E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আটকের ৩৩ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা দিয়ে বিকাশ গাইনকে আদালতে সোপর্দ

মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় বাদিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

২০২৫ অক্টোবর ২৭ ১৯:১৯:৩৩
মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় বাদিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মীরগাং গ্রামে ঘর পোড়ানো মামলার বাদি দীলিপ গাইনের তিন ভাইপোর বিরুদ্ধে কারাগারে থাকা এক আসামীর মাকে দিয়ে সাজানো ধর্ষণ মামলা করার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার ভোরে বিকাশ গাইন নামে একজনকে পুলিশ রবিবার ভোরে বাড়ি থেকে তুলে এনে থানা লকআপে রেখে এক বিএনপি নেতা কাম সাংবাদিক ও এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ঘর পোড়ানো মামলা তুলে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ৩৩ ঘণ্টা পর তাকে ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ সোমবার বিকেল তিনটার দিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলায় বাদির বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের আনোয়ার হোসেন ও দুই কিলোমিটার দূরের আব্দুর জব্বারকে সাক্ষী ও ১০ কিলোমিটার দূরের মাহামুদুল হাসানের মাধ্যমে বাদি থানায় এজাহার পাঠিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত বিকাশ গাইন মীরগাং গ্রামের কমলেশ গাইনের ছেলে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ১৭ অক্টোবর শালিসী সিদ্ধান্ত না মেনে রাত সাড়ে সাতটার দিকে মীরগাং গ্রামের জঙ্গল ভাংগী, তার ভাইপো সাগর ভাংগী, তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী একই গ্রামের আব্দুর জব্বার, যতীন্দ্রনগর গ্রামের আনোয়ার ও মাহামুদুলের নেতৃত্বে ৫০ জনের ও বেশি লোকজন দীলিপ গাইন ও তার ভাইদের ডিসিআর প্রাপ্ত পুকুরসহ ৫০ শতক জমি নেট দিয়ে দখল করে নেয়। পুলিশ আসার খবর পেয়ে জবরদখলকারিরা আত্মগোপন করে। ১৭ অক্টোবর দিবাগত রাত একটার দিকে দীলিপ গাইনের বসতঘরসহ কাঠঘর ও গোয়ালঘরে আগুন লাগিয়ে ভষ্মীভূত করা হয়। এ ঘটনায় ১৮ অক্টোবর দীলিপ গাইন বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। জঙ্গল ভাংগী, তার ভাইপো সাগর ভাংগী, কমলেষ মণ্ডল ও গোপাল মণ্ডলকে আগুনের আলোতে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখন মর্মে মামলায় উল্লেখ করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ঘটনা সঠিক নয় বলে আসামী গ্রেপ্তারের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন। ২১ অক্টোবর আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক তা না’মঞ্জুর করে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠান। ওই দিন বিকেলে আদালত চত্বরে জঙ্গল ভাংগী ও সাগর ভাংগী সাংবাদিকদের জানান যে, জুব্বার গাজী, মাহামুদুল গাজী ও আনোয়ার হোসেনের সহায়তায় প্রতিপক্ষ দীলিপ গাইনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করবেন। যাহা ২২ অক্টোবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

মীরগাং গ্রামের কমলেশ গাইন জানান, গত ২৬ অক্টোবর রবিবার ভোর ৬টার দিকে তার ছেলে বিকাশকে ঘরপোড়ানো মামলায় কারাগারে থাকা এক আসামীর মাকে ২৫ অক্টোবর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঘরের বেড়া ভেঙে ধর্ষণের ঘটনায় আটক করে নিয়ে যান উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম। এ সময় ছোট ভেটখালির বিএনপি নেতা ছিদ্দিক উপপরিদর্শক জহিরুলের দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে চার হাজার টাকা নেন। থানায় গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মোল্লা ঘর পোড়ানো ও ধর্ষণ দুটিই সঠিক নয় বলে উভয়পক্ষকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল ও সাংবাদিক মনিরের উপস্থিতিতে তিনি মীমাংসা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। রাজী না হওয়ায় ২৭ অক্টোবর রাতে ঘর পোড়ানো মামলার এক আসামীর মাকে দিয়ে ধর্ষণের মামলা রেকর্ড করেন। মামলায় ঘর ঘর পোড়ানো মামলার সাক্ষী পলাশ গাইনসহ তার তিন ভাইপোকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়। আটকের ৩৩ ঘণ্টা পর ছেলে বিকাশকে ওই ধর্ষণ মামলার আসামী হিসেবে সোমবার বিকেল তিনটার দিকে আদালতে পাঠানো হয়। তবে কথিত ধর্ষিতা শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে রাজী হননি।

