E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ফরিদপুরে মন্দিরের গাছ কেটে বিক্রি করে দিলেন কথিত যুবদল নেতা সাইফুল

২০২৫ অক্টোবর ২৫ ০০:৩৫:২৯
ফরিদপুরে মন্দিরের গাছ কেটে বিক্রি করে দিলেন কথিত যুবদল নেতা সাইফুল

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর সদরের একটি মন্দিরের বড় একটি মেহগনি গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে কথিত যুবদল নেতা সাইফুল মোল্লার বিরুদ্ধে।  এ বিষয়ে মন্দির কমিটি ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের খলিলপুর বাজার সংলগ্ন বারোনীখোলা কালী মন্দির। মন্দিরটিতে ব্রিটিশ আমল থেকে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় উপাসনা করে আসছে। মন্দির প্রাঙ্গনে সেসময় থেকে চৈত্র তিথিতে বারোনী মেলার আয়োজন করা হয়।

এ মেহগনি গাছের ছায়াতলেই মন্দিরে আগত ভক্তবৃন্দ সহ স্থানীয়রা বিশ্রাম নিতেন। মাত্র ২৩ হাজার টাকায় এ গাছটি গত বুধবার জোর করেই কেটে বিক্রি করে দেন সাইফুল মোল্লা। সাইফুল মোল্লা মাচ্চর ইউনিয়ন যুবদল নেতার পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করায় মন্দির কমিটি গাছ কাটার সময় বাঁধা দিলেও তা শোনেন নি।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা জায় গাছটি মন্দির ঘেসে ছিলো। গাছ কেটে মাটি ভরাট করে রাখা হয়েছে।

মন্দির কমিটি ও স্থানীয়রা জানান, সাইফুল মোল্লার দাদা মৃত ফাজিল মোল্লা ব্রিটিশ আমলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতি পালনে ২ শতাংশ জমি মৌখিক দান করেন। স্থানীয়রা তখন সেখানে একটি কালী মন্দির স্থাপন করেন। প্রায় ২০০ বছর ধরে এ মন্দিতে পূজা করে আসছেন তারা। জমি দান করা হলেও মন্দির কমিটি ২ শতাংশ জমিটুকু মন্দিরের নামে লিখে নেন নি। এরপর বিএস, আরএস, এসএ সকল পর্চাতে মন্দিরটি নাম উল্লেখ আছে। মন্দিরটি বারোনীখোলা কালী মন্দির নামে পরিচিতি পায়। মন্দির কমিটি গত বছর মন্দিরের ২ শতাংশ জায়গা মন্দিরের নামে লিখে নেওয়ার জন্য মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে জমির মালিকানা রয়েছে জেলা প্রশাসকের নিকট এবং এটি মন্দির হিসেবে উল্লেখ আছে।

বারোনীখোলা মন্দির কমিটির সভাপতি সত্য রঞ্জন মালো বলেন, আমার বাপ দাদার কাছে গল্প শুনেছি নবাব সিরাজউদদৌলার সময় থেকে এ মন্দিরে পূজা পাঠ চলে আসছে। এরপর ব্রিটিশ আমল গেছে, তারপর পাকিস্তান আমল, এরপর বাংলাদেশ। জমি সাইফুলের দাদার দান করা জমি, কিন্তু আমাদের এতো বেশি সুসম্পর্ক এ এলাকা-মাটির সাথে যে কখনও জমি মন্দিরের নামে লিখে নেওয়ার প্রয়োজন পরেনি। বর্তমান সময়ে এসে এ মন্দিরে ধর্মীয় রীতি পালনই সন্দেহের মধ্যে পড়েছে। যে মেহগনি গাছটি কাটা হয়েছে সে গাছটি আমার পূর্ব পুরুষ লাগিয়েছেন। এ গাছের ছায়াতলে ভক্তবৃন্দরা বিশ্রাম নিতেন৷ এ গাছটিকে আমরা ভগবানের মত যত্ন করেছি। সাইফুল মোল্লা কোনো কথাই শুনলেন না। গাছটি কেটে নিয়ে গেলেন। বিএনপি করায় এলাকায় তার প্রভাব রয়েছে। আদালতের কাছে ১৪৪ ধারায় মামলাও করা হয়। আদালত পরে তা খারিজ করে দিলেই গাছটি কেটে নেন। এখন উল্টো হুমকি ধামকি প্রদান করছেন। আমি কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি বলে।'

স্থানীয় বাসিন্দা সুমির কুমার ঘোষ বলেন, সাইফুল মোল্লা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এলাকায় নানা অপকর্মে লিপ্ত। তার ভয়ে এখন অনেকে মুখ খোলেন না। তাই চোখের সামনে দিয়ে গাছ কেটে নিয়ে গেলেও কেউ কিছু বলেনি।

মো: মাহফুজ মোল্লা জমি দানকারীর ওয়ারিশ। সাইফুল মোল্লার চাচাতো ভাই। তিনি বলেন, সাইফুল মোল্লা কোন ভাবেই কাজটি ঠিক করেননি। অন্যায় করেছেন। গাছটি মন্দিরের অংশে রয়েছে। মন্দির যে জমিতে আছে সে দাগে ৭২ শতাংশ জমি। ২ শতাংশ মন্দিরের আর বাকি ৭০ শতাংশ আমাদের ওয়ারিশদের। এ দাগের জমির আমাদের অংশ এবং সাইফুল মোল্লাদের অংশ বাটোয়ারা করে বিক্রি করা হয়েছে। সাইফুলদের ওয়ারিশের কোন জমি অবশিষ্ট নেই। তবুও সে জোর করে গাছ কেটে নিয়ে গেছে।

মাচ্চর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এ মামুনুর রশিদ বলেন, সাইফুল মোল্লা খুবই খারাপ কাজ করেছে৷ এ এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে আমাদের বংশ পরম্পরার সম্পর্ক।

তিনি আরও বলেন, সাইফুল মোল্লার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। মন্দিরের গাছ কেটে সে বড় অন্যায় করেছে।

তিনি বলেন, সাইফুল মোল্লা স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দিলেও তার কোন পদপদবী নেই। সাইফুল বিগত ১৬ বছর আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলো। আমি জেলা বিএনপি কাছে সাইফুলের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন করবো।

ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড (১) মেম্বার রশিদ মোল্লা বলেন, মন্দিরের জমি সাইফুল মোল্লাদের পরিবারের দান করা। তবে যে গাছ কাটা হয়েছে সে গাছটি মন্দিরের জায়গায় না। মোল্লা পরিবারের জায়গায় বলে আমি জানি।

অভিযুক্ত সাইফুল মোল্লা গাছ কাটা কথা শিকার করে বলেন, মন্দির কমিটি ২ শতকজমির স্বত্ত্ব দাবী করে যে মামলা দায়ের করেছেন তার খরচ চালানোর জন্য গাছ কাটা হয়েছে।

তিনি বলেন, গাছ মন্দিরের না। গাছ আমার চাচা মনি মোল্লার জায়গায় রয়েছে। গাছটি লাগিয়েছেন আমার বাবা।

আজ শুক্রবার কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর জানান, এ বিষয়ে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে এ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অভিযোগকারী সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের এই পরিবারটিকে এমনভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে যে, সে ভয়ে পুলিশের সাথে দেখা করে এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা টুকু পর্যন্ত কামনা করতে সাহস পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় থানায় অভিযোগকারী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ওই এলাকায় বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়সহ স্থানীয় জনসাধারণ।

(আরআর/এএস/অক্টোবর ২৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৫ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test