E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বাগেরগাটে পানিবন্দি দুই শতাধিক পরিবার

২০২৫ অক্টোবর ১৯ ১৯:৩০:৩১
বাগেরগাটে পানিবন্দি দুই শতাধিক পরিবার

সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা শহরতলীতে পানিবন্দি হয়ে রয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। এলাকার পুকুর, ডোবানালা পানিতে একাকার। হাঁটু পানি জমে আছে বাগান ও বাড়ির উঠানে। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি কমলেও এভাবে পানি আটকে থাকে প্রায় সারা বছরই। বাড়ির উঠানে সাঁকো তৈরী করে চলাচল করছেন অনেকেই। এ কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম ও চলাচল। পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বাতাসে। দূষিত পানি ব্যবহারে ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। চরম দুর্ভোগে রয়েছে পানিবন্দি হয়ে দুই শতাধিক পরিবার।

উপজেলা সদরের রায়েন্দা শহরতলীর উত্তর কদমতলা এলাকার আর কে ডি এস বালিকা বিদ্যালয় ও পুরাতন পোস্ট অফিস এলাকার দক্ষিণ পাশ এবং রায়েন্দা বাজার দাখিল মাদরাসার আশাপাশের এলাকায় দেখা গেছে জলাবদ্ধতার এমন ভয়াবহ চিত্র। ওই এলাকার ডোবা-নালা, জলাধারগুলো ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়িঘর। একারণে পাশের বলেশ্বর নদের তীরের বেড়িবাঁধের স্লুইস গেটের সঙ্গে সংযুক্ত পানি নিষ্কাশনের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রতিবছরই এভাবে দুর্ভোগের শিকার হতে হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের।

বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় নিম্ন আয়ের এবং দরিদ্র পরিবারগুলো উঠান ও পুকুরের সেই বদ্ধ পঁচা পানি দিয়ে করছে ধোয়াপালা, গোসলসহ দৈনন্দিন সব কাজ। সবখানে পানি জমে থাকায় কাঁচা বসতঘর এখন সাপ, কেঁচো, পোকামাকড়ের আস্তানায় পরিনত হয়েছে। এছাড়া পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে ওই এলাকায়। বেশিরভাগ শিশুর শরীরে দেখা দিয়ে চর্মরোগ। উপজেলা সদরের পাশেই প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম ছাড়াও বছরের অধিকাংশ সময় এভাবে জলাবদ্ধ থাকা এবং তা নিরসনে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে।

আজ রবিবার সরেজিমন জলাবদ্ধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকের বাড়ির উঠানে প্রায় হাঁটু সমান পানি। দীর্ঘদিন জমে থাকায় বিবর্ণ হয়ে গেছে পানির রঙ। পানি থেকে ছড়িয়ে পড়েছে পঁচা দুর্গন্ধ। এসময় সেতারা বেগম (৫০) নামে এক নারীকে দেখা যায় বসত ঘরের সামনের সেই পঁচা পানি দিয়েই থালাবাসন ধোয়ার কাজ করছেন। তিনি বলেন, পুকুর আর উঠানে একই পানি। তাই এই পানি দিয়াই ধোয়াপালা করি। এছাড়া আর কোনো উপায় নাই। এই দুর্ভোগ যে কবে যাবে কেডা যানে!

ওই এলাকার বাসিন্দা আ. জব্বার শিকদার ও সালাম হাওলাদার বলেন, সবদিকেই পঁচা পানি। বাড়ির স্বাভাবিক কোনো কাজকর্ম করার উপায় নাই। পানিপঁচা দুর্গন্ধে শ্বাস নেওয়া যায় না। কাপড়চোপড় ধোয়া, গোসলসহ সব কাজ এই পঁচা পানি দিয়াই করতে হয় আমাগো।

ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, আমার ছোট ছোট তিন মাইয়া রাহিমা, কারিমা ও রাইসা। পঁচা পানি লাইগা ওগো শরীরে চুলকানিতে ভইরা গেছে। আমাগোও হাত-পা চুলকায়। রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুলের শিক্ষক মো. ওমর ফারুক বলেন, আমার পাঁচ বছরের মেয়ে মেহেরিমার সমস্ত শরীরে ছুলকানি হয়েছে। ফোঁসকা পড়ে বড় বড় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে এলাকার প্রত্যেক ঘরে শিশুরা চুলকানি ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বয়স্কদের শরীরেও চুলকানি ও চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।

ভুক্তভোগী বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জলাবদ্ধতা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। বৃষ্টি কমলেও দুর্ভোগ আর কমে না। এখনো দুইশ থেকে আড়াইশ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও বছরের বেশিরভাগ সময় পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করতে হয় তাদের। কিন্তু এব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো মাথাব্যাথা নেই। বহুবার উপজেলা প্রশাসনকে দর্ভোগের কথা জানানোর পরও পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের কোনো উদ্যোগ নেই। সরকার পরিবর্তনের পর জনপ্রতিনিধিরাও এলাকাছাড়া। এমন পরিস্থিতিতে জরুরিভাবে কেউ যে ব্যবস্থা গ্রহন করবে সেই সুযোগও নেই। এখন পঁচে মরা ছাড়া আর কোনো পথ নেই তাদের!

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাস বলেন, নোংরা পঁচা পানি দিয়ে গোসল এবং বাহ্যিক কাজে ব্যবহার করা হলে শরীরে নানা ধরণের চর্মরোগ, চুলকানি, চামড়ার প্রদাহ এবং নারীদের প্রসাবে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া দূষিত পানি পানে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড এবং বি-ভাইরাসের মতো সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন হাসপাতালে আসা রোগীর ২০ শতাংশই বিভিন্ন চর্মরোগ নিয়ে আসছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এসব রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের দৈনন্দিন কাজে বিষুদ্ধ ও জীবানুমুক্ত পানি খাওয়া, ব্যবহার, এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুদীপ্ত কুমার সিংহ বলেন, জলাবদ্ধ এলাকার পানি নিষ্কামনের জন্য কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নালা কেটে পাইপ বসানোর চেষ্টা করা হলে কিছু কিছু লোক তাদের জায়গা ছাড়তে রাজি না হওয়ায় উদ্যোগটি থমকে যায়। যে কারণে মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে বিষয়টি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

(এস/এসপি/অক্টোবর ১৯, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test