E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মানা হচ্ছে না শালিসি সিদ্ধান্ত ও আদালতের নির্দেশনা

সংখ্যালঘুর জমি দখল করে কেটে ফেলা হয়েছে বেড়া ও গাছগাছালি, ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার হুমকি

২০২৫ ডিসেম্বর ০২ ১৯:৫৩:৩২
সংখ্যালঘুর জমি দখল করে কেটে ফেলা হয়েছে বেড়া ও গাছগাছালি, ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার হুমকি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা তৈরি করতে দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর ও মরপিটের ঘটনায় শালিসি সিদ্ধান্ত ও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে অবারো আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী জবরদখলের কাজ চালিয়েছে বংশীপুরের নৌ-পুলিশ বাহিনীর সিপাহী জহির গাজীর স্বজনরা। প্রতিবাদ করতে যেয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন পথচারী পান বিক্রেতা।

জেলেখালি গ্রামের তাপস পরমান্য জানান, বংশীপুরের নৌবাহিনীর সদস্য (খুলনায় কর্মরত গাড়ি চালক) জহির গাজী তার জমিতে যাওয়ার জন্য তার স্ত্রী রুবিনা ও তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা কয়েক দফায় তাদের জমির ঘেরা ও বেড়া ভেঙে, পরিবারের সদস্যদের মারপিট করে। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ও থানায় শালিসি বৈঠক হয়েছে। পুলিশ ওই হামলাকারিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে থেকে জহিরের স্ত্রী রুবিনাসহ আব্দুল। রাহ, আব্দুর রহমান, জসীম, আজিজুর কাগুচি, সাদ্দাম কাগুচীসহ কয়েকজন হাতে লাঠি, তা, শাবল, লোহার রড ইত্যাদি নিয়ে তাদের ঘেরা ও গাছগাছালি কাটতে থাকে। সরিয়ে ফেলে তাদের বিচালি গাদা। ঘেরা, বেড়া, কাটা গাছ ও বিচালী নিয়ে রুবিনা ও তাদের লোকজন তাদের (জহির) জমিতে থাকা ডোবায় ফেলে দেয়। বাধা দেওয়ায় তাদেরকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

একপর্যায়ে থানায় যেয়ে খবর দিলে উপপরিদর্শক অভীক বড়াল ঘটনাস্থলে আসেন। বিকেলে আসেন গোয়েন্দা সংস্থা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্তিতিতে শ্রীফলকাটি গ্রামের পান বিক্রেতা আলমগীর হোসেন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রুবিনা ও তার লোকজনের অত্যাচার দেখে প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্নভাবে গালিগালাজ করেন। তাকে মারতে উদ্যত হয়। আাগামিকাল তাদের গোয়ালঘর, রান্নাঘর ও কাঠঘর বেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে জহির, তার স্ত্রী ও তাদের লোকজন। এমতাবস্থায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ ব্যাপারে শ্রীফলকাটি গ্রামের আলামগীর হোসেন জানান, তিনি মঙ্গলবার বিকেলে বিষ্টু পরামান্য ও তার সন্তানদের উপর জহির বাহিনীর যে বর্বরোচিত আচরন দেখেছেন তা মানা যায় না। প্রতিবাদ করতে যেয়ে তাকে লুিঞ্ছত হতে হয়েছে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যদের সামনে।

শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক অভিক বড়াল জানান, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি জেলেখালিতে যেয়ে জহির গাজীর স্ত্রী রুবিনা ও তাদের লোকজনদের বিষ্টু পরমান্য এর ছেলেদের জমির ঘেরা ও বেড়া, গাছ গাছালি ও বিচালী গাদা অপসারণ করতে দেখেছেন। জানতে চাইলে রুবিনা জানায় যে, ওই জমি তাদের রেকডীয়। তারা বিষ্টু পরমান্যের ছেলে ও স্বজনদের ১০ জনের নামে গত ২৭ নভেম্বর মামলা করেছেন। নিজের জমি বলে দাবি করে তারা ওইসব কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন।

