাজধানী কেন্দুয়ায় ব্যাস্ততম সারাদিন কাটিয়েছেন। ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে প্রথম বারের মত কেন্দুয়ায় আসেন তিনি। 

প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা ফুলের তোরা দিয়ে তাকে গভীর ভালোবাসায় বরণ করেন। প্রথমে তিনি কেন্দুয়া থানা পরিদর্শনে যান। সেখানে কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান হয়।

সকাল ১১ টায় কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিভাগীয় কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বীরমুক্তিযোদ্ধা, গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষকমন্ডলী ও সুধিজনের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমদাদুল হক তালুকদা এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি এক নজরে কেন্দুয়ার চিত্র তুলে ধরে জেলা প্রশাসনকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।

পরে সমগ্র কেন্দুয়াবাসীর পক্ষে উপজেলা মিডিয়াক্লাবের সভাপতি (চারণ সাংবাদিক পুরষ্কার প্রাপ্ত) সমকাল সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মার সম্পাদিত সম্মাননা মানপত্র পাঠ করে জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেন। মতবিনিমিয় সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো: আল আমিন সরকার, কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান, কেন্দুয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নূরুল হক ভূঞা, কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: মুজিবুর রহমান ভূঞা মজনু, কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো: সেকুল ইসলাম খান, রিপোটার্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি মো: লুৎফুর রহমান ভূঞা, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা মো: হারুনুর রশিদ ফারুকী, জামায়াত ইসলামী কেন্দুয়া শাখার আমির আবু সাদেক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মজনু রহমান খন্দকার, সাবেরুনেচ্ছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মোখলেছুর রহমান বাঙ্গালী, কেন্দুয়া কলেজ অধ্যক্ষের প্রতিনিধি কামরুল হাসান খান পাঠান, পৌর যুবদলের সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম খান শান্তি, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম কেন্দুয়া শাখার সভাপতি মো: সালাউদ্দিন সালাম, উপজেলা মিডিয়াক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরা আক্তার লিলি প্রমুখ।

সভাশেষে জেলা প্রশাসক কেন্দুয়া রিপোটার্স ক্লাব, কেন্দুয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন। তিনি সাংবাদিকদের নির্ভয়ে বস্তু নিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহবান জানান। এর আগে তিনি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে গাছের চারা তুলে দেন। এক পর্যায়ে অসুস্থ বাউল শিল্পী সালাম সরকারের শর্যাপাশে যান। সেখানে তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। দুপুরের খাবারের পর ছুটে যান সাজিউড়া গ্রামে। সেখানে ৮৪ বছর পর কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে নির্মিত বাউল কবি দীন শরৎ স্মৃতি ফলক উন্মোচন করেন। এরপর অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী নলীনি রঞ্জন সরকারের স্মৃতি বিজড়িত পৈতৃক বাড়িটি ঘুরে দেখেন এবং সংরক্ষণের পরামর্শ দেন। তিনি শরৎ ভিটায় গিয়ে সেখানেও তাঁর স্মৃতি রাখার পরামর্শ দেন।

সাজিউড়া লোকজ সংগ্রহশালা ও গণপাঠাগার পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে উত্তরীয় পরিয়ে ফুলের তোরা দিয়ে বরণ করেন অপু রানী বিশ্বাস, প্রিয়াংকা শর্মা তুলি ও পাঠাগারের উপদেষ্ঠা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নূরুল হক ভূঞা। সেই অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। সন্ধ্যার পর কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ চত্তরে নির্মিত জালাল মঞ্চ উদ্বোধন করেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাঈম উল ইসলাম চৌধুরীর সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার। তিনি বলেন, লোকজ সংস্কৃতির রাজধানী কেন্দুয়া।

এই কেন্দুয়ায় জন্ম নিয়েছেন ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রহক চন্দ্রকুমার দে, বাউল সাধক জালাল উদ্দিন খা, বাউল কবি দীন শরৎ, লোক কবি রওশন ইজদানী, লোকজ শিল্পী আব্দুল কদ্দুস বয়াতীসহ অনেক গুণী মনীষী। তিনি বলেন, চন্দ্র কুমার দে লোক সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। যেজন্যে দেশে বিদেশে লোক সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে গবেষনা চলছে। জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, লোকজ সংস্কৃতির রাজধানী কেন্দুয়া।

এই কেন্দুয়ায় একটি লোক সাহিত্য সংস্কৃতির একাডেমি স্থাপনের দাবির সাথে একমত হয়ে আমিও বলবো এই একাডেমি হলে আরও বহু প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে এবং শিল্পীদের কর্মসংস্থানও বাড়বে। পরে জালাল মঞ্চে পরিবেশিত হয় বাউল গান, পালা গান। বাউল গান পরিবেশন করেন প্রখ্যাত বাউল শিল্পী সুনীল কর্মকার, বাউল শিল্পী সালাম সরকার, মুকুল সরকার ও দেশ বরেণ্য পালাগায়ক ও লোক শিল্পী আব্দুল কদ্দুস বয়াতী। তিনি নেচে গেয়ে অঙ্গভঙ্গিতে দর্শকদের মন হাসিখুশিতে ভরে দেন। এভাবেই সকাল থেকে শুরু করে রাত ১০ টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে কেন্দুয়ায় প্রথম আগমনের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন।

(এসবি/এসপি/অক্টোবর ১৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৫ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test