E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ফরিদপুরে যৌতুকের জন্য পাশবিক নির্যাতনের শিকার সেই গৃহবধুর ঢাকায় মৃত্যু

২০২৫ অক্টোবর ১৭ ১৩:৫৮:১২
ফরিদপুরে যৌতুকের জন্য পাশবিক নির্যাতনের শিকার সেই গৃহবধুর ঢাকায় মৃত্যু

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ : ফরিদপুরে পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য শ্বশুরবাড়িতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার স্থানীয়ভাবে তুমুল আলোচিত সেই গৃহবধু কাকলী বেগম (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের বসুরনসিংহদিয়া গ্রামে তাঁর বাবার বাড়ীতে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি। এসময় তাঁর ছোট সন্তান ছয় বছরের মেয়ে মীম (৫) ছাড়া শ্বশুরবাড়ির কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। একমাত্র ছেলে ইব্রাহিম (১৫)কে নিয়ে নিহত কাকলীর স্বামী এরশাদ শেখ (৪০) পলাতক থাকায় তারা কেউ দাফনের সময় কাকলীকে শেষ বিদায় জানাতে আসেননি।

এর আগে, বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রায় একমাস সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকা নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। নিহত কাকলীর বেগমের লাশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরে তাঁর বাবার বাড়ীতে পৌঁছালে সেখানে নেমে আসে শোকের মাতম। এলাকাবাসী, আত্নীয় স্বজন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ ওই এলাকার প্রায় সকল শ্রেণী পেশার জনগণ তাঁর জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে, ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের মল্লিকপুরের বিন্নাকান্দি শ্বশুরবাড়িতে যৌতুকের জন্য পাশবিক নির্যাতনের শিকার গৃহবধু কাকলী ঘাস মরা বিষ পানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফেসবুক কনটেন্টে ও বেশ কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যমও এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বর্বরোচিত পাশবিক নির্যাতন ও যৌতুক দাবি বিষয়ক যাবতীয় তথ্যের বর্ণনা তুলে ধরে ফরিদপুর কোতয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর কাকলীয় বাবা মো. আক্কাছ আলী পাটোয়ারী। নারী ও শিশু নির্বাচন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ১১/গ ধারা মোতাবেক করা ওই মামলায় (মামলা নং ৫৭, তারিখ- ২৮ সেপ্টেম্বর' ২০২৫ ইং) ভুক্তভোগী কাকলী বেগমের স্বামী এরশাদ শেখ (৪০) কে প্রধান আসামি করে এবং এরশাদের মা জমেলা খাতুন (৬০) ও বাবা তোঁতা শেখ (৬৮)কে যথাক্রমে দুই ও তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে।

ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদ উজ্জামান 'উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ'কে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,'মামলাটি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।'

এ বিষয়ে স্থানীয় জনতার সাথে কথা বলে এবং ওই মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শ্বশুরবাড়িতে হঠাৎ দাবি করা পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুকের দিতে অস্বীকৃতি জানালে, কাকলী বেগম (৩৫) এর ওপর তাৎক্ষণিকভাবে অমানবিক পাশবিক নির্যাতন চালায় তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি। চালানো হয় মানসিক নির্যাতন, করা হয় বিশ্রি ভাষায় গালিগালাজ। প্রায় ১৪/১৫ বছর আগে কাকলী ও এরশাদ তাদের বৈবাহিক জীবনের সূচনা করার কিছুদিন পর নতুন বৌয়ের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন এরশাদ শেখ। পরে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে এরশাদের দাবিকৃত পাঁচ লক্ষ টাকা দেন কাকলীর বাবা। যে টাকা দিয়ে জামাই এরশাদ দুবাই যান। দুবাই থেকে সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে দেশে আসেন প্রবাসী জামাই এরশাদ শেখ।

এরপর, সম্প্রতি আবারও বিদেশ যাওয়ার কথা বলে কাকলীর নিকট আরও পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন এরশাদ। কিন্তু এবার আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় কাকলী তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর ওপর চলে নিষ্ঠুর, অমানবিক, বর্বরোচিত নির্যাতন। শারিরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি বিশ্রি ভাষায় গালিগালাজও করেন তিনি। কাকলীকে পরপর চার দিন একটি ঘরে আটকে রাখা হয়, দেওয়া হয়না কোনো প্রকার খাবার। একদিকে ক্ষুদার্ত-দুর্বল আক্রান্ত শরীর, অপরদিকে শারিরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাতে থাকেন এরশাদ, তার মা জামেলা ও বাবা তোঁতা। এসব বর্বরোচিত অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কৃষিকাজে জমির আগাছা দমনে ব্যবহৃত কিটনাশক (ঘাস মারা বিষ) খেয়ে ফেললে কিছুক্ষণের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন গৃহবধূ কাকলী। এমসময় তাঁর শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ন স্বামী এরশাদ শেখ। পরে তাঁকে ভর্তি করে কাকলীর বাবা-চাচাকে খবর দিয়ে তাকে ফেলে রেখে অন্যত্র চলে যান এরশাদ। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাকলী বেগমের শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন তাঁর পরিবার। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় হতভাগা গৃহবধূ কাকলী বেগমের। স্বামী ও তাঁর পরিবারের দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না দিতে পারায়, নিজ শ্বশুরবাড়িতে নিষ্ঠুরতম অমানবিক ও পৈশাচিক এমন নির্যাতনের শিকার হওয়া এক মা'য়ের কাছে, এমন পরিস্থিতিতে হয়তো 'মৃত্যু'টাকেই শ্রেয় পথ বলে মনে হয়! হয়তো

(আরআর/এএস/অক্টোবর ১৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test