E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

‘ঘর পোড়ানো ও ধর্ষণের ঘটনা সঠিক নয়, মীমাংসার চেষ্টা চলছে’

২০২৫ অক্টোবর ২৬ ২২:৩১:০৭
‘ঘর পোড়ানো ও ধর্ষণের ঘটনা সঠিক নয়, মীমাংসার চেষ্টা চলছে’

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মীরগাং গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে দীলিপ গাইনের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়া জঙ্গল ভাংগি ও তার ভাইপো সাগর ভাংগীর আদালতের গারদে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ধর্ষণ মামলা দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। তারই অংশ হিসেবে রবিবার ভোরে বিকাশ গাইন নামে এক যুবককে ঘরপোড়ানো মামলায় কারাগারে থাকা এক আসামীর মাকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক করেছে। পরে মামলা  না হওয়ার কথা নিশ্চিত করে করে এক বিএনপি নেতা/কাম সাংবাদিকের মধ্যস্থতায় ঘর পোড়ানো মামলা মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আটককৃত যুবকের নাম বিকাশ চন্দ্র গাইন। তিনি শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মীরগাং গ্রামের কমলেশ গাইনের ছেলে।

মীরগাং গ্রামের কমলেশ গাইন জানান, তাদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে একই এলাকার পঁচি ভাংগী, মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী ফাতেমার। সম্প্রতি পচিঁ ভাংগীর ছেলে জঙ্গল ভাংগীকে দেওয়া তাদের রেকডীয় জমি ছাড়াও আরো ৫০ শতক জমি দাবি করে আসছিলো তারা। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে শালিস না মেনে গত ১৭ অক্টোবর এ নিয়ে শালিসি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত না মেনে বন্দোবস্ত দলিলের জমি উদ্ধারের নামে ১৭ অক্টোবর রাত সাড়ে সাতটার দিকে ভাই দীলিপের স্ত্রীসহ আটজনের নামে ডিসিআরকৃত ৫০ শতক জমি ও পুকুর নেট দিয়ে ঘিরে ফেলে জঙ্গল ভাংগী, সাগর ভাংগী, তাদের ভাড়া করা সন্ত্রাসী একই গ্রামের আব্দুর জব্বার, মাহামুদুলসহ ৫০ জন। লুটপাট করা হয় পুকুরের মাছ। স্থানীয়রা ৯৯৯ এ খবর দিলে পুলিশ আসছে এমন খবর পেয়ে আত্মগোপনে যায় জবরদখলকারিরা। ওইদিন দিবাগত রাত দেড়টার দিকে প্রতিপক্ষ দীলিপ গাইনের বসতবাড়ি, রান্না ঘর ও কাঠের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এতে ৫০ হাজার টাকার মালামাল পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। আগুনের লেলিহান শিখার আলোতে দীলিপ গাইন ও তার স্বজনরা ঘটনাস্থল ছেড়ে জঙ্গল ভাংগী, দূঃখে ভাংগীর ছেলে সাগর ভাংগী, পরেশ মণ্ডলের ছেলে নিত্যানন্দ মণ্ডল ও তার ছেলে গোপাল মÐলকে চলে যেতে দেখেন। লুটপাট করা হয় ৩০ হাজার টাকারও বেশি মালামাল।

এ ঘটনায় দীলিপ গাইন বাদি হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনের নামে ১৮ অক্টোবর রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২১ অক্টোবর আসামীরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন জানালে আদালত তা নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিকেল চারটার দিকে জঙ্গল ভাংগী ও গৌতম ভাংগীর কাছে আদালত চত্বরে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা এ প্রতিবেদককে জানান, তারা আগুন লাগানোর ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তবে বিষয়টি নিয়ে সামিউল মনির বা কোন সাংবাদিক তাদের কাছে জানতে চাইনি। তবে দীলিপ গাইনদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দেওয়া হবে বলে জানান জঙ্গল ভাংগি (মোবাইলে রেকর্ডকৃত)। তাদেরকে সার্বিক সহায়তা করছে একই গ্রামের সুজাউদ্দিনের ছেলে আব্দুর জুব্বার, মাহামুদুল ইসলাম। জমি দখলের জন্য সাদেম চেয়ারম্যানের লোকজন ভাড়া করে এনেছিলেন তারা। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলার করার জঙ্গল ভাংগির পরিকল্পনার বিষয়টি ২২ অক্টোবর কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দীলিপ গাইনের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সাজানো হয়েছে বলে বিএনপি নেতা ও সাংবাদিক সামিউল আযম মনির তার পত্রিকায় লেখেন। এমনকি ঘরে আগুন দেওয়ার আগে ঘরের চালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দীলিপ গানরাা সরিয়ে ফেলে বলে পত্রিকায় মিথ্যাচার করেন। রবিবার কারাগারে থাকা চার আসামীর আবারো জামিন আবেদন করলে নিদ্দিষ্ট সময়ের আগে হওয়ায় আদালত তা ফেরৎ দেয়।