এ ব্যাপারে শ্যামনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, বিষ্টু পরমান্যের চার ছেলের রান্নাঘর ও কাঠঘর ভেঙে বংশীপুরের নৌবাহিনীর সদস্য(খুলনায় কর্মরত গাড়ি চালক) জহির গাজী তার জমিতে যাওয়ার জন্য সোনাবাহিনীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে শালিসি রৈঠকের সিদ্ধান্ত মানেননি তারা। একপর্যায়ে গত ৭ ও ৮ অক্টোবর তাদের (বিষ্টু) ঘেরা ও বেড়া ভেঙে ফেললে তারা বাধা দেন। জহির গাজীর স্ত্রী রুবিনা, ভাই জসিম ও তার ছেলেদের হামলায় তাদের বাড়ির তিন গৃহবধু আহত হন। এ ঘটনায় ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় থানার গোলঘরে বসাবসির একপর্যায়ে সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা সামিউল আযম মনির ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মোল্লা তাদেরকে বলেন যে, আগামি ফেব্রুয়ারি মাসে রান্না ঘর ও কাঠ ঘরের কিছু অংশ ভেঙে নিতে হবে। সেজন্য জমি বাবদ জহির গাজী তাদেরকে আড়াই লাখ টাকা দেবেন। আর ওই হামলার জন্য কোন মামলা করা যাবে না।

এ কারণে তাপস পরমান্য ৮ অক্টোবর এডিএম কোর্টে জহির, রুবিনাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেেলও তাৎক্ষণিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তীতে নোটিশ করা হলেও বিবাদীপক্ষ মানছেন না। এরপর থেকে তারা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছিলেন। কিন্তু ২৯ অক্টোবর বুধবার বিকেলে জহির গাজীর স্ত্রী, জহির গাজীর ভাই জসিম গাজী, জসিমের স্ত্রী ও তাদের তিন সন্তান তাদের জমির গাছ গাছালি, ঘেরা ও বেড়া কেটে ফেলে । বাধা দেওয়ায় কাজললতা পরমান্য ও মেয়ে সুমিত্রা মন্ডলকে পিটিয়ে জখম করা হয়। তাদেরকে নিয়ে থানায় যাওয়ার সময় বংশীপুর এলাকায় জহির গাজীর লোকজন বাধা দেয়। তাদেরকে থানা থেকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়।

পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জমিতে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে কেন তা জানতে চেয়ে ধর্মদাস পরামান্য ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনদের থানায় আটক রাখার হুমকি দেন। ধর্মদাস থানায় অভিযোগ না দিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। ৩০ অক্টোবর বৃহষ্পতিবার সকালে রুবিনা খাতুন, জসীম গাজী, তার স্ত্রী ও তিন সন্তান তাদের সীমানা প্রাচীর ভাংচুর করে গাছ কাছালি কেটে দেয়। বাধা দেওয়ার তাদের পরিবারের বাসন্তী পরমান্য, অনিতা পরমান্য, বিভা পরমান্য, কাজললতা পরমান্য ও সুমিত্রা মন্ডলকে পিটিয়ে জখম করা হয়। সশস্ত্র হামলাকারিদের ভয়ে তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি স্থানীয় বিশিষ্ঠজনদের অবহিত করা হয়। জাননো হয় সাংবাদিক সামিউল মনিরকে। এরপর থেকে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। তাদের (বিষ্টু) উপর হামলা চালিয়ে রুবিনা তাপস পরমান্যসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা করে। যাহা পিবিআই তদন্ত করছে। বিষয়টি ঈশ্বরীপুরের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতাকে জানালে তিনি সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

পহেলা নভেম্বর সাদেম চেয়ারম্যান তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিষয়টি যাতে সাংবাদিকরা আর না লেখালেখি করে সেজন্য তাদেরকে সতর্ক করা হয়। রবিবারের হামলার পর তাপস আরো সাদেম চেয়ারম্যানকে আশ্বস্ত করেন। সাদেম চেয়ারম্যান বিষয়টি অবহিত করেন বিএনপি মনোনীত সাংসদ প্রার্থী ড. মনিরুজ্জামানকে। ছেলের উপবৃত্তির টাকা তোলার জন্য ২ নভেম্বর রবিবার শ্যামনগর সদরে যান বিষ্টু পরমান্যের ছোট ছেলে তাপস পরমান্য ও তার স্ত্রী বিভা পরমান্য। দুপুর ১২টার দিকে তারা বাধঘাটায় একটি দোকনের সামনে অবস্থানকালে বংশীপুরের জহির গাজীর ভাই জসিম গাজী ও তাদের দুই ছেলেসহ ৪/৫ জন জমিতে যাওয়ার জন্য রাস্তা নির্মানে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাপস ও বিভাকে এলোপাতাড়ি কিল, চড় ও ঘুষি মারে। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক ও পুলিশকে জানাজানি করলে তাদের বাংলাদেশে বসবাস করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। খবর পেয়ে শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক সুদেব পাল তাদেরকে উদ্ধার করে জেলেখালিতে রেখে যান।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ০২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০২ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test