E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

বাগেরহাটে এক ছাত্রীকে নষ্টা আখ্যা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ

২০১৫ আগস্ট ১৩ ২২:৩১:১৬
বাগেরহাটে এক ছাত্রীকে নষ্টা আখ্যা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ

বাগেরহাট প্রতিনিধি:বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বাধাল আদর্শ মাদ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে এবার ‘নষ্টা’ আখ্যা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম হারুনের নির্দেশে প্রধান শিক্ষক উপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস গত ২৫জুলাই (মুক্তি আক্তার (১৫) নামের) ওই শিক্ষার্থীকে নষ্টা আখ্যা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে।

স্কুল থেকে নষ্টা আখ্যা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া ছাত্রীটির পরিবারের অভিযোগ, বাধাল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগে ৯ম শ্রেণির ওই ছাত্রী বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিতেন। প্রতিবেশি হওয়ায় দেখা হলে বিভিন্ন ইশারা-ইঙ্গিতে ওই শিক্ষক তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। নানা রমক অপ্রত্যাসিত কথাবার্তাও বলতেন। শিক্ষকের এমন আচরণে অতিষ্ট হয়ে এক পর্যায়ে পরিবারের সিদ্ধান্তে ওই ছাত্রী নিজে বাদি হয়ে গত ১জুলাই শিক্ষক আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে শরণখোলা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় ওই শিক্ষক বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেন। উত্ত্যক্তকারী ওই শিক্ষক আলমগীর হলেন বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কামরুল ইসলাম হারুনের আপন ভাগ্নে। একারণে সভাপতি ক্ষীপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক উপেন্দ্র নাথ বিশ্বাসকে ওই ছাত্রীকে নষ্টা আখ্যা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিতে নির্দেশ দেন। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের ক্ষমতাধর সভাপতির নির্দেশ পেয়ে তা দ্রুত কার্যকর করেন প্রধান শিক্ষক। ফলে ২০দিন ধরে স্কুলে যেতে না পারায় দরিদ্র পরিবারের ওই মেয়েটির লেখাপড়া এখন বন্ধ হতে বসেছে। শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তার কথা ভেবে পরিবারও রয়েছে চরম উৎকন্ঠায়। ভুক্তখোগী শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৫ জুলাই স্কুলে গেলে সভাপতি ওই শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ করে বলেন, তুই একটা নষ্ট মেয়ে। তুই স্কুলে এলে সব ছেলেমেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। পরে তার নির্দেশে ওই দিন প্রধান শিক্ষক তাকে স্কুল আসতে নিষেধ করে দেয়।

ছাত্রীটির বড় ভাই মাহাফুজ অভিযোগ করেন, লম্পট শিক্ষক আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা করায় বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক তার বোনকে দুঃশ্চরিত্রা আখ্যা দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়েছেন। তার বোনের জীবনটা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছেন তারা। দরিদ্র হওয়ায় তারা এবিষয়ে কোথাও প্রতিকার পাচ্ছেননা বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ছাত্রীটির বাবা মো. হারুন খান জানান, আসামী পক্ষ এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তারা মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করছে। আদালতে সাক্ষ্য না দেয়ার জন্য মামলার স্বাক্ষীদেরকেও বিভিন্ন হুমকিও দিচ্ছে তারা। এখন তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম আতঙ্কে আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি দরিদ্র হওয়ায় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কেউ কতা বলছেনা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার পর স্থানীয় ভাবে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তাই তই ওই ছাত্রীকে কিছুদিনের জন্য বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। কোন শিক্ষার্থীকে তিনি স্কুলে আসতে বাঁধা দিতে পারেন কি না ? প্রশ্ন কারা হলে জানান, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম হারুনের নির্দেশে তিনি পালন করেছেন মাত্র। এচাড়া তার কোন উপায় ছিলো না।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম হারুন বলেন, ‘নষ্টা’ ওই ছাত্রীটি স্কুলে গেলে তার সহপাঠীরা ক্লাস বর্জন করে সবাই বেরিয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রধান শিক্ষক এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। কেন ওই ছাত্রীকে নষ্টা বলছেন ? এমন প্রশ্নের কোর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

শিক্ষক আলমগীরের বিরুদ্ধে ছাত্রীটির দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শরণখোলা থানার এসআই মো. শফিউদ্দিন বলেন, ছাত্রীটিকে নষ্টা আখ্যা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। শিক্ষক আলমগীরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত চলছে। ##

বাগেরহাট

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test