E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা 

রাষ্ট্রীয় মযার্দায় দাফন হলেও মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

২০২৫ ডিসেম্বর ২৮ ২০:০৪:৩৭
রাষ্ট্রীয় মযার্দায় দাফন হলেও মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হলেও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সমর্থক না হওয়ায় এক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেটভুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও গেজেটভুক্ত না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ বিল্বগ্রাম এলাকার।

জানা গেছে, ওই গ্রামের বাসিন্দা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন সরদার ২০০৪ সালের ৩ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। তবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হলেও রহস্যজনক কারনে তাকে গেজেটভুক্ত করা হয়নি।

রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন-আমার বাবা একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের সকল কাগজপত্র তার রয়েছে। তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফনও করা হয়েছে। তিনি জীবিত থাকাকালীন গেজেটভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেও গেজেটভুক্ত হতে পারেননি। পরবর্তীতে আমার বাবা মারা যাওয়ার পর ২০১৪ সালে তাকে গেজেটভুক্ত করার জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য আমার বাবাকে বিএনপি-জামায়াত আখ্যা দিয়ে বাছাই তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন।

অভিযোগ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন-একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হওয়ায় আমার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আমাদের দাবি এই বিজয়ের মাস উপলক্ষে আমার বাবাকে যেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় অথবা তাকে যে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে তা যেন বাতিল করা হয়।

অপরদিকে উপজেলার সরিকল গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের গেজেট ব্যবহার করে মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা আরেক নুরুল ইসলাম নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে ভাতা উত্তোলণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরিকল গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের ছেলে নাসির হোসেন অভিযোগ করে বলেন- আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ২০২০ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানির টাকা উত্তোলন করেছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুলাদী উপজেলার গাছুয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি স্থানীয় কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার ক্ষমতার প্রভাবে আমার বাবার গেজেট ব্যবহার করে ভাতা উত্তোলন করে আসছেন।

তিনি আরও বলেন, এনিয়ে আমি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ একাধিকস্থানে অভিযোগ করেছি। সর্বশেষ এবিষয়ে সমাধান পেতে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেছি। পরবর্তীতে বিষয়টি তদন্তের জন্য গৌরনদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তদন্তের জন্য ডাকা হয়নি।

মুলাদীর গাছুয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার বলেন-আমি আমার গেজেট দিয়ে ভাতা উত্তোলণ করছি। তবে মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা হয়ে কিভাবে গৌরনদী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ভাতা উত্তোলন করছেন, সেবিষয়ে তিনি কোন সদূত্তর দিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. ইব্রাহীম বলেন-বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হওয়ার আবেদন বন্ধ রয়েছে। চালু হওয়ার পর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সঠিক প্রমানিত হলে মরহুমে মো. আনোয়ার হোসেন সরদারের নাম গেজেটভুক্ত করা হবে। এছাড়া সরিকল গ্রামের প্রয়াত নুরুল ইসলামের ছেলের দায়ের করা আবেদনের তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হবে।

(বি/এসপি/ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test