E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

দিনাজপুরে গুড়িয়ে দেওয়া হলো পাঁচ শতাধিক স্থাপনা

২০২৫ নভেম্বর ০২ ২৩:১৪:২৬
দিনাজপুরে গুড়িয়ে দেওয়া হলো পাঁচ শতাধিক স্থাপনা

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরে গুড়িয়ে দেওয়া হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তরসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থাপনা। 

রবিবার (২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনাজপুর শহরের পুলহাট থেকে সীমান্তবর্তী এলাকা খানপুর পর্যন্ত ১২০ ফুট প্রশস্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে দিনাজপুর সড়ক বিভাগ। একদিনেই প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কে গুড়িয়ে দেওয়ার হয়েছে পাঁচ শতাধিক স্থাপনা। এর মধ্যে বিসিক কার্যালয়,বিসিক শিল্প এলাকার পাটোয়ারী বিজনেজ হাউজ লিমিটেডসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিল,শিল্প-কারখানা,ঘর-বাড়ি,স্কুল,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ,আনসার,স্বেচ্ছা সেবকসহ বুলট্রেজার ও বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে পুলহাটের পুলিশ ফাঁড়ির মোড় থেকে এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সচিব এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশফাকুল হক চেীধুরী।

দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ওই জমি ১৯৪২ সালে গেজেটভুক্ত হয়েছে। যেহেতু গেজেট হয়েছে, সেহেতু এসব জমির মালিকানা দাবি থাকবে না।

৮৩ বছর আগে ১৯৪২ সালে জমি অধিগ্রহণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এই অধিগ্রহণকৃত জমি উদ্ধারে এর আগেও ২০০২ সালে সড়ক বিভাগ গেজেটের আওতায় সবাইকে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছিল। কিন্তু মোকদ্দমাসহ জটিলতার কারণে সে সময় উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। এবার পুনরায় নোটিশ, মাইকিং ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৩০ অক্সাফক্টোবরের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় সড়ক বিভাগ। এতে অনেকে নিজ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন।আগামিকাল ৩ নভেম্বর উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তবে সকাল থেকে বুলডোজার নিয়ে অভিযান শুরু করার আগেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি ঘোষণার দেয়। ফলে ৩/৪ দিন আগে থেকেই কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে স্থানপনা ভেঙ্গে মালামাল নিজ হেফাজতে নিয়েছেন। তবে উচ্ছেদ যাতে না করা হয় এজন্য অনেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে লিয়াজোর প্রচেষ্টা চালায়।

স্থানীয় এলাকাবাসী দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের অভিযোগ, এই উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা হলে এক হাজার জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এতে দুই হাজার মানুষের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙা পড়বে এবং প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার হুমকির মুখে পড়বে।

এনিয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দিনাজপুর থেকে খানপুর পর্যন্ত (জেড-৫৮০২) মহাসড়কের ওপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার উদ্দেশ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে দিনাজপুর সড়ক বিভাগ। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উচ্ছেদ অভিযানের পক্ষে মাইকিং করে চলেছেন। এর আগে দিনাজপুর সড়ক বিভাগ কর্তৃক সার্ভে চলাকালীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিল্প ও অগণিত ছোট ছোট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি উচ্ছেদের লক্ষ্যে লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু সড়ক বিভাগ কোন জরিপের আওতায় (সিএস, এসএ) কোন দাগে, কত পরিমাণ জমি উচ্ছেদ করবে তার কোনো পরিসংখ্যান এলাকাবাসীকে জানানো হয়নি। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে ১৯৪২ সালে গেজেট হওয়ায় গত ৮৩ বছরের মধ্যে অধিগ্রহণকৃত জমি সড়ক বিভাগের রেকর্ডভুক্ত ও নথিভুক্ত করার কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। এতে দীর্ঘদিন ধরে ওইসব জমি ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের রেজিস্ট্রার কর্তৃক দলিলাদি সম্পন্ন এবং নাম খারিজসহ খাজনাদি পরিশোধ হয়েছে এবং চলমান রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এর আগেও ২০০২ সালে সড়ক বিভাগ গেজেটের আওতায় সবাইকে উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করেছিল। ওই নোটিশের বিরুদ্ধে অনেকেই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর প্রতিকার চেয়ে আবেদন বা মিসকেস করেছিলেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের কাগজপত্র ও প্রমাণাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সড়ক বিভাগকে বর্ণিত গেজেটে জমির পরিমাণ উল্লেখ করে রেকর্ডভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আদেশ প্রদান করা হয়। রেকর্ডভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়। দিনাজপুর সড়ক বিভাগ এখন পর্যন্ত জমি রেকর্ডভুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

এ ছাড়া ২০০২ সালে উচ্ছেদ নোটিশের বিরুদ্ধে অনেকেই আদালতে উচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। ২০০২ থেকে ২০০৫ সালে দায়ের করা এসব মামলায় আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, যা এখনও বলবৎ আছে। ওইসব বিষয় যথাযথ প্রতিকার না করে দিনাজপুর সড়ক বিভাগ ফের গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন এবং বিভিন্ন স্থাপনায় লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করেছেন। বিষয়টি আদালত অবমাননার শামিল।

অভিযোগ রয়েছে,এই উচ্ছেদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মহল মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্য করেছে। উচ্ছেদ ঠেকাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘর-বাড়ির মালিকের কাছে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা।

এই উচ্ছেদ ঠেকাতে রবিবার সকালেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে লিয়াজো বৈঠক করার অপচেষ্টা করেছে ওই চক্রটি।

(এসএএস/এএস/নভেম্বর ০২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ নভেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test