E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

সোনারগাঁয়ে ভূমি অফিসে নামজারি বন্ধ, ভোগান্তিতে সেবা গ্রহীতারা

২০২৫ নভেম্বর ০৬ ১৯:১২:৩০
সোনারগাঁয়ে ভূমি অফিসে নামজারি বন্ধ, ভোগান্তিতে সেবা গ্রহীতারা

নির্মল কুমার সাহা, সোনারগাঁ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা ভূমি কার্যালয় কাঁচপুর রাজস্ব সার্কেল অফিসে দেড় মাস ধরে নামজারি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে সেবাগ্রহীতারা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এলআর (লোকাল রিলেশন্স) ফান্ডের টাকা নিয়ে এসিল্যান্ড এবং ওই কার্যালয়ের কর্মচারীদের মধ্যে দ্বন্দ্বে নামজারি বন্ধ রাখা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

ভূমি কার্যালয়ে সেবা গ্রহীতারা বলছেন, নামজারি বন্ধ থাকার কারণে জমি রেজিস্ট্রি বন্ধ হয়ে আছে। ফলে জমি বেচাকেনা আটকে আছে। অনেকে চিকিৎসা, বিয়ে, বিদেশ গমনসহ জরুরি কাজে জমি বিক্রি করতে চাইলেও পারছেন না।

জানা যায়, ওই কার্যালয়ে মিসকেস বা সংশোধিত মামলার হাজিরা ছাড়া উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো শুনানি হয় না। তবে কর্মচারীরা তাদের কাজগুলো সম্পন্ন করলেও এসিল্যান্ড অনুমোদন না দেওয়ায় সেগুলো আটকে থাকে। ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলা গঠিত। আগে সোনারগাঁয়ে একটি ভূমি কার্যালয় ছিল। পরবর্তীকালে গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধির জন্য ২০২৩ সালে জামপুর, সাদিপুর, নোয়াগাঁও, বারদী ও কাঁচপুর ইউনিয়নকে আলাদা করে কাঁচপুর সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিগত সময়ে কাঁচপুর রাজস্ব সার্কেলে ভূমি সংক্রান্ত সব কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে পরিচালিত হলেও বর্তমান সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) ফাইরুজ তাসনিম যোগদানের পর থেকে জটিলতা তৈরি হয়। ওই রাজস্ব সার্কেল অফিসে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এলআর ফান্ডের টাকা বণ্টন নিয়ে এসিল্যান্ড ও কর্মচারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বিগত দিনে এলআর ফান্ড থেকে মাস শেষে এসিল্যান্ড ৫০ শতাংশ এবং কর্মচারী, অফিস খরচ ও ওমেদারদের সম্মানী বাবদ ৫০ শতাংশ খরচ করা হতো।

এসিল্যান্ড ফাইরুজ তাসনিম যোগদান করার পর এলআর ফান্ড থেকে ৭০ শতাংশ দাবি করেন। কিন্তু ওই সার্কেলের কর্মচারীরা ৩০ শতাংশ টাকায় তাদের খরচ জোগান দেওয়া সম্ভব না বলে দাবি করেন। এসিল্যান্ড ৭০ শতাংশ টাকা ছাড়া কোনো নামজারি করবেন না বলে জানিয়ে দেন। ফলে দেড় মাস ধরে নামজারি বন্ধ হয়ে আছে। এসিল্যান্ডের আইডি থেকে দেড় মাস ধরে সেকেন্ড অর্ডার দিচ্ছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সার্কেলের এক কর্মচারী জানান, এসিল্যান্ড আসার পর ওই কার্যালয়ে ওমেদারদের অপসারণ করা হয়। এলআর ফান্ডের টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। তাই নামজারি হচ্ছে না। তবে দু-একটি নামজারি হলেও সেগুলো মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে গোপনে হচ্ছে।

একটি সূত্র জানায়, অনিয়মকে এলআর ফান্ডের নামে নিয়মে পরিণত করা হয়েছে। সরকারি অফিসগুলোতে সরকারি বরাদ্দের টাকায় এ ফান্ড থাকে। এসিল্যান্ড কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অনিয়মের মাধ্যমে নেওয়া টাকাকে এই নামে বৈধতা দিচ্ছেন।

কাঁচপুর রাজস্ব সার্কেল অফিসে সেবা নিতে আসা বরাব গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নামজারি করতে এক হাজার ১৭০ টাকা লাগে। সেখানে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে এলআর ফান্ডের নাম করে হাজার হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এলআর ফান্ডের টাকা দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে নামজারি থেকে নামজারি করতে হলে আড়াই হাজার টাকা দিতে হতো। এখন ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। মূল জোত থেকে আগে বিঘা প্রতি ৫ হাজার টাকা দিতে হতো। এখন সেটা ১১ হাজার টাকা করা হয়েছে। বর্তমান এসিল্যান্ড যোগদান করার পর থেকে এ নিয়ম করা হয়েছে। ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়গুলোতেও দ্বিগুণ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

সেবা গ্রহীতাদের দাবি, এক-দেড় মাস আগে নামজারির আবেদন করে তারা বসে আছেন। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নামজারি দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিলেও এসিল্যান্ড সেকেন্ড অর্ডার করছেন না। ফলে নামজারি করার প্রক্রিয়া দ্বিতীয় ধাপে আটকে আছে।

কাঁচপুর রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাইরুজ তাসনিমকে মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস দিয়েও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তবে নামজারির রেকর্ড খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এনকেএস/এসপি/নভেম্বর ০৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৬ নভেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test