E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

চাকরি দিতে ঘুষ নিলেন প্রধান শিক্ষক, ফেরত চাইলে ভয় দেখান এসিল্যান্ডের 

২০২৫ ডিসেম্বর ০৭ ১৮:৫৮:২৬
চাকরি দিতে ঘুষ নিলেন প্রধান শিক্ষক, ফেরত চাইলে ভয় দেখান এসিল্যান্ডের 

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দিতে ২ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু নিয়োগটি স্থগিত হওয়ার পর ভুক্তভোগী টাকা ফেরত চাইলে প্রধান শিক্ষক ভয় দেখান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহকারী কমিশনারের (ভূমি)।

এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জে জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে।

এব্যাপারে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) উপজেলার দক্ষিণ কুশলী গ্রামের ইয়ার আলী শেখের ছেলে আরিফুল শেখ (২৫) টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শংকর সাহা কুশলী খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ে ২০২৩ সালে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সহ কয়েকটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন চাকরি পাওয়ার জন্য আরিফুল স্থানীয় কয়েকজন মুরব্বিদের নিয়ে প্রধান শিক্ষক শংকর সাহার সাথে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। একদিন পর নগদ ২ লক্ষ টাকা দুইজন সাক্ষীর মাধ্যমে গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক। তারপর কোন কারণে নিয়োগটি স্থগিত হয়ে যায়। এরপর আরিফুল টাকা ফেরত চাইলে নিয়োগ হবে হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। কয়েকমাস পর প্রধান শিক্ষক শংকর সাহাকে টাকার জন্য চাপ দিলে তৎকালীন সভাপতি শেখ নাদির হোসেন লিপুর ভয় দেখাতো। আর এখন টাকা ফেরত চাইলে বর্তমান সভাপতি টুঙ্গিপাড়া সহকারী কমিশনারের (ভূমি) ভয় দেখান।

ভুক্তভোগী আরিফুল শেখ বলেন, ২০২৩ সালে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য প্রধান শিক্ষক শংকর সাহার সাথে যোগাযোগ করি‌। তখন চাকরির জন্য ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ চায়। পরে স্থানীয় দুইজন সাক্ষীর মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা নেয় শংকর সাহা। কিন্তু নিয়োগ না হওয়ায় আগে টাকা ফেরত চাইলে তৎকালীন সভাপতি শেখ নাদির হোসেন লিপুর ভয় দেখাতো। আর এখন বর্তমান সভাপতি এসিল্যান্ড স্যারের ভয় দেখায়। এছাড়া ভূয়া সনদে শিক্ষক নিয়োগ সহ আরও অনেক দুর্নীতি রয়েছে যা তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে। টাকা ফেরত সহ দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক শংকর কর সাহার অপসারণ দাবি করি।

২ লক্ষ টাকা দেয়ার সাক্ষী স্থানীয় মুরব্বি ফেরদৌস আলম বলেন, আরিফুলের চাকরির জন্য প্রধান শিক্ষক শংকর সাহার সাথে ৫ লক্ষ টাকার কথা হয়। তখন আরিফুলের পরিবার আমি ও আরেক মুরব্বি হাফিজ শিকদারের উপস্থিতিতে শংকর সাহাকে নগদ দুই লক্ষ টাকা দেয়। নিয়োগ স্থগিতের পর টাকা ফেরত চাইলে প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতে থাকেন আরিফুলকে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও প্রধান শিক্ষক তাতে সাড়া দেননি। আর তিনি টাকা নেওয়ার কথাও অস্বীকার করছেন।

তিনি আরও বলেন, ভেবেছিলাম ভদ্রলোক মানুষ, চাকরি না দিলে টাকা তো অবশ্যই ফেরত পাওয়া যাবে। কিন্তু উনি এতো খারাপ বুঝতে পারিনি। এখন টাকা ফেরত চাইলে প্রশাসন দিয়ে হেনস্তা করা সহ নানা রকম হুমকি দেয়। তাই এলাকার মানুষ ভয়ে তাকে কিছু বলছে না। এছাড়া বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ জরুরি।

এবিষয়ে কুশলী খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর সাহা চাকরির জন্য টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আরিফুল আমার বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলো, সেইভাবে ওকে চিনি। কিন্তু চাকরির কথা বলে ওর কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি সময় না দেয়ায় ৩ বার চেষ্টা করেও নিয়োগটি সম্পন্ন করতে পারিনি। আর কাউকে কোন ভয় দেখাইনি।

টুঙ্গিপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বর্তমান ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আল-আমিন হালদার বলেন, লিখিত অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। যদি প্রধান শিক্ষক কাউকে প্রশাসনিক ভয় দেখিয়ে থাকে তাহলে সেটাও অপরাধ। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(টিবি/এএস/ডিসেম্বর ০৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test