E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

অবরুদ্ধ সুনীল মণ্ডলের বাড়ি পরিদর্শন করলেন কালিগঞ্জ সহকারি কমিশনার

২০২৫ ডিসেম্বর ১৫ ১৩:৫৯:০৫
অবরুদ্ধ সুনীল মণ্ডলের বাড়ি পরিদর্শন করলেন কালিগঞ্জ সহকারি কমিশনার

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : কাটা তারের বেড়া ও ইটের প্রাচীর দিয়ে  গত চার দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল বাজারের সুনীল মণ্ডলের বাড়ি রবিবার দুপুরে সরেজমিনে পরিদর্শণ করেছেন কালিগঞ্জ সহকারি কমিশনার (ভূমি) মইনুদ্দিন খান। অবরুদ্ধকারিরা  তার কাছে বিষয়টি স্বীকার করলেও অবরোধ অপসারনের ব্যাপারে আদালতে রায় এর ধার্য দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।

এদিকে রবিবার জেলা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সভায় জেলা পুজা ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. অসীম মণ্ডল সুনীল মণ্ডলের পরিবারকে অবরুদ্ধ করে দেওয়া, শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের প্রধান ফটকের কাছে মন্দিরের জমি দখল করে আকবর মোল্লা ও বেল্লাল হোসেনের অবৈধ দোকান ঘর নির্মাণ, জেলেখালিতে বিষ্টু পরমান্য এর চার ছেলের কাঠের ঘর ও রান্না ঘর ভেঙে, গাছগাছালি কেটে, পরিবারের সদস্যদের বার বার মারপিট করে নৌপুলিশ সদস্য বংশীপুরের জহির গাজীর জোরপূর্বক রাস্তা নির্মানের বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

চম্পাফুল কালীবাড়ি গ্রামের মাধবী মণ্ডল জানান, ৮৮ ও ৯১ দাগের এক একর ৫ শতক অর্পিত সম্পত্তি ওয়ারেশ সূত্রে অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ও ডিক্রি পাওয়ার পর তার স্বামীর নামে গেজেট হয়। ওই জমি অবমুক্তির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। ২৮ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মঈনুল ইসলাম মঈন বিবাদী পক্ষ সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেয়। পরবর্তী ধার্য দিন ২৩ নভেম্বর ধার্য থাকলেও ওই দিন আদালত বসেনি। ফলে নিয়ম অনুযায়ি স্থিতাবস্থা বহাল থাকে। পরবর্তীতে ২৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়। ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সামাদ গাজী তাদের (মাধবী) জমিতে একটি টিনের ঘর বানিয়ে তাতে চারটি সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে কাঁটা তারের বেড়া ও ইট দিয়ে প্রাচীর নির্মান করে তাদের বাড়ির প্রবেশ পথ, টিউবওয়েল, তুলসী মন্দিরসহ সকল পথ বন্ধ করে দেয়। তিনি সকাল ১১ টার দিকে বিষয়টি নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আক্তারকে ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তারা কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ১২ ডিসেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মঈনুদ্দিন মঈনকে অবহিত করেন। দুপুরে চম্পাফুল ইউনিয়ন ভ‚মি কর্মকর্তা মুকিত হোসেন ও অফিস সহকারি পরিতোষ মণ্ডল ঘটনান্থলে এসে সামাদ গাজীকে বিরোধপূর্ণ জমিতে কাজ না করার জন্য বলে যান। রাতে কালিগঞ্জ থানার উপরিদর্শক মহিদুল ইসলাম একইভাবে সামাদ গাজীকে নিষেধ করেন। এরপরও ১৩ ডিসেম্বর সকালে আবার ও কাজ শুরু করলে তাদের সঙ্গে সামাদ গাজী ও তার শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের বচসা হয়। একপর্যায়ে চম্পাফুল ইউনিয়ন ভ‚মি কর্মকর্তা মুকিত হোসেনের নির্দেশ অনুযায়ি রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কালিগঞ্জ সহকারি কমিশনারের অফিসে যান। সেখানে যেয়ে খবর পান যে সহকারি কমিশনার তাদের বাড়িতে গেছেন। বাড়িতে ফিরে তিনি অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির দাবি করলেও তিনি বিভিন্ন কথা বলে আগামি ধার্য দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের সরকারি কৌশুলী অ্যাড. অসীম কুমার মণ্ডল (১) জানান, স্থিতাবস্থা ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকলে ওই দিন বাদিপক্ষ হাজিরা দেওয়ার পর আদালতের কার্যক্রম না হলে নিয়ম অনুযায়ি ওই স্থিতাবস্থার আদেশ বহাল থাকে। সেক্ষেত্রে সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীর সুনীল মণ্ডলের রায়, ডিক্রী ও গেজেটভুক্ত তিন বিঘা অর্পিত সম্পত্তি প্রাচীর ও কোটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলে অবরুদ্ধ করা আদালত অবমাননার শামিল।

এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ সহকারি কমিশনার (ভূমি) মঈনুদ্দিন খান জানান, তিনি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। ইটের প্রাচীর ও কাটা তারের বেড়া দিয়ে গত ১১ ও ১২ ডিসেম্বর সুনীল মণ্ডলের বসতবাড়িসহ দখলীয় বেশকিছু জমি ঘিরে ফেলার কথা তার কাছে স্বীকার করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর স্থিতাবস্থা সংক্রান্ত আদেশ গত ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত বহাল ছিল বলে দাবি করেন আলমগীরের আইনজীবী অ্যাড. তরুন বন্দোপাধ্যায়। সুনীল মণ্ডলের ৪১ শতক জমি ব্যতীত বাকী জমি নামপত্তন করে বর্তমানে আলমগীর কবীরের নামে রেকর্ড করা হলেও ওই জমির নামপত্তন বাতিল বা রেকর্ড সংশোধনের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি সুনীল মণ্ডল। যে কারণে বর্তমান অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান না ঘটিয়ে আগামি ধার্য দিন পর্যন্ত জমিতে আর কোন কাজ না করার জন্য সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরকে বলা হয়েছে। তবে অবরুদ্ধ করার বিষয়টি অমানবিক বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ আগষ্ট থেকে ২৮ আগষ্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধাভোগী হত্যা, ধর্ষণ ও ঘর জ্বালানো মামলার আসামী সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীরের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন ভাড়াটিয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসী সুনীল মণ্ডলের দখলীয় ও পৈতৃক জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে তিন লক্ষাধিক টাকার ফলজ ও বনজ গাছ এর পাশাপাশি ফসলাদি লুটপাট করে ওই পরিবারের যাতায়াতের সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে চারি ধারে বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করলে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সাব্বির আহম্মেদ ও সিপাহী কামরুল ইসলামকে শোকজ করে ১৯ আগষ্ট আদালতের কাঠগোড়ায় ডাকা হয়।গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে থাকাকালিন সুনীল মণ্ডলের বসতবাড়ি সংলগ্ন কাঠঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।

(আরকে/এএস/ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test