কমলেশ গাইন আরো জানান, ভাই দীলিপ গাইনের ঘরবাড়ি পোড়ানো মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক রবিবার ভোর ৬টার দিকে দুইজন পুলিশ, ছোট ভেটখালির বিএনপি নেতা ছিদ্দিক ও জঙ্গল ভাংগির পক্ষে মদতদাতা আব্দুর জব্বার তাদের বাড়িতে আসেন। ঘর পোড়ানো মামলায় জেলে থাকা এক আসামীর ঘরের বেড়া কেটে তার মাকে ধর্ষণ করেছে তার (কমলেশ) ছেলে বিকাশ গাইন, ভাইপো পলাশ গাইন ও তুষার গাইন বলে জানান উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম। একপর্যায়ে ঘরে শুয়ে থাকা নারীদের পা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে জহিরুলসহ তিন পুলিশ বিকবাশকে ধরে নিয়ে উঠানে নিয়ে আসে। একপর্যায়ে জহিরুল ইসলাম জব্বারকে সাথে নিয়ে কর্থিত ধর্ষিতার বাড়িতে যান। এ সময় জহিরুল ইসলামের নাম করে তার কাছ থেকে চার হাজার টাকা নেন ছিদ্দিক। পরে বিকাশকে হাটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জব্বরের মটর সাইকেলে চড়ে যান উপপরিদর্শক জহিরুল। যাওয়ার আগে অন্য দুই আাসামীকে নিয়ে ডিএনএ টেস্ট করানোর জন্য থানায় নিয়ে যেতে বলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাংবাদিক মনির ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল ঘর পোড়ানো মামলা ও কথিত ধর্ষণের মামল থানায়া মীমাংসা করার জন্য ঘর জ্বালানো মামলার বাদি দীলিপ গাইন ও ভাই তপন গাইনকে থানায় পাঠানোর জন্য স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে খবর দেন আবুল কাশেম মোড়ল। তবে তারা যেতে অপারগতা প্রকাশ করে বিকাশকে আইনের মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

দীলিপ গাইেেনর মেয়ে সুধৃতি বালা গাইন রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে থানায় গেলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মোল্লা বলেন, তোমাদের ঘর পোড়ানো মামলা মিথ্যা। ভাল চাইলে মীমাংসা করে নাও। নইলে...

এদিকে রবিবার সকালে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মীরগাং গ্রামের এক কথিত ধর্ষিত নারীর সঙ্গে সাংবাদিকরা কথা বলতে গেলে জানা যায় রোববার ভোর তিনটায় তাকে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তিনটা ২০ মিনিটে তাকে ভর্তি করা হয়। জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, তিনি কোন কথা বলবেন না। বাড়ির লোকজন এলেই কথা বলবেন। তবে কারা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি। এমনকি তার পাশেও কেউ ছিল না। জরুরী বিভাগে ওই ভিকটিমের ভর্তি রেজিষ্টারের তলায় মোবাইল নাম্বার লেখা ছিল।

এদিকে মানবাধিকার কর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘর পোড়ানো মামলার আসামীরা জেলে থাকাকালিন তাদের এক স্বজনকে দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা দেখানো হলেও হাসপাতাল ও পুলিশ সত্যতা পায়নি। অথচ বিনা অপরাধে বিকাশ গাইনকে ধর্ষণের মামলার আসামী হিসেবে ধরে এনে থানা লক আপে রেখে উভয়পক্ষকে নিয়ে রাত পর্যন্ত মীমাংসার চেষ্টা চালানো বেআইনি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। অবিলম্বে বিকাশ গাইনকে মুক্তি না দিলে প্রতিবাদে সোমবার সকালে সাতক্ষীরা শহরে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হবে।

এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল জানান, তিনি দীলিপ গাইন ও জঙ্গল ভাংগীদের মধ্যে শালিসি বৈঠক ডেকে একটি মীমাংসায় এসেছিলেন। তবে পরবর্তীতে জঙ্গল ভাংগী একটি মহলের প্ররোচনায় তা না মেনে দীলিপ গাইন ও তার ভাইদের দখলীয় পুকুরসহ জমি (ডিসিআর প্রাপ্ত) নেট দিয়ে ঘিরে নিতে গেলে পুলিশে খবর দেন তিনি পরে তারা স্থান ত্যাগ করলেও গভীর রাতে দীলিপ গাইনের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জঙ্গল ভাংগিসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। রবিবার সকালে বিকাশ গাইনকে ধরে আনার কথা জেনে তিনি থানায় আসেন। তবে ধর্ষণের ঘটনা সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংসার জন্য থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মোল্লা তার সঙ্গে কথা বলেছেন। বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে।

এ ব্যাপারে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মোল্লা দীলিপ গাইনের প্রতিপক্ষ এক আসামীর মাকে ধর্ষণের অভিযোগে রবিবার সকালে বিকাশ গাইন নামে এক যুবককে উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম আটক করে থানায় নিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, ঘরে আগুন দেওয়া ও ধর্ষণের ঘটনা কোনটাই সঠিক নয় বলে তার মনে হয়েছে।দীলিপ গাইনের পক্ষে সাতক্ষীরার এক সাংবাদিক লিড দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজনের পাশপাশি সাংবাদিক মনির ভাইকে রেখে মীমাংসার চেষ্টা চলছে। তবে ঘর পোড়ানোর মামলার সত্যতা না থাকলে তিনি কিভাবে তা রেকর্ড করলেন ও সামিউল মনিরের লেখা পত্রিকার রিপোর্ট মাইনরিটি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সভাপতি অ্যাড. রবীন্দ্র ঘোষের হোয়াটসঅ্যাপ এ পাঠিয়ে ঘটনা ত্য নয় বলে কিভাবে দাবি করলেন তা এড়িয়ে যান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

(আরকে/এএস/অক্টোবর ২৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৭ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test