E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

গোপালগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৫ ডিগ্রি  

২০২৫ ডিসেম্বর ৩১ ১৮:৩৯:২৭
গোপালগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৫ ডিগ্রি  

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা আবহাওয়া অফিস জানায়, মঙ্গলবার ভোর ৬টায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, এটি চলতি মৌসুমের সারা বাংলাদেশ ও গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে সর্বনিম্ন। ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড শীতে গোপালগঞ্জের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউই। সড়ক মহাসড়কগুলোতে দিনের বেলাও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। এছাড়া প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে বোরো ধান রোপণে ব্যাঘাত ঘটছে কৃষকদের। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে গোপালগঞ্জে শীতের দাপট শুরু হয়। ওই দিন থেকে সূয্যের দেখা মেলেনি। সেটি অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে সূর্যের দেখা মেলে। তারপর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও শীত কমেনি।

এদিকে জেলাজুড়ে শীত জেঁকে বসায় ছিন্নমূল, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট চরম আকার ধারণ করেছে। শিশু- বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

গোপালগঞ্জ আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান জানান, গতকালের তুলনায় আজ তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সোমবার গোপালগঞ্জে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি। বুধবার সকালে বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। কুষাশার দৃষ্টিসীমা ২শ’ মিটার বিরাজ করছিল।

ওই কর্মকর্তা বলেন, শীত মৌসুমে এ ধরনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলেও সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপ মাত্রার মধ্যে ১০ ডিগ্রি পার্থক্য থাকলে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়। এখানে গত কয়েক দির ধরে তাই হয়েছে। এটিকে আমরা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করছি। সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকার আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আগামী দুই দিন এ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

আবু সুফিয়ান আরো জানান, দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সূয্যের দেখা মেলে। তারপর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। বিকাল ৩ টায় গোপালগঞ্জের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। শুক্রবারা থেকে জেলার তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে।তখন থেকে শীত কিছুটা কমবে। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিকে আরেকটি শৈত্য প্রবাহের আভাস দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের লখন্ডা বিলের কৃষক দিজবর বাড়ৈ (৬০) বলেন, শীতের চোডে মইরগে যাইতেছি। মাডের কাম হরতে পারছিনে। মাডে নামলে শীতের চোডে ঠক ঠক হইরগে কাপতি হয়। কাম হরা যায় না। তাই বাড়ি বইসকে রইছি। কোন কামাই নাই।

তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষজন। ভ্যানচালক মিলু মুন্সি (৫৮) বলেন, ১২ টা বাজে দুই ঘণ্টা হয় বের হইছি আগে আরও সকাল সকাল বের হতাম। একে তো শীতে লোকজন বাইরে বের হয় না। আর ভ্যানেও লোকজন উঠতে চায় না বাতাস লাগে। ইজি বাইক আর রিকশায় বেশি ওঠে। শীতের কারনে কামাই অর্ধেক ও নাই, বাইচে থাকাই কষ্ট। সন্ধার পর শহরে মানুষ আরো কমে যায় তাই আগে আগে বাড়ি চলে যাই।

ছিন্নমূল রমজান আলী (৫০) বলেন, কতদিন ধইরে শীত যাচ্ছে। রাস্তায় থায়ি। শ্যাষ রাইতে জম্ভের শীত করে। কষ্টের শ্যাষ নাই। কাজ নাই। রড় কষ্টে আছি।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ আরিফ-উজ-জামান বলেন, শীতজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শীতার্ত মানুষের জন্য কম্বল বিতরণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং তা চলমান রয়েছে। পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কোথাও কেউ শীতজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে বা সহায়তার প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে সহযোগিতা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। জেলা প্রশাসন ওভারঅল পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবীতেষ বিশ্বাস বলেন, ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু রোগী এখনও হাসপাতালে আসতে শুরু করেনি। তবে শীত আরও কয়েকদিন স্থায়ী হলে শিশুরাও শীতে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি শিশুদের গরম কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রেখে ঠাণ্ডা না লাগানোর পরামর্শ দেন।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test