E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

জাজিরা পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে লেজে-গোবরে আওয়ামীলীগ

২০১৫ ডিসেম্বর ২৪ ১৫:৫৮:৩৯
জাজিরা পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে লেজে-গোবরে আওয়ামীলীগ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি :পাঁচ জন বিদ্রোহী প্রর্থীকে নিয়ে লেজে-গোবরে হয়ে গেছে জাজিরা আওয়ামীলীগ। নেতারা হিমশিম খাচ্ছে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে। আর ভোটাররা দলীয় প্রতীকের বাইরে গিয়ে তাদের কাছে অধিক পছন্দের বিদ্রোহী প্রাথীকে নিয়ে মাঠে নেমে পরেছে। দলের ৫ বিদ্রোহীকে বহিস্কার করেও বিজয়ের ব্যাপারে শংকামুক্ত হতে পারেনি আ‘লীগ। বিএনপির দলীয় শক্ত অবস্থান না থাকায় সরকার দলের ৫ বিদ্রোহীর মধ্যে তিন আওয়ামীলীগের মধ্যেই লড়াই হবার সম্ভাবনা দেখছেন এলাকাবাসী।

আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাটি বলে পরিচিতি রয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তৃতীয় বারের মত নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবছর। নতুন পৌরসভা হিসেবে এলাকার উন্নয়ন যতটা হবার কথা ছিল তেমনটি হয়নি। তার পরেও, পৌর মেয়র- লোভনীয় এই পদটির জন্য নির্বাচন এলেই দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য মাঠে নামেন অনেক আ‘লীগ নেতা-কর্মী। অতপর যোগ্যতা বিবেচনায় না এনে দলীয় টিকেট মিলে দলের জ্যাষ্ঠ্য নেতা ও স্থানীয় সাংসদের মর্জির উপর। এবছরও ঘটেনি তার ব্যত্যয়। দলের বেশীরভাগ মানুষের কাছে অগ্রহনযোগ্য এমন একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামীলীগ। তাকে নিয়ে সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝেও ক্ষোভের অন্ত নেই। দলীয় প্রতীকের দরদে কেউ কেউ আবার অযোগ্য প্রার্থীকেও ভোট দিতে প্রস্তুত রয়েছেন।

সাড়ে ১৪ হাজার ভোটারের এই পৌরসভায় ৮ জন মেয়র প্রার্থী, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন ৩০ জন আর সংরক্ষিত ৩টি মহিলা ওয়ার্ডের বিপরীতে রয়েছেন ৮ জন নারী প্রার্থী। সবাই ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্তকে অমান্য করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করায় বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের ফকির, সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম আক্কাস, সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন তালুকদার, উপজেলা আ‘লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলাউদ্দিন ফকির ও আ‘লীগ কর্মী আনিসুর রহমান মাদবরকে গত ১৮ ডিসেম্বর দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। দলীয় এমন সিদ্ধান্তের কারনে এসকল প্রার্থীদের জেদ চেপে বসায় তারা আরো তোড় জোরের সাথে নির্বাচন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে শাসক দলের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত ইউনুস বেপারীর নৌকা প্রতীকের সাথে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের ফকিরের চামচ প্রতীক ও জগ প্রতীকের রফিকুল ইসলাম আক্কাস মুন্সির ত্রিমুখি লড়াই হবে। তবে কে শেষ পর্যন্ত জয়ের মালা ছিনিয়ে নেবে তা বলা যাচ্ছে না।

লেখা পড়া না জানর কারনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে পছন্দ হয়নি অনেকেরই। এমনকি আওয়ামীলীগ পরিবারের সদস্যরাও তাকে ভোট না দিতে বদ্ধপরিকর। জাজিরা পৌরসভার তালুকদারকান্দি গ্রামের নতুন ভোটার জাজিরা ডিগ্রী কলেজের সম্মান শ্রেনীর শিক্ষার্থী আওয়ামী পরিবারের সন্তান রুণা আকতার বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। অথচ তিনি পৌরসভার মত একটি গুরুত্বপূর্ন নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন একজন নিরক্ষর লোককে। লেখা পড়া না জানা মানুষ মেয়র হলে কিভাবে দেশ ডিজিটাল হবে। একই এলাকার ভোটার আওয়ামীলীগ কর্মী মজিবুর রহমানও দলীয় প্রার্থীকে পছন্দ না হওয়ায় কোন একজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে ভোট দেয়ার কথা জানিয়েছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল ইসলাম আক্কাস বলেন, আমি বিগত নির্বাচনেও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দি হয়েছিলাম। স্থানীয় সাংসদের অনুরোধে সে বছর আমি বিরত থেকেছি। আমাকে এবছর মনোনয়ন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাংসদ একজন অশিক্ষিত লোককে মনোনয়ন দেয়ায় দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী আমাকে নির্বাচন করার অনুমতি দেয়ায় আমি নির্বাচন করছি। জনগন এবার অবশ্যই আমাতে জগ প্রতীকে নির্বাচত করবে। ইতিমধ্যে আমাকে নানা ভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভোট কেটে নিয়ে যাওয়া হবে বলে প্রচার করে বেড়ানো হচ্ছে। আমি সরকারের কাছে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী জানাচ্ছি।

বর্তমান মেয়র ও বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল খায়ের ফকির বলেছেন, একজন অযোগ্য লোককে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গত নির্বাচনে তিনি আমার সাথে সহা¯্রাধিক ভোটের ব্যবধানের পরাজিত হয়েছিল। এবছরও আশা করি এলাকার সচেতন ভোটারেরা কোন অশিক্ষিত লোককে ভোট দিবে না। আবুল খায়ের আরো বলেন, ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে অনেকগুলো কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ন। আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সমর্থকেরা ভোট কেটে নিয়ে যাওয়ার আস্ফালন করছে। আমি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভুমিকা রাখতে অনুরোধ জানাবো।

বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শিকদার ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমাকে বিচ্ছিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমার যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে জাজিরা পৌরবাসী আমাকে নির্বাচিত করবে।

আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মো. ইউনুস বেপারী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার হতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছেন। আমি তার দেয়া এই সম্মান রক্ষা করবো। জাজিরার মানুষ নৌকার বিরুদ্ধে কখনোই রায় দেয়নি। তাই আমিও বিজয়ের জন্য কোন সন্দেহ করিনা।

জাজিরা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন বলেন, জাজিরা পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রই আমার মতে ঝুঁকিপূর্ন। তার পরেও প্রশাসনের সহায়তায় আমরা সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. আব্দুল কাদের বলেন, আমরা সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহন করছি। এ পর্যন্ত কোন অঘটন ঘটেনি। আশা করি ৩০ তারিখেও একটি সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবো।


(কেএনআই/এস/ডিসেম্বর২৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৫ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test