E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

স্বাক্ষী নেই-দলিল নেই, দখলদারের শক্তিতে উত্তরাধিকারীরা বঞ্চিত

২০২৫ ডিসেম্বর ১২ ১৭:৫০:৫০
স্বাক্ষী নেই-দলিল নেই, দখলদারের শক্তিতে উত্তরাধিকারীরা বঞ্চিত

নেত্রকোণা প্রতিনিধি : ভূমি মালিকানার সাধারণ শর্ত সমূহ, যেমন- দলিল, বি.আর.এস খতিয়ান, এস.এ খতিয়ান, নামজারি-ইত্যাদি কিছু থাকার পরও কেবল ভোগদখলকারীদের কারণে তিন প্রজন্মের বসতবাড়িতে উত্তরাধিকারের অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নেত্রকোণা পৌরসভার নিশিকান্ত সাহার পুত্রগণ। এ সংক্রান্ত মামলা চলমান থাকলেও এরই মাঝে ডিসেম্বরে আদালতের শীতকালীন অবসরের সুযোগে প্রশাসনের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে রাতের অন্ধকারে পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন বিবাদী পক্ষ।

দখলকৃত ভূমির মালিকানার সপক্ষে ভোগদখলকারী পক্ষের মিলন কুমার সাহা জানান- প্রায় ৩০ বছর আগে ১৯৯৫ সালে এই জমি তার ভাই নিশিকান্ত সাহা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেই কেনা-বেঁচা সংক্রান্ত কোন প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান- কোন দলিল নেই, স্থানীয় ভাবে একটি ‘দরবারে’র মাধ্যমে কেবল মৌখিকভাবেই এই জমি বিক্রি হয়েছিলো। সেই দরবারের উপস্থিত স্বাক্ষীদের নাম জানতে চাইলে তিনি জানান- বর্তমানে স্বাক্ষীদের কেউ’ও বেঁচে নেই। কোন স্বাক্ষীই কি বেঁচে নেই? প্রতিনিধির এমন প্রশ্নে উত্তরে মিলন সাহা জানান যে- দুইজন স্বাক্ষী বেঁচে থাকলেও তারা বয়সের ভারে নূজ্য, কোন প্রকার আলোচনায় বসতে অক্ষম।

এদিকে ২০০৮ সালে মৃত নিশিকান্ত সাহা রায় পরিবারের কেউ এই ভূমিতে নিজেদের অংশ বিক্রির কথা অস্বীকার করছেন। বিক্রির পর প্রায় ১৩ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও কেন জমিটির দলিল করে নেয়া হয়নি জানতে চাইলে মিলন কুমার সাহা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। বরং নিশিকান্তের পরিবারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই বিষয়ে বাদানুবাদে সেই ১৩ বছরে নিশিকান্তের হাত একবার ভেঙে দিয়েছিলেন তার ভাইয়েরা। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নিশিকান্তের বিবাহযোগ্যা মেয়ে, অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলের নামে বিভিন্ন কুৎসা রটনা ও নারী কেলেংকারীর মামলা দিয়ে হেনস্তা করেছে পরিবারগুলো।

ঘটনার প্রেক্ষিত জানতে আমাদেরকে যেতে হবে আজ থেকে বছর ত্রিশেক আগের এ সময়ে। এক সময়ের ‘সোনালী আঁশ’- পাটের ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে একসময় নেত্রকোণা পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় নিখিলনাথ রোডের পাটপট্টি এলাকা। এখান থেকেই সরাসরি নদী পথে সমগ্র মহাকুমার পাটের ব্যাবসায়ীরা বিভিন্ন বন্দরে প্রস্তুতকৃত পাটের জোগান দিতেন। পাটের সেই স্বর্ণযুগে নেত্রকোণার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন ‘জগৎ কিশোর সাহা রায়’ এর সাত পুত্রসন্তান। সাত ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়, ‘নিশিকান্ত সাহা’ ছিলেন সবচেয়ে পরিশ্রমী ও মেধাবী। সেকালের প্রখ্যাত আদমজী সহ বিভিন্ন পাটকলের সাথে ছিলো তার ব্যাবসায়িক চুক্তি। এক পর্যায়ে চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে সম্পত্তির একটি অংশ নিজ নামে কিনে সেখাইনেই ব্যাক্তিগত গুদাম ও বসতবাড়ি তৈরি করে পরিবার নিয়ে বাস করতেন নিশিকান্ত। পাশেই নিজ- ভাইদের সঙ্গে পারিবারিক যৌথ সম্পত্তি। তার আশা ছিলো পরবর্তীতে সঠিক বাটোয়ারার মাধ্যমে বন্টন হলে পারিবারিক সম্পত্তি থেকে নিজ অংশ প্রাপ্তির মাধ্যমে সারাজীবনের পরিশ্রমের ফসল দিয়ে একটি মান-সম্পন্ন আবাস তিনি সন্তানদের জন্য নির্মাণ করবেন।

মৃত নিশিকান্তের পরিবার সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, মূলত নিজ মালিকানায় নবনির্মিত ঘরের ‘গৃহ প্রবেশের’র দিন থেকেই বিবাদের শুরু হয়। ২৩ শতাংশ ভূমির এক তৃতীয়াংশ নিজ নামে ক্রয় করে পৃথক বসত নির্মাণকে ভালো চোখে কখনোই দেখতে পারেনি দখলদার ভাইয়েরা। মূলত ব্যাবসায়ে সমান পারদর্শীতার অভাবে সমান সাফল্য না পাবার হিংসাই এর পেছনের মূল কারণ বলে মনে করেন নিশিকান্তের পরিবার। সেদিনই তারা ঘরের সীমানা বরাবর খুঁটিঁ দিয়ে বিপত্তির সূচনা করেন। কিন্তু গৃহ প্রবেশের আচার-অর্চনা থাকায় তখন বাধা দিতে পারেনি নিশিকান্তের পরিবার।

নিশিকান্তের পুত্রদের দাবি অনুযায়ী দাবিকৃত ভূমিতে সব কয়টি পরিবার তাদের ক্রয়কৃত ভূমি ব্যবহারের জন্য তৈরি রাস্তা ব্যাবহার করলেও দিন দিন তারা সেই পথকেও নানান ভাবে অবরুদ্ধ করে ফেলার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও নানান সময়ে নানান মিথ্যা মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা তাদের উত্তরাধীকার সূত্রে প্রাপ্য ভূমির অংশ থেকে বছরের পর বছর বঞ্চিত করে রেখেছে। চলতি ডিসেম্বর মাসে একটি পক্ষ মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থাতেই সেখানে স্থায়ী নির্মাণকাজ শুরু করলে নিশিকান্তের পরিবার প্রশাসনের সহায়তায় বাধা দান করলেও প্রশাসনের নির্দেশকে অমাণ্য করে অপর পক্ষের রাতের অন্ধকারে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিও সরবরাহ করেছে। আর আইনী বেড়াজালে মেজিস্ট্রেট কোর্ট বর্তমান দখলদারকে দখলচুত্য না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় নিশিকান্তের পরিবার কোন প্রকার বাধাও প্রদান করতে পারছে না।

(টিবি/এএস/ডিসেম্বর ১২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১২ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test