E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

 

সবার জন্য উন্মুক্ত হলো ঐতিহাসিক জালাল মঞ্চ, নির্মাণ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন  

২০২৫ অক্টোবর ২৫ ১৮:৪৭:৩২
সবার জন্য উন্মুক্ত হলো ঐতিহাসিক জালাল মঞ্চ, নির্মাণ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন  

কেন্দুয়া প্রতিনিধি : কেন্দুয়া চর্চাসাহিত্য আড্ডার ৪৮৮ তম আসর অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবার সন্ধ্যায়। এর মধ্য দিয়েই সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো ঐতিহাসিক জালাল মঞ্চ। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দুয়ার কৃতী সন্তান মরমী বাউল সাধক ওস্তাদ জালাল উদ্দিন খা: কে দেওয়া হয় মরনোত্তর একুশে পদক। শিল্পী, সংস্কৃতি কর্মী ও সর্বস্তরের জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ চত্তরে নির্মিত হয় দৃষ্টি নন্দন জালাল মঞ্চ। গত ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যার পর মঞ্চের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ জামান। ওই  অনুষ্ঠানে তিনি কেন্দুয়া উপজেলাকে লোকজ সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন। 

উদ্বোধনের ৬/৭ দিন পর থেকে জালাল মঞ্চের নির্মাণ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গণমাধ্যমকর্মী মাজারুল ইসলাম উজ্জ্বল, হুমায়ুন কবির ও মনিরুল ইসলাম আকন্দ সোয়েল কেন্দুয়া প্রতিদিন আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও অনলাইন প্রত্রিকায় জালাল মঞ্চের নির্মাণ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের দাবি, জালাল মঞ্চ নির্মাণের নামে টাকা হেরফের করা হয়েছে। এ নিয়ে শুরু হয় বিভিন্ন মহলে তোলপার। সংস্কৃতি সেবী ও অনেক গণমাধ্যমকর্মী এবং সুশীল সমাজের নেতারা জালাল মঞ্চ নির্মাণ নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখার জন্য আহবান জানান। তাদের মতে ১৯৭২ সনে জালাল উদ্দিন খা পরলোক গমন করেন। এর পর থেকে জালাল উদ্দিন খা: কে স্মরণীয় করে রাখতে স্মৃতি ফলক বা ম্যুরাল নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত ২০২৪ সালে মরনোত্তর একুশে পদক পাওয়ার পর জালাল উদ্দিন খা’র ১৩০তম জন্ম দিন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ৩ দিন ব্যাপি জালাল মেলার।

কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ৩ দিন ব্যাপি জালাল মেলায় শত শত দর্শক শ্রোতার আগমন ঘটে। ওই মেলা থেকেই জালাল মঞ্চ নির্মাণের দাবি ওঠে। এর প্রেক্ষিতে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি জালাল মঞ্চ নির্মাণের জন্য কেন্দুয়া পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

সম্পূর্ণ কাজ সমাপ্ত না হলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার নির্মাণ ব্যয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষিতে চ্যালেঞ্জ ছুরে দিয়ে বলেন, জালাল মঞ্চ নির্মাণে এক টাকারও কোন অনিয়মন দূর্নীতি হয়নি। তিনি কি কি খাতে ১৯ লাখ ৭ হাজার ৭ শত ৬৩ টাকা খরচ হয়েছে বা হবে তার বিবরণ তুলে ধরে একটি প্রেস নোট ইউএনও কেন্দুয়ার আইডি থেকে গত ২১ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জালাল মঞ্চে নির্মাণ ব্যয় সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রচারের দাবি জানান।

জালাল মঞ্চের ব্যয় নিয়ে মঞ্চের নির্মাণ শিল্পী রবিউল ইসলাম রুদ্র একটি ভিডিও সাক্ষাতকারে বলেন, জালাল মঞ্চ নির্মাণে কোন অনিয়ম দুর্নীতি হয়নি। আমরা যারা কাজ করেছি সঠিক হিসাব মিলিয়ে দিতে পারবো। এখানে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কিছু নেই।

দেশ বরেণ্য লোক শিল্পী ও পালা গায়ক আব্দুল কদ্দুস বয়াতী স্বপ্রনোদিত হয়ে একটি ভিডিও সাক্ষাতকারে কেন্দুয়া প্রেসক্লাব তথা সকল গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, জালাল উদ্দিন খা আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাঁর স্মরণে যে জালাল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে এটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। তিনি সকল গণমাধ্যমকর্মীদের জালাল মঞ্চ নিয়ে অযথা বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহবান জানান।

নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক ও ভালোবাসার কবি তানবীর জাহান চৌধুরী বলেন, কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার একজন সংস্কৃতি সেবী ও সৎ মানুষ। তিনি বাউল কবি দীন শরৎ এর স্মৃতি ফলক ও বাউল সাধক ওস্তাদ জালাল উদ্দিন খা স্মরণে ‘ঐতিহাসিক জালাল মঞ্চ’ নির্মাণ করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। কেন্দুয়াসহ জেলার সকল সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মীদের পক্ষে তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর নবনির্মিত জালাল মঞ্চ সকল দল, ধর্ম ও জনগোষ্ঠীর জন্য উন্মুক্ত ঘোষনা করে এক গণবিজ্ঞপ্তী প্রচার করেন ইউএনও।

এ গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপজেলার শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, নৈতিকতা, শিল্প ও সাহিত্যের অবাধ চর্চার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠ ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে জালাল মঞ্চ। তিনি সকল নাগরিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় সংগঠন ও তাদের সকল প্রকার সামাজিক সাংস্কৃতিক শিক্ষা মূলক আয়োজনের জন্য এই মঞ্চটি উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন বলে বিজ্ঞপ্তীতে জানিয়েছেন।

প্রখ্যাত বাউল শিল্পী সুনীল কর্মকার ও আব্দুস সালাম সরকার বলেন, ওস্তাদ জালাল উদ্দিন খা স্মরণে যে জালাল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে তা লোকজ সংস্কৃতির রাজধানী কেন্দুয়ার ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এতে শিল্প সংস্কৃতির বিকাশের অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে।

(এসবি/এসপি/অক্টোবর ২৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৫ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test