E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

 শ্যামনগরে মন্দিরের জায়গা দখল করে দোকান ঘর নির্মাণের অভিযোগ

২০২৫ নভেম্বর ১৭ ০০:৪২:৪৭
 শ্যামনগরে মন্দিরের জায়গা দখল করে দোকান ঘর নির্মাণের অভিযোগ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আকবর মোল্লা নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে  সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুরের যশোরেশ্বরী সার্বজনীন কালীমন্দিরের জমি দখল করে ফিল্মি স্টাইলে দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। অবিলম্বে এ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে আকবর মোল্লার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।

শনিবার বিকেলে সরেজমিনে যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে যেয়ে দেখা গেছে, মন্দিরের প্রধান ফটকের প্রাচীর ঘেষে পাকা দোকানঘর বানাচ্ছেন ঈশ^রীপুর গ্রামের আলতাব মোল্লার ছেলে আকবর মোল্লা। স্থানীয় বেল্লাল, রেজাউল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, এক মাস আগে থেকে এ নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন আকবর মোল্লা।

এ নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ রয়েছে। তবে স্থানীয় স্বপন সাহাসহ কয়েকজন জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেবত্ত সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে জয়ন্ত চট্টোপাধায় ও জ্যোতি চট্টোপাধায় মন্দিরের অওেনক সম্পত্তি হসান্তর করেছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় অনেকেরই হুমকি ধামকি শুনতে হয়েছে। থানায় করা হয়েছে সাধারণ ডায়েরী।

এ ব্যাপারে রবিবার সকালে আকবর মোল্লা(৬০) মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, ওই জমি আগে মাছ বাজার ছিল। তার আগে ব্যবসা ছিল। নরেন্দ্র মোদী এ মন্দিরে আসার আগে তিনি ওই দোকান ভেঙে একটি নতুন ভিত তৈরি করেছিলেন। পরে জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়কে এক বছর আগে ঘর তৈরির কথা বলি। তিনি আপত্তি জানালে মসজিদের পাশে তাদের পাঁচ শতক জমি দিতে বলি ঈদগাহ নির্মাণের জন্য।

বিষয়টি নিয়ে কথে বলেন তার মামা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাবশালী বিএনপি নেতা সাদেকুর রহমান সাদেমের সাথে। জ্যোতি চট্টোপাধ্যায় রাজী না হওয়ায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এক শতকের একটু বেশি জমির রেকর্ড দেখিয়ে এক মাস আগে নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। তবে ওই জমি মন্দিরের নয় দাবি করে তিনি বলেন, জনৈক কেষ্ট মিত্রের জামাতা সন্তোষ সেন তার স্ত্রী শিখার নামে দানপত্র করা জমি তিনি কিনেছেন। যাহা পরবর্তীতে তহশীলদার সঞ্জয় রায়ের মাধ্যমে নামপত্তন ও খাজনা দিয়েছেন। তবে কত দাগের জমি তিনি ভোগদখল করেন তা জানতে চাইলে বাড়িতে যেয়ে দেখে যেতে বলে ব্যস্ত রয়েছেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
ঈশ^রীপুর ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের সাবেক তহশীলদার সঞ্জয় রায় জানান, আকবর মোল্লা যে জমিতে দোকান বানাচ্ছেন সেটা মন্দিরের নামে এসএ রেকডীয় জমি। কৌশলে রেকর্ড করে নিয়েছেন আকবর। ওই জমির কোন নামপত্তন বা খাজনা নেওয়া হয় না। আকবর শিখা মিত্রের কাছ থেকে যে জমি কিনেছেন দাবি করেন সেটা মন্দির থেকে উত্তর দিকে কিছুদূর যাওয়ার পর পুকুর পাড়ের সোয়া এক শতক জমি। আকবর মিথ্যাচার করে মন্দিরের জমি জবরদখল করে দোকান বানাচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।

যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরের পুরোহিত দীলিপ চক্রবর্তী জানান, আকবর মোল্লা কিভাবে মন্দিরের ফটকের সামনে দোকান বানাচ্ছেন তা জ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে জ্যোতি চট্টোপাধ্যায় নিজের গ্রাম ঈশ^রীপুরকে দেশের একটি ব্যতিক্রমধর্মী গ্রাম উল্লেখ করে রবিবার সকালে এ প্রতিবেদককে মুঠোফোন জানান, আকবরের অভিযোগ সঠিক নয়। তবে তিনি এ নিয়ে খুব শীঘ্র গ্রামে ফিরে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান। এ নিয়ে নিউজ এখনই না করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নিউজ করে ১৮ কোটি মানুষ জানলেও তাতে কি লাভ হবে! তবে মন্দিরের প্রণামীসহ পূর্ণার্থীদের দান লুটপাট সংক্রান্ত কথা বলার আগে তার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বাংলাদেশ পুজা ফ্রন্টের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য সচিব অ্যাড. অসীম কুমার মণ্ডল বলেন, যশোরেশ্বরী মন্দিরের জমির কাগজপত্র যাঁচাই করে আইনগত লড়াই করা হবে। করা হবে আকবর মোল্লার অবৈধ নির্মাণ অপসারন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের শ্যামনগর শাখার সাবেক সভাপতি রণজিৎ কুমার বরকন্দাজের ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠানো অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয় যে,সতী মায়ের ৫১ খণ্ডের এক খণ্ড ঈশ্বরীপুরে পড়ার স্থানকে ঘিরে দুই’শ বছরের আগে সেখানে গড়ে ওঠে যশোরেশ্বরী কালী মন্দির। পরবর্তীতে মহারাজ প্রত্যাপাদিত্য ওই মন্দির সংস্কার করেন। দেবত্ত সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য না হওয়ার পরও ঈশ্বরীপুরের কালিকানা চট্টোপাধ্যায় অধিকারীর ছেলে জয়ন্ত চট্টোপাধায় ও জ্যোতি চট্টোপাধায় নিয়মবহির্ভুতভাবে সার্বজনীন কালীমন্দিরের মালিকানা দাবি করে ওই মন্দিরের প্রণামী বাক্সের টাকা, বিকাশে পাঠানা টাকা ও মায়ের জন্য দানকৃত পশুপাখি পুরোহিত দীলিপ চক্রবর্তীসহ একটি বিশেষ মহলের সহায়তায় লুটে পুটে খাচ্ছেন। ওই জমি সাত শতক বিআরএস এ মন্দিরের নামে রেকর্ড থাকলেও মাপ জরিপে থাকা ৪৪ শতক জমি লাওয়ারিশ ঘোষণা করে মামলার মাধ্যমে সরকারি ঘোষণা করে মন্দিরের নামে ডিসিআর দেওয়ার দাবি জানানো হয়। ওই জমিসহ মন্দির সার্বজনীন হিসেবে হিন্দু কল্যান ট্রাষ্টের নিবন্ধনভুক্ত বলেও উল্লেখ করা হয়। একইভাবে মায়ের মাথার মুকুট খোয়া যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়।

রণজিৎ বরকন্দাজের অভিযোগের ভিত্তিতে ঈশ্বরীপুরের তৎকালিন তহশিলদার সঞ্জয় কুমার রায় এর ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কমিশানর বরাবর পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,সিএস -১ নং খতিয়ানের ২৬০ থেকে ২৬৪ দাগের ও আর এস -১নং খতিয়ানের ৪৯ শতক জমি মন্দির ও হিন্দু জনগনের ব্যবহার্য হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। সিএস -১ নং খতিয়ানের রেকডীয় মালিক ভারত সম্রাট বা দেবত্ত যশোরেশ্বরী। ঈশ্বরীপুরের কৃপানাথ চট্টোপাধ্যায় অধিকারীর ছেলে সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় অধিকারীসহ সাতজন সেবাইত ওই মন্দিরসহ দেবত্ত সম্পত্তি দেখভাল করতেন। আরএস রেকর্ডে ১নং খাস খতিয়ানে ওই জমি দেবত্তর সম্পত্তি। এসএ ৩৮৩ নং খতিয়ানের ৫টি দাগে ওই জমির শ্রেণী হিসেবে মন্দির বা হিন্দু জনগনের ব্যবহার্য বলে উল্লেখ থাকলেও রেকডীয় মালিক হিসাবে সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় অধিকারীসহ কয়েকজনকে দেখানো হয়। বিএস ৫৯৫ নং খতিয়ানে ওই জমি সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামে রেকর্ড দেখানো হয়। তবে সিএস ও আর এস ১নং সরকারি খাস খতিয়ানের দেবত্তর সম্পত্তি কিভাবে এসএ রেকর্ডে সুরেন্দ্রনাথসহ কয়েকজনের নামে রেকর্ড হলো তার কোন তথ্য বা বুনিয়াদ উল্লেখ নেই। এসএ ৩৮৩ খতিয়ানের মন্তব্য কলামে সাধারণের ব্যবহার্য জমির জন্য খাজনা ধার্য করা হলো না বলে উল্লেখ থাকে। সিএস ও আরএস জরিপে তপশীল জমি সরকাাির দেবোত্তর ও প্রতিটি দাগে শ্রেণী মন্দির ও হিন্দু জনসাধারণের ব্যবহার্য লেখা থাকে। বিএস রেকর্ডে সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় অধিকারীর নাম উল্লেখ থাকলেও তিনি এদেশে বসবাস করেন না। কালিকানা চট্টোপাধ্যায় অধিকারীর ছেলে জয়ন্ত চট্টোপাধায় ও জ্যোতি চট্টপাধ্যায় মন্দিরের মালিকানা দাবি করলেও তারা সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এর ওয়ারেশ সনদ দাাখিল করেন নি। ওই মন্দির রক্ষায় গঠিত আহবায়ক কমিটির পক্ষে কয়েকটি হিন্দু সংগঠনের নেতাদের সমর্থনের কথাটি উল্লেখ করা হয়।

(আরকে/এএস/নভেম্বর ১৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ নভেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test