E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

শাহজালাল বিমানবন্দরে রূপপুর প্রকল্পের মালামাল আগুনে পোড়ার সত্যতা মেলেনি

২০২৫ অক্টোবর ২০ ০০:৩০:৩৪
শাহজালাল বিমানবন্দরে রূপপুর প্রকল্পের মালামাল আগুনে পোড়ার সত্যতা মেলেনি

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : শনিবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কিছু বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে যাওয়ার দাবি করা হলেও এর কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি যে সিঅ্যান্ডএফের বরাত দিয়ে ওই দাবি করা হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানটিও রূপপুর প্রকল্পে তারা কোনও কাজ করে না জানিয়েছে ।

গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ায় এই প্রকল্পের মালালাম পুড়ে যাওয়ার খবরটি দিনভর আলোচনায় ছিল।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে শনিবার দুপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই কমপ্লেক্সে আকাশ পথে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্য রাখার গুদাম ছিল। যার মধ্যে রাশিয়া থেকে আনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন সিঅ্যান্ডএফ মমতা ট্রেডিং কোম্পানির কথিত কর্মকর্তা সরকার বিপ্লব হোসাইন।

মূলত মমতা ট্রেডিং আমদানিকৃত পণ্য খালাসে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটির ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে আশরাফুল আলম নামের জনৈক কর্মকর্তা জানান, আমরা রূপপুর প্রকল্পের কোনও কাজের সাথে সম্পৃক্ত নই। বিপ্লব হোসাইন নামে কেউ আমাদের এখানে কাজ করেন না।

অথচ বিমান বন্দর এলাকায় বিপ্লব হোসাইন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রূপপুর প্রকল্পের জন্য রাশিয়া থেকে সাতটি শিপমেন্টের মাধ্যমে প্রায় ১৮ টনের মতো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আনা হয়েছিলো ছয় দিন আগে। এসব পণ্য খালাসের জন্য পরমাণু শক্তি কমিশন থেকে এনওসি (অনাপত্তিপত্র) নিতে হয়। সেই এনওসি নিতে দেরি হওয়ায় পণ্য খালাস করা যায়নি। রবিবার খালাস হওয়ার কথা ছিল।

তবে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, রূপপুর প্রকল্পের জন্য বেশিরভাগ মালামাল পানিপথে আসে। কিছু মালামাল আসে বিমানে। এসব মালামাল আমদানি ও তা স্থাপনের দায়িত্ব রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। যেভাবেই মালামাল আমদানি করা হোক না কেন তা প্রকল্প এলাকায় পৌছানোর পর যখন হস্তান্তর করা হয়, তখনই কেবল এর দায় দায়িত্ব প্রকল্পের ওপর পড়ে। তার আগ পর্যন্ত এসব মালামাল তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনা শোনার পর আমরা রাশিয়ানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারাও বিষয়টি জানে না বলে জানিয়েছে। তাছাড়া মমতা ট্রেডিং নামে কোনও প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের কাজও রাশিয়ানরা দেয়নি বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফলে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার মূল ঠিকাদার তাদের কাজের সুবিধার্থে বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। সেই সাব কন্ট্রাক্টরদের কেউ কেউ আবার তাদের সাব কন্ট্রাক্টর নিয়োগ দেয়। ফলে অনেক কিছুই প্রকল্পের কর্মকর্তাদের এমনকি রাশিয়ানদেরও জানা থাকে না। কিন্তু ১৮ টনের মতো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম যদি সত্যিই রাশিয়া থেকেই আমদানি করা হয়, তাহলে তো রাশিয়ানদের কোনও না কোনোভাবে জানার কথা। আবার প্রশ্ন উঠেছে রাশিয়া থেকেই যদি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি আমদানি করা হয় তাহলে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান কেন আরেক প্রতিষ্ঠানকে সাব কন্ট্রাক্ট দেবে? এই রহস্য উৎঘাটন দরকার। এ বিষয়ে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, রাশিয়ার আর্ধিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট মিলে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রসাটম।

ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। সেই সঙ্গে এগিয়ে চলেছে দ্বিতীয় দফার নির্মাণ কাজ।

(এসকেকে/এএস/অক্টোবর ২০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২০ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test