কমলেশ গাইন আরো জানান,ঘরপোড়ানো মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় মামলার আসামীর মাকে দিকে ধর্ষণের মামলার পাশাপাশি ২৪ অক্টোবর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কথিত ধর্ষিতার ছেলের ঘরবাড়িতে তার ভাই দীলিপ গাইন, সাক্ষী ভাইপো পলাশ, মহেন্দ্র ম-লসহ পরিবার ও স্বজনদের ১৫জনকে আসামী করে ২৬ অক্টোবর আমলী ৫ম আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ধর্ষিতার পুত্রবধু। মামলায় ধর্ষণ মামলার তিন সাক্ষী জব্বার, মাহামুদুলকে সাক্ষী করা হয়েছে। ধর্ষণ মামলার সাক্ষী আব্দুর জব্বারকে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার একটি প্রতারনা মামলায় (সিআর-৫৬/২৫ বেতাগী) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তাকে রবিবার গ্রেপ্তার করে সোমবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।

তবে মুন্সিড়ঞ্জ ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, রবিবার সকালে বাড়ি থেকে বিকাশকে তুলে এনে লকআপে রাখেন উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম। ঘর পোড়ানো মামলা ও ধর্ষণের অভিযোগ দুটি বিষয়ই সঠিক নয় বলে উল্লেখ করে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মোল্লা তাকে সাংবাদিক কাম বিএনপি নেতা সামিউল মনিরের উপস্তিতিতে তাকে উভয়পক্ষের সঙ্গে মীমাংসায় বসতে বলেন। ধর্ষণের কোন সত্যতা না থাকার পরও ঘরপোড়ানো মামলার বাদি দীলিপ গাইনের ভাইপোকে লকআপে রেখে ও একটি পক্ষের প্রধান জঙ্গল ভাংগি জেলে থাকায় বসাবসি সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে ২৭ অক্টোবর ধর্ষণের পর হত্যা চেষ্টার ঘটনা দেখিয়ে বিকাশসহ তার তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে সোমবার বিকেলে বিকাশকে আদালতে পাঠানো হয়।

এদিকে সোমবার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তার না পেয়ে পরদিন ভিকটিমকে আবারো হাসপাতালে নিয়ে আসার কথা বলে পুলিশ চলে যায়। তবে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুর রহমান জানান, ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে তাৎক্ষণিক পাওয়া না গেলে ওই ভিকটিমকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করার নিয়ম রয়েছে। তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন নিয়ম নেই।

এ ব্যাপারে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মোল্লা সোমবার বিকেলে ফোন রিসিভ করেননি। তবে দীলিপ গাইনের প্রতিপক্ষ এক আসামীর মাকে ধর্ষণের অভিযোগে রবিবার সকালে বিকাশ গাইন নামে এক যুবককে উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম আটক করে থানায় নিয়ে আসে বলে রবিবার বিকেলে সাংবাদিকদের জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঘরে আগুন দেওয়া ও ধর্ষণের ঘটনা কোনটাই সঠিক নয় বলে তার মনে হয়েছে। বিষয়য় দুটি নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজনের পাশাপাশি সাংবাদিক মনির ভাইকে রেখে মীমাংসার চেষ্টা চলছে।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৭ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test