E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

দিনাজপুরে ব্যাঙের বিয়ে

২০১৫ আগস্ট ০৮ ২১:৪০:৫৭
দিনাজপুরে ব্যাঙের বিয়ে

দিনাজপুর প্রতিনিধি : ব্যাঙের বিয়ে, সেটাও আবার মহাধুমধামে। হিন্দুরীতি অনুসারে বিয়ের জন্য ছায়ামণ্ডপ, পুস্পমাল্য, গায়ে হলুদ, আর্শীবাদের ধান-দূর্বা, খাওয়া সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিলো এই বিয়েতে। শুধু তাই নয়, বিয়েতে আমন্ত্রিতরা ব্যাঙ দম্পত্তিকে দিয়েছেন নগদ অর্থসহ বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী।

অভিনব এই ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৬নং ভান্ডারা ইউনিয়নের ভারাডাঙ্গী বেতুরা পশ্চিমপাড়া এলাকায়। এলাকাবাসী জানিয়েছে, যখনই অনাবৃষ্টির কবলে পড়েন সেই বছরই তারা বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের এই ধরনের বিয়ে দিয়ে থাকে। আর এই রীতি তারা পালন করছেন শতবর্ষ পূর্ব থেকেই। তবে আয়োজকরা জানায়, হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়নে বর্ণিত বৃষ্টির দেবতাকে খুশি করার জন্য সেই সময়ে ব্যাঙের বিয়ের প্রচলন ছিল। ত্রেতা যুগের সেই ধারা অনুসারে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে থাকে ওই এলাকার বাসীন্দারা। তাদের বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টির দেবতা খুশি হয়ে বৃষ্টি দেন।

শনিবার দুপুরে এই ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার দুপুর প্রায় পৌনে ১ টার দিকে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের নারী-পুরুষ মিলে সকলেই একত্রে হয়ে দু’টি ব্যাঙকে বিয়ের জন্য গায়ে হলুদের আয়োজন পালন করছেন। আর তার পার্শ্বে চলছে খাওয়া-দাওয়ার জন্য রান্নার কাজ। বিয়ের অনুষ্ঠানের কিছুদুরে পশ্চিম দিকে চলছে বাজনা আর তার সাথে সাথে নৃত্য করছেন অনেকেই।

গ্রামবাসীদের মধ্যেই কিছু লোক কনেপক্ষের আবার কিছু লোক বরপক্ষের। গায়ে হলুদের কার্যক্রম শেষ হলে শুরু হয় বিয়ের কার্যক্রম। ব্যাঙ দুটিকে তেল-সিঁদুর মাখিয়ে গোসল করানোর পর বসানো হয় বিয়ের পিড়িতে। মালাবদলসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় পালন করা হয় বিয়ে। বিয়ে শেষে বরকনেকে বসানো হয় আরেকটি স্থানে। সেখানে বরপক্ষ ও কনেপক্ষ উভয়েই ধান-দূর্বা দিয়ে আর্শীবাদ করে নবদম্পত্তিকে। এরপর অনেকেই তাদেরকে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করে।

এলাকার লোকজন জানান, যে বছর অনাবৃষ্টি, প্রচন্ড খরার ফলে চারা রোপন করতে পারে না কৃষকরা। পাশাপাশি পানির জন্য হাহাকার হয়ে পড়ে সেই বছরই তারা এই ধরনের বিয়ের আয়োজন করে থাকেন। স্থানীয়ভাবে এটিকে ব্যাঙ্গা-ব্যাঙ্গির বিয়ে বলে থাকেন তারা। তবে কত বছর ধরে এই ধরনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলে আসছে সে বিষয়ে জানাতে পারেনি কেউ। তবে তাদের মতে, একশ’ বছরের আগে থেকেই ওই এলাকার মানুষ এই ধরনের বিয়ের কার্যক্রম চলে আসছে বলে জানেন।

এলাকার মধ্যবয়সী বিপ্লব চন্দ্র রায় ও খোগেন চন্দ্র রায় জানান, তাদের বাপ-দাদাতের মুখে তারা শুনেছেন বৃষ্টি না হলে ব্যাঙের বিয়ে দিতে হয়। এতে করে বৃষ্টি হয়। তাদের জানামতে, অনাবৃষ্টির কবল থেকে মুক্তি পেতে যে বছরই ব্যাঙের বিয়ে দিয়েছেন বিয়ের পরে কিংবা ওই দিন রাতেই মুশলধারে বৃষ্টি হয়েছে।

এলাকার ৮২ বছর বয়সী তেনিয়া বর্ম্মণ জানান, তার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই এই ধরনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলে আসছে। তার বাবাও তাকে বলতে পারেননি কখন থেকে এই ধরনের কার্যক্রম হয়। তবে বংশ পরম্পরায় এই ধরনের ব্যাঙের বিয়ের কার্যক্রম চলে আসছে। তিনি সঠিকভাবে বলতে না পারলেও বলেন, প্রায় একশ’ বছরের পূর্ব থেকেই এই কার্যক্রম তাদের।

একদিকে যখন বিয়ের অনুষ্ঠান তখন অন্যদিকে চলছে বাড়ির উঠোনে মানুষ দিয়ে হাল চাষ ও তারপর সেখানে চারা রোপনের কাজ। যারা এই কাজ করছিলেন তারা জানান, এটি এক ধরনের প্রতিবাদ। বৃষ্টি না হওয়ার ফলে বাড়ির উঠোনে ধানের চারা রোপন করে এই ধরনের প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।


আরও ছবি দেখতে ক্লিক করুন।



(এটি/পি/অাগস্ট ০৮, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test