E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ঝিনাইদহ যেন ইজিবাইকের শহর

২০২৫ ডিসেম্বর ১০ ১৮:৩৪:৫৫
ঝিনাইদহ যেন ইজিবাইকের শহর

হাবিবুর রহমান, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ শহরে প্রবেশ করলেই এখন চোখে পড়ে অসংখ্য ইজিবাইক, অটোরিকশা আর ব্যাটারিচালিত ছোট যানবাহনের সারি। যেন পুরো শহরটাই এখন ইজিবাইকের দখলে। সকাল থেকে রাত একটানা ছুটে চলছে এসব যান, শহরের মানুষের যাতায়াতকে যেমন সহজের চেষ্টা করছে, তেমনি বাড়িয়ে তুলছে সড়কের চাপ, যানজট আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

শহরের মর্ডাণ মোড়, পুরানো ডিসি কোর্ট এলাকা, আরাপপুর বাসস্ট্যান্ড, শহীদ মিনারসহ যে মোড়েই দাঁড়ানো হোক, সেখানেই ইজিবাইকের দাপট স্পষ্ট। পৌরসভার তথ্য মতে, শহরে নিবন্ধিত ইজিবাইকের সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৫০০ হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা দশগুণেরও বেশি। অনেক চালকই ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিংবা কিস্তিতে গাড়ি কিনে রাস্তায় নামিয়েছেন। ফলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে জেলা শহরের পরিবহন ব্যবস্থা।

ইজিবাইক চালকদের দাবি, শহরে অন্যান্য গণপরিবহন কম হওয়ায় তাঁরা মানুষের যাতায়াতকে সহজ করে তুলছেন। অন্য যানবহনের চেয়ে ভাড়া তুলনামূলক কম, যাত্রী ওঠা নামার সুবিধাও বেশি, বিশেষ করে নারী, ছাত্রছাত্রী ও বয়স্কদের জন্য ইজিবাইক এখন নির্ভরযোগ্য বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে অন্যদিকে ভোগান্তিও কম নয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। সংকীর্ণ সড়কের ওপর একই সঙ্গে অনেকগুলো ইজিবাইক নেমে পড়লে ঘন্টার পর ঘন্টা জট লেগে থাকে। ফুটপাত দখল, এলোমেলো পার্কিং, উল্টোপথে চলাচল এসব এখন নিত্যদিনের দৃম্য। স্কুল-কলেজ ছুটির সময় শহরের ব্যস্ত এলাকায় তৈরি হয় তীব্র যানজট। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সড়ক অবরুদ্ধ থাকায় দোকানে ক্রেতা কমে যাচ্ছে।

শহরেরর হামদহ এলাকার বাসিন্দা আবিদুর রহমান বলেন, ‘শহরে বর্তমানে ইজিবাইক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অদক্ষ চালকদরে কারণে সবসময় যানজট লেগে থাকছে। এছাড়াও মাঝে মধ্যে দূর্ঘটনাও ঘটছে। ভোগান্তির কারণ না হয় এমন পরিবহনের ব্যবস্থা করা আমাদের শহরে জরুরি হয়ে উঠেছে। যাতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে।

জেলা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের শহরে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করা সম্ভব নয়। বরং সুনির্দিষ্ট রুট নির্ধারণ, নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, ব্যাটারি ও চার্জিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এসব পদক্ষেপ নিলে শহরে ইজিবাইকের যানজটসহ বিশৃঙ্খলা অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি শহরে বিকল্প পরিবহনের ব্যবস্থা না করলে ইজিবাইকইসহ ব্যাটারিচালিত যান মানুষের প্রধান ভরসা হয়ে থাকবে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া উচিত।’

ঝিনাইদহের ট্রাফিক পরিদর্শক মো. মসিউর রহমান বলেন, শহরে ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। তবে সংখ্যার তুলনায় চালকরা এত বেশি যে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও আমাদের পক্ষে পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। অনেক যানবাহনে লাইসেন্স নেই, নেই বৈধ কাগজপত্র, এমনকি অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকের সংখ্যাও কম নয়। ফলে শহরে দুর্ঘটনা বাড়ছে। গত কয়েক মাসে শহরের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ব্যাটারিচালিত যানবাহনের সঙ্গে জড়িত ছিল।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসক রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘আমাদের পৌর কর্তৃপক্ষ মাত্র ২ হাজার ৫০০ ইজিবাইক চালককে লাইসেন্স প্রদান করেছে। তবে শহরে এর কয়েকগুণ বেশি ইজিবাইক চলাচল করছে। এ নিয়ে আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি। এছাড়াও মাসিক সমন্বয় সভায় এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে শহরের ইজবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার। আশা করছি সকলের প্রচেষ্টায় শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান ঘটবে।’

(এইচআর/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১১ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test